পাঁচ জেলায় বজ্রপাতে নিহত ৯

বজ্রপাতে ময়মনসিংহ, চুয়াডাঙ্গা, নারায়ণগঞ্জ, গোপালগঞ্জ ও নড়াইল জেলায় দুই স্কুল ছাত্রসহ মোট ৯ জন নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন আরও ২ জন।

জেলা প্রতিনিধদের পাঠানো তথ্যমতে, মঙ্গলবার ৯ মে দুপুরে ময়মনসিংহ শহরের জিলা স্কুল মাঠে ফুটবল খেলার সময় বজ্রপাতে নিহত হয় মাহমুদুল হাসান তামিম নামে ওই স্কুলেরই নবম শ্রেণীর এক ছাত্র। সে স্কুলটির দিবা শাখার (সি গ্রুপ) ছাত্র ছিল। তার বাড়ি শহরের জামতলা এলাকায়। স্কুল বন্ধ থাকায় স্কুল মাঠে খেলতে আসে মাহমুদুল হাসান তামিমসহ সহপাঠী আরও কয়েকজন বন্ধু। দুপুরে হালকা বৃষ্টির মধ্যে খেলার সময় আকস্মিক বজ্রপাতে তামিমের বুক ফেটে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে, সকালে জেলার ধোবাউড়া উপজেলায় বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন দুই সহোদর। এসময় আহত হয়েছেন আরও একজন। সকালে পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের রাউতি গ্রামে বজ্রপাতে নিহত হন আ. মালেকের ছেলে এংরাজ মিয়া (৪০) ও আরশাদ মিয়া (৪৫)।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানিয়েছে, সকালে এংরাজ মিয়া, আরশাদ মিয়া ও মকবুল হোসেন বাড়ির পাশে ক্ষেতে ধান কাটতে যায়। এসময় বজ্রপাতে তারা তিনজনই গুরতর আহত হয়। খবর পেয়ে বাড়ির লোকজন তাদেরকে ধোবাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক এংরাজ মিয়া ও আরশাদ মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। আর আহত মকবুল হোসেন ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন নিহতের স্বজনদের সমবেদনা জানাতে তাদের বাড়ি যান এবং আর্থিক অনুদান প্রদান করেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান স্বপন তালুকদার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মজনু মিয়া।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের কুতুবপুর ও কানাইডাঙ্গা গ্রামে দুপুরে বজ্রপাতে স্কুলছাত্রসহ দুজন নিহত হয়েছেন।

কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মনির উদ্দিন বিশ্বাস জানিয়েছেন, বৃষ্টি শুরু হওয়ায় কুতুবপুর গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে সামাদ (২৬) ও তার পরিবারের সদস্যরা বাড়ির উঠানে ধান গোছানোর কাজ করছিল। এসময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন সামাদ।

একই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, কানাইডাঙ্গা গ্রামের দক্ষিণপাড়ার রবিউলের ছেলে ও কারিতাস বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র মালেক(১০) বাড়ির পাশে আমবাগানে আম কুড়াতে যায়। এসময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে নিহত হয় স্কুলছাত্র মালেক।

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বজ্রপাতের পৃথক তিনটি ঘটনায় নারীসহ ২ জন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন।

দুপুরে উপজেলা ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের ছোট মনোহরদী, মাহমুদপুর ইউনিয়নের মরাদাসদী গ্রামে এবং বিশনন্দী ইউনিয়নের বিশনন্দী গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, মাহমুদপুর ইউনিয়নের মরদাসাদী গ্রামের সুবেদা বেগম (৩০) দুপুরে বাড়ির সামনে বসে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ করছিলেন। এসময় হঠাৎ বজ্রপাতে তিনি গুরুতর আহত হন। আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিলে ডাক্তারা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সুবেদা ওই গ্রামের ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী।

একই উপজেলার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের ছোট মনোহরদী গ্রামে পৃথক একটি বজ্রপাতের ঘটনায় নিহত হয়েছেন আফাজ উদ্দিনের ছেলে জামির হোসেন (৪২)।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাড়ির সামনে খালে মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে নিহত হন জামির।

অপর একটি বজ্রপাতের ঘটনায় বিশনন্দী ইউনিয়নের বিশনন্দী গ্রামের ইসহাক মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা (৪০) গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।

গোপালগঞ্জে বজ্রপাতে শামীম খন্দকার (২৭) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার নিজড়া বটবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

বৌলতলী তদন্ত কেন্দ্রের আইসি মো. ফরিদুজ্জামান জানান, বৃষ্টির মধ্যে ওই গ্রামের আক্রাম খন্দকারের ছেলে শামীম খন্দকার নিজেদের জমিতে ধান কাটতে গিয়েছিল। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটলে শামীম গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নড়াইল সদর উপজেলার পাইকমারী গ্রামে বজ্রপাতে জুলফিকার আলী (৪০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (৯ মে) বিকাল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

এলাকাবাসীসূত্রে জানা গেছে, পাইকমারী গ্রামের শফিজ উদ্দিন মোল্যার ছেলে জুলফিকার দুপুরে মাঠে ধানের গোছা বাঁধছিলেন। এসময় বৃষ্টিসহ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

বৃষ্টির পর স্থানীয় লোকজন জুলফিকারকে ধানক্ষেতে পড়ে থাকতে দেখে। পরে তাকে দ্রুত নড়াইল সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আজকের বাজার: আরআর/ ০৯ মে ২০১৭