পুঁজিবাজারে নিয়ন্ত্রণ আগের চেয়ে ভালো

শেয়ারবাজার

শামসুল হুদা
সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন যথাযথভাবে আইপিওর জোগান বাড়িয়ে শেয়ারবাজারের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করছে। কিছু কিছু জায়গায় যে অনিয়ম হচ্ছে না তা নয়, বাজারে প্রাইজ লিকিং হচ্ছে। সেগুলো কর্তৃপক্ষ যোগ্যভাবেই নিয়ন্ত্রণ করছে। এর জন্যই শেয়ারের দাম খুব বেশি বাড়তে পারছে না। হঠাৎ করে কোনো শেয়ারের মূল্য বেড়ে গেলে, আইপিওর ব্লক বাড়িয়ে রেখে ফান্ডের জোগান নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন তারা। এজন্যই বলবো, পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রণ আগের চেয়ে অনেক ভালো। চাইলেই কিছু বলতে পারবেন না,সিস্টেমের মধ্যে দিয়েই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এখন এই সিস্টেমের মাধ্যমেই কিন্তু সবকিছু নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। এটা অবশ্যই সাধুবাদ পাবার যোগ্য।
সূচকের ওপর সবসময় বাজার নির্ভর করে না। সূচক বাড়া মানে যে, ২০১০ সালে ফিরে যাওয়া তা কিন্ত না। সেটা তখনই হতো যদি শেয়ারের মূল্য লাগামহীনভাবে বেড়ে যেতো। কিন্ত এখন তো তা হচ্ছে না। ইনস্ট্রুমেন্ট সাপ্লাই দিয়ে এটাকে যথেস্ট নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে। আবার যখন নতুন ইনস্ট্রুমেন্ট  আসছে, এর যে ইয়ারলি টাইম তা যদি তারা একেবারেই ছেড়ে দেয়, তাহলে বাজারে ফান্ড বেড়ে যাবে। সেক্ষেত্রে যখন ফান্ডগুলো দক্ষতার সঙ্গে ধরে রাখছে তখনই আর বাড়ছে না। মূল কথা মার্কেট আর আগের মতো অবস্থায় যাওয়ার পরিস্থিতি এখন আর নেই।


বর্তমান মার্কেটের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, বাজারের ফান্ড ফ্লো ঠিক করা। আমাদের পুঁজিবাজার হলো ইক্যুইটি বেইজড মার্কেট। এর জন্য আমাদের বিভিন্ন অপশন নিয়ে আসতে হবে।  প্রোডাক্টের সঙ্গে বন্ড নিয়ে আসতে হবে। আমরা ওই সমন্ত জায়গায় প্লে করছি। বিভিন্ন  বাজারে বিভিন্ন ফান্ড অনুমোদন করেছি। যেমন পেনশন ফান্ড, গ্র্যাচুইটি ফান্ড, এসব ফান্ড যেহেতু অনুমোদন করা হয়েছে তারা কোনোরকম ঝুঁকিতে যেতে চাইবে না। তাদের জন্য বন্ডটাই দরকারি। আমরা যখন ব্যাংকিং সেক্টরের কথা চিন্তা করছি, তখন আমরা চাইছি, সুদের হার কমিয়ে দিতে। কিছু মানুষ আছে যারা দীর্ঘদিন ধরে রিটেইল হিসেবে ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত আছেন। যেহেতু আমাদের রিটেইল ব্যাংক বেনিফিট সেভাবে ডেভেলপ করেনি। যদিও ইউরোপ আমেরিকায় ইনক্রিজের মাধ্যমে ডেভেলপ করে। আমাদের এখানে সেটা করেনি। হয়তো ভবিষ্যতে করবে। এসব জায়গায় আমাদের সমস্যা রয়েছে। এই যে ফান্ডগুলোতে যারা বিনিয়োগ করছে তাদের অবশ্যই ঝুঁকিমুক্ত রাখতে হবে। এ কারণে বন্ডের ওপর আমাদের ডিপেন্ড বা নির্ভর করতে হবে। এ জন্য বাজারে ডাইভারসিফিকেশন দরকার । তাছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক ফান্ড ব্লকেজ আছে। আমাদের রাস্তা তৈরি করে ব্লক সরাতে হবে। অনেক ব্যাংকই ব্ল্যাক ফাইন্যান্সিংয়ের কারণে ‘ব্লক’ হয়ে আটকে গেছে। উন্নত বিশে^ ঐ ঋণ কিনে ফেলা হয়। ওই সব দেশে এমন ফ্যাক্টরি আছে কিন্ত ভায়াবল না হওয়ায় সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। তখন দেখা হয় যে, সেইসব ফ্যাক্টরির তো একটা লেভেল থাকে, যেখানে সে ভায়াবল।  প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে কর্মীদের ওপর চাপ পড়বে। ফলে কারখানা চালু রাখা দরকার। সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে ফ্যাক্টরিকে যুগপোযোগী করে আধুনিকভাবে গড়ার চেষ্টা করে তারা। তখনই ফান্ডের প্রয়োজন হয়। উন্নত দেশকে অনুসরণ করতে পারি আমরা। যদি আমরাও ওইসব ফান্ড একটা ব্লক একাউন্টে দিতে চাই তাহলে আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটে ফান্ড সোর্সিং করতে হবে। সোর্সিং করার পর পাঁচটা ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে একটা গ্রুপ বানানো হলো।  গ্রুপকে যদি ফান্ড সোর্সিং করে আপগ্রেড করে লাভজনক করা যায় তাহলে লাভ আমাদেরই। সেটাকে আবার পুঁজিবাজারে বন্ড ও ইক্যুইটি বেইজড ফাইন্যান্সিং এগুলো সবই আসতে পারে। তখন ফ্যাক্টরি আবার চালু হবে। চালু হলে বেকার সমস্যার কিছুটা সমাধান হবে।
বস্ত্র খাতে ব্যাংক একটা বড় ফ্যাক্টর, কারণ ব্যাংকগুলোকে আমাদের বেশ বড় পরিমাণ অর্থ ইন্টারেস্ট দিতে হয়। ফলে অনেক টেক্সটাইল কোম্পানি ইক্যুইটি মার্কেটে চলে আসছে। তাদের হয়তো এখন ঋণ  নেই। তবে এখানে আমাদের আরো কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন বাকি রয়েছে। যেখানে এখনও আমরা আসতে পারি নি।  প্রতিটি ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে লিভ পিরিয়ড বলে একটা কথা আছে। লিভ পিরিয়ড যদি কোনও কারণে বেড়ে যায় তাহলে সেখানে কস্ট অব ফান্ড হাই হয়ে যায়। তাতে করে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়, অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। বটম লিংকেজের জন্য, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ক্লিয়ার করার জন্য যে ধরনের ট্রেডিং কোম্পানি হওয়া উচিত ছিল তা হয়নি। বড় বড় ট্রেডিং কোম্পানি থাকলে কী হতো? টেক্সটাইলের জন্য তারা দেশের  বাইরে থেকে তুলা আমদানি করে ওয়্যার হাউজে রাখতো। তখন স্থানীয় উৎপাদকরা সেখান থেকে তাদের প্রয়োজনে মালামাল কিনতে পারে। তখন তাদের সাপ্লাই স্থিতিশীল থাকবে। সাপ্লাইয়ের কমতি হবে না। এর জন্য আমাদের আশেপাশের দেশের সাথে মিলিয়ে ভর্তুকি দিতে হবে। ভারত হয়তো শতকরা ১৫ ভাগ ভর্তুকি দিচ্ছে। সেটা আমাদের জানতে হবে। যারা আমাদের প্রতিযোগি তাদের ব্যাপারে খবর রাখতে হবে। আমরা জানি, এক্ষেত্রে ভারত অনেক এগিয়ে গেছে। আর আমাদের সেখানে গ্রোথই হচ্ছে না।  ব্যাপারগুলা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। আমাদের মার্কেটিং পলিসির পরিবর্তন করতে হবে। তারা সেখানে কী কী বেনিফিট পাচ্ছে, সেগুলো আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। তারপর সেই ভাবে আমাদের সব সাপোর্টের মাধ্যমে ড্রাইভ দিতে হবে। নতুন নীতিমালা প্রয়োগ করতে হবে। পাশাপশি আমাদের সমস্যাগুলো  খুঁজে বের করে সমাধানের পথে  যেতে হবে।


