পাহড়ে বৈসাবীর আমেজ

পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ১৪টি ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় উৎসব বৈসাবী উপলক্ষে রাঙ্গামাটির পাহাড়ে পাহাড়ে বইছে উৎসবের আমেজ।

১২ এপ্রিল থেকে বৈসাবীর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও তার আগে থেকেই পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা। বৈসাবী উপলক্ষে রাঙ্গামাটির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ইনস্টিটিউটে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে আজ থেকে শুরু হচ্ছে ৫দিনব্যাপী বৈসাবী মেলা।

আজ সোমবার ৩ এপ্রিল থেকে আগামী ৭ এপ্রিল ৫দিন ব্যাপী পর্যন্ত চলবে এ বৈসাবী মেলা। এর মধ্য দিয়েই রাঙ্গামাটিতে শুরু হচ্ছে বৈসাবীর আমেজ। মেলা উপলক্ষে রাঙ্গামাটির বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকাগুলোতে শুরু হয়েছে আনন্দ। মেলায় অংশ নিতে হাজারো পাহাড়ী নারী-পুরুষ যোগ দিবে আজকের বর্ণাঢ্য আয়োজনে।

সোমবার বিকেল ৪ টায় রাঙ্গামাটি ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ইনস্টিটিউট মাঠে ৫দিন ব্যাপী বৈসাবী মেলার উদ্বোধন করবেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই-প্রু-চৌধুরী, রাঙ্গামাটি ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিঃ জেঃ মোহাম্মদ ইমতাজ উদ্দিন, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদসহ প্রশাসনের উধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ সদস্য ও ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বৈসাবী মেলা উদযাপন কমিটির আহবায়ক রেমলিয়না পাংখোয়া।

রেমলিয়ানা পাংখোয়া বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে জানান, পাহাড়ে বৈসাবী উৎসবের বর্ণিল আয়োজনের অংশ হিসেবে আজ ৩ এপ্রিল বিকেল ৩টায় রাঙ্গামাটি সরকারী কলেজ থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাসহ রাঙ্গামাটি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনিষ্টিটিউটে বিকেলে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু মেলার উদ্বোধন, আলোচনা সভাসহ শুরু হচ্ছে ৫ দিনের সংস্কৃতি মেলা। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও ৫দিন ব্যাপী সাংস্কৃতিক মেলার মধ্য দিয়ে রাঙ্গামাটিতে বিজু সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু তথা বৈসাবী উৎসবের সূচনা হবে। এছাড়া আজ অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয়েছে শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিল্পীদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য ও সংগীত পরিবেশ।

রেমলিয়ানা পাংখোয়া বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে আরো জানান, ৩-৬ এপ্রিল পাহাড়ীদের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী ঘিলা খেলা, মহিলাদের হাড়িভাঙ্গা, শিশুদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সাংগ্রাই বৈসুক, বিষু, বিহুর উপর বিশিষ্টজনদের স্মৃতিচারণ,তঞ্চঙ্গ্যা নাটক মঞ্চায়ন, ক্ষুদ্র নৃ তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর শিল্পীদের ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত ও নৃত্য এবং রাঙ্গামাটির বিশিষ্ট শিল্পীদের সঙ্গীত পরিবেশন।

৭ এপ্রিল সমাপণীতে মেলায় থাকছে পাহাড়ীদের ঐতিহ্যবাহী পাজন রান্না প্রতিযোগিতা, সন্ধ্যায়বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহুর উপর বিশিষ্টজনদের স্মৃতিচারণ, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানসহ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আলোকচিত্র প্রদর্শিত হবে।

উল্লেখ্য, পাহাড়ে বৈসাবী উৎসবের প্রথম দিন শুরু হয় ১২ এপ্রিল। এদিন পাহাড়ে চাকমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীরা পালন করে ফুল বিজু বৈসু কিংবা বিষু। এদিন তারা বন থেকে ফুল আর নিম পাতা সংগ্রহ করে ফুল দিয়ে ঘর সাজানোর পাশাপাশি গঙ্গাদেবীর উদ্দেশ্যে কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা করেন। ১৩ এপ্রিল দ্বিতীয় দিন চৈত্র সংক্রান্তির দিনকে বলা হয় মুল বিজু বৈসু বা বিষুু। এদিন তারা ঘরে ঘরে ঐতিহ্যবাহী পাচনসহ অন্যান্য খাবার রান্না করেন। আর ১৪ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলে মারমাদের জল কেলী উৎসব। মারমাদের পানি উৎসবের মধ্য দিয়েই পাহাড়ে বৈসাবী উৎসবের সমাপ্তি ঘটে। বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়েই পাহাড়ের গ্রামে গ্রামে এবার উদযাপিত হবে বৈসাবী উৎসব এমনটাই প্রত্যাশা সকলের। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান