পাঠ্যবইয়ে পুঁজিবাজার অন্তর্ভুক্তি দরকার

ডাঃ মোঃ জহিরুল ইসলাম
আমাদের পুঁজিবাজার দীর্ঘ সময় এবং পথ পাড়ি দিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছে। এ অবস্থানে আসার পেছনে কিন্তু অনেকেরই অবদান আছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের আড়াইশো ব্রোকারের মধ্যে অনেকেই আছেন যে শুরুতে অনেক কষ্ট করেছেন এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। তার পাশাপাশি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, মার্চেন্ট ব্যাংক, বাজেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো, তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলেই কিন্তু আজকে বাজারে একটা গুড শেপ আমরা কিন্তু দেখতে পাচ্ছি এবং বাজার স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার জায়গাটা অনেকখানি দূর করতে পেরেছি বলে আমার বিশ্বাস। তারপরও আমি যদি স্টক এক্সচেঞ্জ নিয়ে কথা বলি, আপনি দেখেন, আমাদের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জ কিছুদিন আগেও মিউচুয়াল স্টক এক্সচেঞ্জ ছিল অর্থাৎ মালিকানা এবং ব্যবস্থাপনা একই সঙ্গে ছিল। আমরা লাস্ট ২০১৩ সালে এবং তার পরবর্তী সময়ে স্টক এক্সচেঞ্জগুলো ডি-মিউচুয়ালাইজড হয়ে যায়। উন্নত বিশ্বের স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর যে ধারণা, ডি-মিউচুয়ালাইজড স্টক এক্সচেঞ্জ অর্থাৎ মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথক। সদিচ্ছা ছিল বলেই কিন্তু আমরা সেটা করতে পেরেছি। এর ফলে যেটা হয়েছে, স্টক এক্সচেঞ্জগুলোতে ম্যানেজমেন্টে যারা এসেছে, তারা সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং এখানে বোর্ডে যারা আছেন, তারাও সম্পূর্ণ স্বাধীন।

এখানে ব্রোকারদের পক্ষ থেকে কোনও প্রেশার বা অন্য কোনো কিছু নেই এবং এখানে ইন্ডিপেন্ডেন্ট যে ডিরেক্টর তাদের সংখ্যাই বেশি এবং সেটা গভর্মেন্ট নমিনেটেড। যার ফলে স্টক এক্সচেঞ্জে কিন্তু স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে কিন্তু মার্কেটের প্রতি ইনভেস্টরদের আগ্রহ অনেকখানি বাড়ছে, সেটা লোকাল ইনভেস্টর বলুন বা ফরেন ইনভেস্টর বলুন, দুদিক ক্ষেত্রেই। পাশাপাশি আমাদের সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনেও কিন্তু আজকে একটা ভালো পর্যায়ে এসেছে এবং আপনি জানেন যে, আমরা এখন ওঙঝঈঙ ‘র সদস্য এবং আমরা অ ক্যাটাগরির সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। যার ফলে কিন্তু আমরা এ মাসের ২ থেকে ৮ তারিখ পর্যন্ত একটা ইনভেস্টর উইক করলাম, যেটা একই সময়ে বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশ প্রোগ্রামটা করেছে। তো এই বিষয়গুলি থেকে যে জিনিসটা বোঝা যায়, সেটা হলো, এই যে ইনভেস্টর উইকের কথা বললাম, বা এই যে ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসির প্রোগ্রামগুলো আমরা এসইসি, ডিএসই ‘র পক্ষ থেকে করছি, এগুলো কিন্তু আগে হতো না। এখন কিন্তু