পুঁজিবাজারের ব্যাপ্তি কিন্ত এখন অনেক বড় হয়ে গেছে। এখন বাজারে  অল্প টাকা নিয়ে আসলে হয়তো খুব একটা সুবিধা করা যাবে না। আসলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তিন ধরনের গুণাগুণ দেখা যায়। প্রথমত কর্পোরেট বিনিয়োগ; তারা বিনিয়োগের জন্য সমস্ত কাজ সম্পন্ন করতে পারে। তারা দীর্ঘমেয়াদী, স্বল্প মেয়াদ ও মধ্যমেয়াদী সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আরেক ধরনের বিনিয়োগকারী আছেন যারা সেভিংসের কথা চিন্তা করেন।  এ  ক্ষেত্রে  যেসব কোম্পানি  ভালো ডিভিডেন্ড দেয় তাদের বিস্তারিত দেখে কিছু কিছু শেয়ার তারা কিনে রাখেন। সঞ্চয়ীভাবে তারা বিনিয়োগ করতে থাকেন। তৃতীয় আরেক শ্রেণীর বিনিয়োগকারী আছেন, যাদের আমরা বলি ডে-ট্রেডার। তারা সারাদিন ট্রেডিং করে দিন শেষে যা পাওয়া গেল, সেটাই তাদের আয়। সেখানে তারা লাভ-ক্ষতি হিসাব  করেই আসেন। এই প্রক্রিয়ায় কে কিভাবে ট্রেড করছে সেটা কিভাবে বলবো? আমরা তো গিয়ে বলতে পারি না যে, আপনি এটা করবেন না। যাদের বড় ফান্ড আছে তারা কয়েকজন মিলে একটা কর্পোরেট ফান্ড করতে পারে। এখন তো অনেক শিক্ষিত বেকার পাওয়া যাবে, তাদের এনে যদি ফান্ডিং করা যায়, তাহলে তারা অনেক এগিয়ে যেতে পারবে। তারা সবাই মিলে একটা কমন ফান্ড করে এগিয়ে যেতে পারে। আবার যারা এককভাবে বিনিয়োগে আগ্রহী তারা অভিজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তাদের কাছ  থেকে বিভিন্ন তথ্য নিয়ে কোথায় বিনিয়োগ করবেন, কিভাবে করবেন সে ব্যাপারে জানতে পারেন। তাতে করে তার ডিভিডেন্ট রিটার্নটা ভালো হবে। আর ডে-ট্রেডাররা তো জুয়া খেলতে আসছে। তারা তো লাভ-লস করবেই, লাভ-লস মিলিয়েই তারা তাদের বিনিয়োগ করবে। তাদের দায়িত্ব নেয়া যাবে না।

শামসুল হুদা

ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এ এন এফ ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড