পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির ৫ বছরে ৬ কোম্পানি ‘জেড’ ক্যাটগরিতে

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পরপরই তুলনামূলকভাবে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে অনেক কোম্পানির আর্থিক অবস্থা। শেয়ারহোল্ডারদের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে তালিকাভুক্ত কিছু কোম্পানি। তাই শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে না পেরে বাধ্য  হয়েই এসব প্রতিষ্ঠানগুলো ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে চলে যায়। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বিনিয়োগকারীরা। কোন কোম্পানি আবার মান বাঁচাতে নামমাত্র লভ্যাংশ দিয়ে ক্যাটেগরি টিকিয়ে রাখছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে (২০১৩-২০১৭ সাল) তালিকাভুক্ত হওয়ার পর ছয়টি কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি । বাজারে আসতে না আসতেই কোম্পানিগুলো জেড ক্যাটেগরিতে চলে যেতে বাধ্য হয়।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৩ সাল  থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মিউচুয়াল ফান্ড ছাড়াও বিভিন্ন খাতের মোট ৫১টি প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে ২০১৪ সালে। বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ সময় মোট ১৭টি কোম্পানির অনুমোদন দেয়। ২০১৫ সালে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে আইপিও’র  অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ।

একইভাবে ২০১৩ সালে মোট অনুমোদন পায় ১৫টি কোম্পানির আইপিও। অন্যদিকে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে বিএসইসি ১২ টি নতুন কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসার অনুমোদন দেয়।

এক পরিসংখানে দেখা যায়, বিগত ৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্বল কোম্পানি এসেছে ২০১৪ সালে। এই সময় পুঁজিবাজারে আসা ১৭ কোম্পানির মধ্যে ৪ টি  কোম্পানি  জেড ক্যাটেগরিতে চলে যায়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি সূহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, তুংহাই নিটিং, খুলনা প্রিন্টিং ও এমারাল্ড ওয়েল। আর ২০১৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া  বিমা খাতের সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স জেড ক্যাটেগরিতে চলে যায়।

এছাড়াও ২০১৫ সালে অনুমোদন পাওয়া সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল লভ্যাংশ না দিতে পারায় জেড ক্যাটেগরিতেই অবস্থান হয় কোম্পানিটির । তবে ২০১৬ ও ২০১৭ সালের কোনো কোম্পানি এখন পর্যন্ত জেড ক্যাটেগরিতে যায়নি।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে তালিকাভুক্ত ১২টি কোম্পানি মাত্র এক বছরের লভ্যাংশ দিতে সক্ষম হয়েছে । আরও সময় গড়ালেই হয়তো এসব কোম্পানির আসল চিত্র জানা যাবে।

বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বিনিয়োগকারিরা বলেন, দুর্বল কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির কারণেই এমন অবস্থা হয়েছে। তাদের অভিমত, কোনো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসার আগে তার আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে ভালো করে জেনে তারপরই তালিকাভুক্তির অনুমোদন দেওয়া উচিত কমিশনের । অনেকেই পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করার দাবি জানান ।

এ প্রসঙ্গে  বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম  আজকের বাজারকে  বলেন,  কোম্পানিগুলো যখন বাজারে আসতে চায় তখন ইস্যু ম্যানেজার থেকে শুরু করে অডিটরসহ সংশ্লিষ্ট সবাই কোম্পানির আর্থিক অবস্থার একটি সুন্দর বিবরণ উপস্থান করে যা অনেক ক্ষেত্রেই কৃত্রিম মনে হয় যদিও বলা কঠিন । বিএসইসির উচিত, এটা ভালো করে যাচাই-বাছাই করে নেওয়া ।ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের উচিত বিষয়টা খুজে বের করা, আসলেই কি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর কোম্পানিগুলোর ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্ট সঠিকভাবে উপস্থাপন করে কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত ।

অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ আজকের বাজারকে বলেন, কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ার জন্য দায়ী মূলত প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা। তারা বাজারে আসার কিছুদিন পরই শেয়ার বিক্রি করে দেয়। যে কারণে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা দুর্বল হতে থাকে। বিএসইসির উচিত কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার পর কোনো উদ্যোক্তা পরিচালক যাতে  শেয়ার বিক্রি করতে না পারে এমন নিয়ম করে দেওয়া।

ডিএসইর সর্বশেষ তথ্যমতে, বর্তমানে সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইলের শেয়ারে সর্বোচ্চ আট টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে। তুংহাই নিটিংয়ের শেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৯ টাকার মধ্যে। এছাড়া খুলনা প্রিন্টিংয়ের শেয়ার বিক্রি হচ্ছে ১১ টাকা থেকে ১১ টাকা ৮০ পয়সার মধ্যে। এছাড়া এমারাল্ড অয়েলের শেয়ার ১৫ থেকে ১৬ টাকার মধ্যে লেনদেন হচ্ছে।

অন্য দুই কোম্পানির মধ্যে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ২৩ টাকা ১০ পয়সা এবং সূহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার ১৯ টাকা থেকে ১৯ টাকা ৬০ পয়সার মধ্যে লেনদেন হচ্ছে।

এদিকে বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হলে বিএসইসির দায়িত্বশীল কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জাকির/আরএম/