এই বিষয়গুলো আমরা সচরাচর দেখছি এবং আপনি দেখবেন যে, বিভাগীয় শহরগুলোতে প্রোগ্রাম হচ্ছে, ঢাকাতে বিভিন্ন জায়গায় প্রোগ্রাম হচ্ছে, ইউনিভার্সিটিগুলোতে প্রোগ্রাম হচ্ছে। আমাদের প্ল্যানও আছে এবং আমরা সেটা বলেছি ও যে, আপনার ইয়াং জেনারেশনকে টার্গেট করতে হবে। তাদেরকে যদি আমরা শুরু থেকেই ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসিটা দিতে পারি, আপনি দেখবেন বিভিন্ন দেশে কিন্তু আপনার ক্যাপিটাল মার্কেট সম্পর্কে ছোট একটা অধ্যায় থাকে। আমরা ফিন্যান্স মিনিস্টারকে বলেছি এবং আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও বলেছি যে, পাঠ্যবইয়ে ক্যাপিটাল মার্কেটের ওপর ছোট্ট একটা অংশ থাকা উচিত। এতে ভবিষ্যতে যারা ক্যাপিটাল মার্কেটে আসবে, তারা বুঝতে পারবে যে, ক্যাপিটাল মার্কেটটা কি। আমরা কিন্তু এর মধ্যেই দুইটা ধস দেখতে পেয়েছি, ১৯৯৬ সালে হয়েছিল এবং ২০১০ সালে হয়েছিল। এগুলো ঘটতো না যদি ইনভেস্টরদের প্রপার নলেজ থাকতো, পাশাপাশি আমাদের এখানে স্টেক হোল্ডার যারা আছেন, স্টক এক্সচেঞ্জ, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, অন্যান্য যারা রেগুলেটর আছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক, তারা যদি এই মার্কেটটাতে সবাই সবার রোল যদি সঠিকভাবে পালন করতো, তাহলে কিন্তু এ ঘটনাগুলো ঘটতো না।

তারপরও ঘটে গেছে, কিছুকিছু লুফল ছিল। তবে আমরা কিন্তু অনেকখানি ই সেগুলো সরিয়ে ফেলতে পেরেছি বলা চলে। এবং আপনি দেখেন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কিন্তু ২০১০ সালের পরে নতুন করে হয়েছে এবং বাংলাদেশ সরকারকে আমি সাধুবাদ জানাই, তাঁরা কিন্তু স্ট্রং একটা টিম দিয়েছিলেন, যার ফলশ্রুতিতে একটু সময় নিয়ে হলেও রুলস-রেগুলেশনগুলোতে যে লুফল ছিলো, সেগুল কিন্তু অনেকখানি মেক আপ করতে পেরেছে। স্পেশালি আপনি দেখেন যে, আমাদের আইপিই আসার ক্ষেত্রে। আগে অনেক প্রবলেম ছিল, এখন নতুন দুইটা মেথড এসেছে। একটা হচ্ছে, বুকবিল্ডিং মেথড, আরেকটা হচ্ছে ফিক্সড প্রাইস মেথড। এখানে আগে যে বিষয়টা ছিল, হয়তো স্বচ্ছতার অভাব ছিল, জবাবদিহিতার অভাব ছিল, সেই বিষয়গুল কিন্তু নতুন আইপিই মেথডের মাধ্যমে অনেকখানি কাভার আপ করা গেছে। তারপর মার্জিন রুলস গুলো, মার্জিন লোনের ক্ষেত্রে, আপনি জানেন মার্জিন অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে কিন্তু অনেক প্রবলেম ছিল, অনেক লুফল ছিল। দেখা গেল কোনো কোনো মার্চেন্ট ব্যাংক ১:২ দিয়েছে, কোনো কোনো মার্চেন্ট ব্যাংক ১:৫ দিয়েছে বা তারও বেশি দিয়েছে। কিন্তু এই কমিশন এসে তারা যেটা করেছে, মার্জিন রুলস এবং রেগুলেশনস দ্বারা নতুনভাবে করেছে, এখানে মার্জিনের সীমাও নির্ধারণ করে দিয়েছে যে, কোনো ইনভেস্টর যদি ১ লাখ টাকা ডিপোজিট করে, সে যদি মার্জিন নিতে চায়, সে ৫০ হাজার টাকার বেশি লোন পাবে না। যার ফরে তার ক্ষতি হওয়ার যে আশংকাটা সেটা কিন্তু অনেকখানি কমে যায়। আল্টিমেটলি আমাদের মার্কেট কিন্তু ডেভেলপ হচ্ছে এবং সামনে যে ঘটনাগুলো ঘটতে যাচ্ছে, যেহেতু আমদের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এখন ডি-মিউচুয়ালাইজড, এখন আমাদের কিন্তু একটা শর্ত আছে। এসইসি থেকেই বেঁধে দিয়েছে, আমাদের ফরেন একজন পার্টনার নিতে হবে বা একজন স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার নিতে হবে, সেটা ফরেন হতে পারে, দেশীয় ও হতে পারে। কিন্তু আমরা চাচ্ছি বাইরের কোনো স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার যদি আমাদের স্টক এক্সচেঞ্জের সাথে যুক্ত হয়, লাইক অন্য দেশের কোনো একটা স্টক এক্সচেঞ্জ। সেটা বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ হতে পারে, সিঙ্গাপুর স্টক এক্সচেঞ্জ হতে পারে বা চায়নার সেনজেন আছে, সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ আছে। তারা যদি ইন্টারেস্টেড হয় বা তাদেরকে যদি আমরা নিয়ে আসতে পারি, তাহলে তখন কিন্তু আমাদের এই যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, এর চেহারা কিন্তু আরও আমূল পরিবর্তন হয়ে যাবে। বিদেশীদের কাছে আমাদের ভাবমূর্তি অনেক বেড়ে যাবে এবং ফরেন ইনভেস্টর যারা, তারা কিন্তু আমাদের মার্কেটের প্রতি আরও আগ্রহী হবে। তাই আমরা চাচ্ছি একজন ভালো স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার স্টক এক্সচেঞ্জের সাথে যুক্ত হোক, যার ফলে তারা আমাদেরকে ইনফ্রাস্ট্রাকচার দিয়ে হেল্প করবে, টেকনোলজি দিয়ে হেল্প করবে। তখন আমরা আমাদের মার্কেটকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারবো বা ডাইভার্সিফাই করতে পারবো।

আপনি জানেন যে আমাদের ক্যাপিটাল মাকের্্টে এখন মুষ্ঠিমেয় প্রোডাক্ট আছে, মেইনলি হলো আমাদের সিকিউরিটিজ, ইক্যুইটি বেইজড যেটা বলি আমরা। এখানে ম্যাক্সিমাম ৩০০ ইক্যুইটি বেইজড কোম্পানি আছে। মিউচুয়াল ফান্ড খুবই সামান্য আছে, বন্ড নাই বললেই চলে। অথচ আমরা যদি মার্কেটটা ডেভেলপ করতে চাই, আরও যদি ভালো শেইপে নিতে চাই, তাহলে কিন্তু এখানে আরও অনেক প্রোডাক্ট আপনাকে যুক্ত করতে হবে, নাহলে কিন্তু ইনভেস্টরদের রিস্ক অনেকখানি থেকে যায়। যেমন আমি বলি, আমাদের প্রথমেই যেটা করা উচিত হলো, আপনি দেখেন, আমাদের এখানে স্টক এক্সচেঞ্জে যে সমস্ত কোম্পানিগুলো আছে, বিভিন্ন ক্যাটাগরির কোম্পানি আছে, লাইক স্মল ক্যাপ কোম্পানি, মিড ক্যাপ কোম্পানি এবং লার্জ ক্যাপ কোম্পানি। সবই কিন্তু একই প্ল্যাটফর্মে ট্রেড হচ্ছে। যার ফলে আপনার এখানে কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, অনেক রকম সমস্যা হয়। ছোট কোম্পানি, শেয়ার নিয়ে কারসাজি হয়। অল্প শেয়ার মার্কেটে আছে, দুই একজন বড় বিনিয়োগকারী শেয়ার যখন কেনা শুরু করবে, তখন কিন্তু হু হু করে বেড়ে যায়। এটার যদি আলাদা প্ল্যাটফর্ম থাকতো, স্মল বোর্ড যদি থাকতো, তাহলে কিন্তু সেই মার্কেটে সব ইনভেস্টররা যেতে পারতো না। যারা এডুকেটেড বা যারা ওই স্মল ক্যাপ সম্পর্কে জানবে এবং যারা যোগ্য, তারাই কিন্তু ওই সমস্ত ছোট ছোট কোম্পানির শেয়ার কিনতে পারতো। কিন্তু আমাদের এখানে সেই বিষয়টা না থাকাতে যে যার মতো চেষ্টা করছে, সব ধরণের শেয়ার কেনার জন্য চেষ্টা করছে। যার ফলে এখানে একটা বিশৃংখলা তো ডেফিনেটলি আছে। সেজন্য আমরা যেটা অনেক আগে থেকেই বলছি, এ ব্যাপারে কমিশন এবং স্টক এক্সচেঞ্জগুলোও কাজ করছে। এসএমই বোর্ড অর্থাৎ স্মল মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজের একটা বোর্ড আলাদা হচ্ছে এবং এটা হলে মার্কেটের সৌন্দর্য বাড়বে। পাশাপাশি আমরা বলেছি যে, আমাদের এখানে বন্ডকে আরও শক্তিশালী করা উচিত। আরও বন্ডকে এখানে লিস্টেড করতে হবে, গভর্মেন্টের যে সমস্ত ট্রেজারি বন্ডগুলো আছে, এগুলো কিন্তু আমরা এখনও ট্রেড করতে পারিনি, অথচ ৩০০ ‘র মতো ট্রেজারি লিস্টেড আছে। কিন্তু আমরা এগুলো ট্রেড করতে পারছি না কিছু ঝামেলার জন্য এবং সেই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ হচ্ছে। তো বন্ড মার্কেট যদি আরও শক্তিশালী হয়, পাশাপাশি আমরা বলেছি যে, এক্সচেঞ্জ ট্রেড ফার্ম এ মার্কেটে আনতে হবে। আরও ইসলামি বন্ড আছে, এগুলোকে এখানে যুক্ত করতে হবে।

অনেকেই আছেন সুদের ব্যবসা করতে চায় না, তাদের জন্য তখন এই ইসলামিক বন্ড, তারা ইন্টারেস্টেড হতে পারে। এবং এগুলো করতে হবে, সামনে আসবে। এরপর আমাদের যে আরও একটা মেইন প্রোডাক্ট ডেরিভেরিজ মার্কেট। সেই ডেরিভেরিজ মার্কেটটা আমরা চালু করবো কিন্তু সেই ব্যাপারে আরও কিন্তু আমাদের কাজ করতে হবে, আমাদের গোছাতে হবে। আমাদের যে ইনভেস্টর, তাদেরকে আরও সেই লেভেলে দক্ষ এবং এডুকেশন তাদেরকে দিতে হবে। পাশাপাশি আমাদের আরেকটা যেটা দাবি ছিল, সেটা হলো আমাদের সেন্ট্রাল ক্লিয়ারিং কর্পোরেশন। যেটা না হলে আমরা কিন্তু প্রোডাক্টগুলো আনতে পারছি না। সেই ব্যাপারেও কাজ হচ্ছে, এবং মোটামুটি একটা স্ট্রাকচার বিএসইসি দিয়ে দিয়েছে, এবং ইনশাআল্লাহ অচিরেই হয়তো বা আমরা একটা সেন্ট্রাল ক্লিয়ারিং কর্পোরেশন আমরা পাবো এবং তার মাধ্যমে আমাদের স্টক এক্সচেঞ্জের যে বিউটি বা ডাইভার্সিফিকেশন সেটা সম্পন্ন হবে বলে আমি আশা করি। তো যেটা দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে আপনি দেখেন যে, ব্যাংকগুলোতে ইন্টারেস্ট রেট অনেক কম। হয়তো বা ৬% বা ৭%। যার ফলে দেখা যাচ্ছে অনেক ইনভেস্টররা আগে যারা এফডিআর করে রাখতো বা আগে যারা সঞ্চয়পত্র কিনতো, অনেকেই দেখতে পাচ্ছে যে এখানে ইন্টারেস্ট রেট কম, তার হয়তো রিটার্নটা কম আসছে, এজন্যই কিন্তু মার্কেটে এখন ফান্ড ফ্লো টা বাড়ছে এবং অনেকেই কিন্তু শেয়ারবাজারমুখী হচ্ছে। এটাকে ধরে রাখার জন্য এবং তাদের যাতে কোনো রকম বিপদ না হয়, সেই বিষয়টা দেখার দায়িত্বও কিন্তু স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর আছে এবং আমাদের যারা রেগুলেটরি বডি লাইক বিএসইসি তাদেরও আছে। ইনভেস্টরদের সুরক্ষা আমাদের দিতে হবে। যে ফান্ড আসছে, সেটাকে আমাদের আবার মিনিমাইজ করতে হবে, যাতে সেই ফান্ড আসার ফলে কোনো বাবল যেন না হয়। সেজন্য আমরাও পরামর্শ দিচ্ছি, সেটা হলো যে বিভিন্ন ফোরামেও বলছি আমরা যে, এখন ভালো মানের যত বেশি আইপিও পারা যায়, সেই সাপ্লাই সাইডটাকে ঠিক করতে হবে। ডিমান্ড যখন থাকে, আপনি যদি সাপ্লাই সাইডটাকে বজায় না রাখেন, তখনই কিন্তু একটা বাবল হও্যার চান্স থাকে। এখন উচিত হলো, মার্কেটটাকে ধরে রাখার জন্য, মার্কেটটাকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য নতুন ভালো ভালো কোম্পানিকে আমাদের এখানে লিস্টেড করাতে হবে এবং এ ব্যাপারে স্টক এক্সচেঞ্জগূলোর ইস্যু ম্যানেজার এবং সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন সবাই যদি সম্মিলিতভাবে কাজ করে তাহলে আমার মনে হয় যে এ বাজার অনেক বড় হবে এবং আমরা অনেক সুন্দর একটা ক্যাপিটাল মার্কেট উপহার দিতে পারবো।

মিউচুয়াল ফান্ড
মিউচুয়াল ফান্ড একটা গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটের জন্য, স্পেশালি নতুন ইনভেস্টর যারা। যাদের ক্যাপিটাল মার্কেট সম্পর্কে ধারনা কম, ওইভাবে যারা জানে না, অন্যান্য দেশে দেখা যায় যে, তারা কিন্তু রিস্কে যেতে চায় না। তারা সেক্ষেত্রে ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে বেছে নেয় মিউচুয়াল ফান্ডকে। কারণ তারা জানে যে, মিউচুয়াল ফান্ড বছর শেষে তাদেরকে একতা লভ্যাংশ প্রদান করবে।দক্ষ ফান্ড ম্যানেজার দ্বারা কিন্তু মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালিত হয়। আমাদের দেশে যেটা হয়েছিল, ২০১০ সালে বা তার পরবর্তী সময়ে বাবল হওয়ার ফলে অনেক ফান্ড ম্যানেজার তারা বিভিন্ন কারণে বিতর্কিত হয়ে পড়ে অনেক ক্ষেত্রে এবং তাদের ফান্ডগুলো কিন্তু বেসিক্যালি ভালো একটা কাজ করতে পারেনি। সেভাবে তারা কিন্তু তাদের ইনভেস্টমেন্টও ঠিক সাজাতে পারেনি এবং মার্কেট ক্র্যাশ হওয়ার ফলে তাদের ফান্ডগুলোর ভ্যালু কমে যায়। যার ফলে অনেক ইনভেস্টর কিন্তু মিউচুয়াল ফান্ড থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় বলা চলে। আস্তে আস্তে হয়তো এ সেক্টরটা ডেভেলপ করবে এবং এ বিষয়ে মূল কথা হলো যে, এখানে গভর্মেন্টেরও সদিচ্ছা থাকতে হবে এবং আরও বেশি ফান্ড কিভাবে আনা যায় সে ব্যাপারে কাজ করতে হবে। মূল কথা হলো যে, এখানে মূল ভূমিকা আসলে ফান্ড ম্যানেজারের। একজন দক্ষ ফান্ড ম্যানেজার যদি ভালভাবে একটা ফান্ড পরিচালনা করেন, এবং সে যদি বছর শেষে ইনভেস্টরদের ভালো একটা লভ্যাংশ দিতে পারে, তখন কিন্তু ইনভেস্টররা ওই ফান্ডের প্রতি আগ্রহী হবে। ইন্ডিয়াতে কিন্তু সেটাই হচ্ছে। ওদের যে মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন, তার প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ হলো মিউচুয়াল ফান্ডের দখলে। আর আমাদের দেশে যে সমগ্র মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন, তার মাত্র ১ থেকে ২ শতাংশ হলো মিউচুয়াল ফান্ড। কতটা পার্থক্য চিন্তা করে দেখুন। এই জায়গাটায় কিন্তু ডেভেলপ করার অনেক স্কোপ আছে। আর সেজন্য আমাদের কিন্তু দক্ষ লোকবলও লাগবে। ফান্ড ম্যানেজার যদি দক্ষ না হয়, সে যদি দক্ষভাবে ফান্ড পরিচালনা করতে না পারে তাহলে তো আল্টিমেটলি মিউচুয়াল ফান্ড জনপ্রিয় হবে না। মিউচুয়াল ফান্ড তখনই জনপ্রিয় হবে যখন তা দক্ষ ফান্ড ম্যানেজার দ্বারা পরিচালিত হবে। সে ফান্ড যখন ভালো করবে, সেটা যখন ইনভেস্টররা দেখবে যে, ফান্ড ভালো হচ্ছে এবং এখান থেকে আমি ভালো লভ্যাংশ পাচ্ছি, ব্যাংকে রাখলে হয়তো ৫% পেতাম, মিউচুয়াল ফান্ডে এখন ১৫% পাচ্ছি, ডেফিনেটনি তখন লোকজন মিউচুয়াল ফান্ডে ইনভেস্ট করবে। আমাদের কিন্তু ডেফিনেটলি দক্ষ ফান্ড ম্যানেজারের ঘাটতি আছে এবং সেই দক্ষতার জায়গাগুলো, যেখানে ঘাটতি আছে, সেগুলো কিন্তু আমাদের ঠিক করতে হবে।

বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ
বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ থেকে একটা মেসেজ তো এসেছে ডেফিনেটলি। সেটা হলো যে, এই ইনভেস্টর উইকটা আসলে রিটেইল ইনভেস্টর বা সাধারণ যারা বিনিয়োগকারী, তাদের জন্যই ছিল। তাদেরকে একটা বার্তা দেওয়া যে, এই ক্যাপিটাল মার্কেটটা অন্যান্য মার্কেটের মতো নয়। এটা একটা স্পেশালাইজড এরিয়া। এখানে আসলে শেয়ার কিনে ফেলা খুব সোজা, কিন্তু এখান থেকে যে আপনি প্রফিট করবেন, সেটা কিন্তু এতটা সোজা নয়। তাই এখানে একটা কথাই আমরা বলতে চেয়েছি যে, ক্যাপিটাল মার্কেটে ইনভেস্ট করতে হলে আপনাকে আগে জানতে হবে এবং বুঝতে হবে। শেয়ার ব্যবসা করতে হবে জেনে-বুঝে। আপনি যখন মার্কেটে ইনভেস্ট করবেন, আপনাকে ভাবতে হবে যে, এই রিস্কটা পুরোপুরি আপনার। আপনি যদি ১ লাখ টাকা ইনভেস্ট করেন, সেই টাকাটা আপনারই টাকা, লস হলে আপনারই হবে। এ টাকা অন্যভাবে অন্য কেউ পূরণ করে দেবে না। যদি লাভ হয়, সে লাভটা যেমন আপনি কাউকে দেবেন না, লস হলেও কিন্তু সেটা সরকার, অন্য কেউ বা কোনও রেগুলেটরি বডি বাধ্য নয়, হাউস বাধ্য নয় যে আপনার লসটা কাভার আপ করে দেবে। লস হলে লসটা আপনার, লাভ হলেও লাভটা আপনার। সুতরাং শেয়ার মার্কেট একটা স্পেশালাইজড এরিয়া, এখানে ইনভেস্ট করতে হলে আপনাকে আগে দুইবার চিন্তা করতে হবে যে, আমি এ মার্কেট জানি কিনা? আমি এ মার্কেট বুঝি কিনা? আমি যখন কোনও একটা স্টকে বা সিকিউরিটিজে ইনভেস্ট করবো, তখন সেই সিকিউরিটিজ বা সেই কোম্পানি সম্পর্কে ভালো ধারনা নিতে হবে। এই কোম্পানিটা কতদিন ধরে লিস্টেড আছে এবং তাদের ৫ বছরের ব্যাকগ্রাউন্ড কি? এই কোম্পানির ম্যানেজমেন্টে কারা আছে এবং এই কোম্পানির যারা মালিক, তারা কেমন? এখন ইন্টারনেটের যুগ, এগুলো জানা খুব বেশি কঠিন নয়। তার পাশাপাশি কতগুলো ফিন্যান্সিয়াল ফর্মুলা আছে বা ইন্ডিকেটর আছে, যেগুলো সম্পর্কেও ইনভেস্টরদের ধারণা থাকা চাই। এই ছোটো-খাটো বিষয়গুলো জানা খুব কঠিন নয়, মূল কথা হলো সময় দিতে হবে। সময় নিয়ে জেনে-বুঝে মার্কেটে ইনভেস্ট করতে হবে, এটাই ছিল আমাদের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহে আমরা এই কথাগুলোই বলেছি।

ডাঃ মোঃ জহিরুল ইসলাম
চেয়ারম্যান, প্রাইলিংক সিকিউরিটিজ লিঃ