নেগেটিভ ইক্যুইটির প্রজ্ঞাপন, প্রান্তিক প্রতিবেদনের নির্দেশ

পুঁজিবাজারের ঋণাত্মক মূলধনধারী (নেগেটিভ ইক্যুইটি) বিনিয়োগ হিসাবে শেয়ার কেনা-বেচার প্রান্তিক প্রতিবেদন জমা দেওয়ার শর্তে ১ বছর ৪ মাস সময় বাড়িয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। যা আগামী অক্টোবর মাসের ১ তারিখ থেকে কার্যকর হবে।

প্রান্তিক প্রতিবেদন জমা দেওয়ার শর্তটিও এই সময় থেকে কার্যকর হবে। এক্ষেত্রে নেগেটিভ ইক্যুইটি হিসাবে লেনদেনে কোনো সমস্যা হবে না। লেনদেন যেভাবে আছে সেভাবে চলবে।অর্থাৎ লেনদেন বন্ধ হবে না।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে ঋণাত্মক মূলধনধারী (নেগেটিভ ইক্যুইটি) বিনিয়োগ হিসাবে শেয়ার কেনা-বেচার প্রান্তিক প্রতিবেদন ৩ মাস পর পর জমা দিতে হবে। একইসঙ্গে তারা কিভাবে এটি কমিয়ে আনতে পারে, তার কর্মপরিকল্পনা দিতে হবে। প্রান্তিক শেষ হওয়ার প্রথম সপ্তহের মধ্যে  এই প্রতিবেদন বিএসইসিতে জমা দিতে হবে।

এ নিয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, আমরা শর্ত দিয়ে সময় বাড়িয়েছি। প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি ৩ মাস পর পর ঋণাত্মক মূলধনধারী (নেগেটিভ ইক্যুইটি) বিনিয়োগ হিসাবে শেয়ার কেনা-বেচার প্রতিবেদন বিএসইসিতে জমা দেবে। একইসঙ্গে কিভাবে তারা এটা কমিয়ে আনতে পারে, তার কর্মপরিকল্পনা দেবে।

তিনি বলেন, আগামী অক্টোবর থেকে এটা কার্যকর হবে। তবে তার আগে প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী প্রান্তিকের কর্মপরিকল্পনা জমা দেবে। এই প্রতিবেদন ও কর্মপরিকল্পনা প্রান্তিক শুরু হওয়ার প্রথম সপ্তাহে কমিশনে জমা দেবে প্রতিষ্ঠানগুলো এবং সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা কাজ করবে।

এর আগে গত বুধবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুঁজিবাজারের ঋণাত্মক মূলধনধারী (নেগেটিভ ইক্যুইটি) বিনিয়োগ হিসাবে শেয়ার কেনা-বেচার সময় আগামী ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ পর্যন্ত বৃদ্ধি করার কথা জানায়। আজ বৃহস্পতিবার যার প্রজ্ঞাপন জারি হলো।

আগামীকাল ১৮ আগস্ট এই হিসাবে লেনদেনের সুযোগ শেষ হওয়ার কথা ছিল।

এর আগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রতিনিধিরা মার্জিন রুলসের সংশ্লিষ্ট ধারা শিথিল করে ফের সময় বাড়ানোর আবেদন করে। গত রোববার এ আবেদন নিয়ে বিএসইসির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও হয়। যেখানে ডিএসই, ডিবিএ ও বিএমবিএ সবাই মার্জিন রুলসের সংশ্লিষ্ট ধারা শিথিল করে আবারও ১ বছর বাড়তি সময়ের জন্য আবেদন করে।

উল্লেখ, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) মার্জিন রুলস, ১৯৯৯ এর ৩(৫) ধারা অনুযায়ী কোনো বিনিয়োগকারীর ডেবিট ব্যালেন্স ১৫০ শতাংশের নিচে নেমে গেলে ওই হিসাবে শেয়ার কেনা-বেচা বন্ধ থাকার কথা। কিন্তু ২০১০ সালের ধস পরবর্তী বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় কয়েক দফা ধারাটির কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) নতুন করে স্থগিতাদেশের জন্য বিএসইসির কাছে আবেদন করে। এর প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বিএসইসির কমিশন বৈঠকে ওই ধারাটির কার্যকারিতা ৬ মাস স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। সে মেয়াদ আগামী ১৮ আগস্ট শেষ হয়।

মার্জিন ঋণ হচ্ছে বিশেষ ধরনের ঋণ সুবিধা। শেয়ার কেনার জন্য ব্রোকারহাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংক গ্রাহককে এই ঋণ দিয়ে থাকে। বিএসইসি প্রণীত মার্জিন রুলস, ১৯৯৯ এর আওতায় এই ঋণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

২০১০ সালের পর থেকে টানা দর পতনে অসংখ্য মার্জিন একাউন্টে বিনিয়োগকারীর মূলধন ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। ওই সব একাউন্টে থাকা শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দাম এমন জায়গায় নেমে আসে যে, অনেক ক্ষেত্রে তা বিনিয়োগকারীর নিজস্ব মূলধনের পরিমাণ কমে যায়। আইন অনুসারে এমন একাউন্টে লেনদেন নিষিদ্ধ।

১৯৯৯ সালের মার্জিন রুলসের ৩(৫) ধারায় উল্লেখ করা হয়, কোনো বিনিয়োগকারীর ডেবিট ব্যালেন্স ১৫০ শতাংশের নিচে নেমে গেলে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান তার কাছে নতুন করে মার্জিন চাইবে। এই মার্জিনের পরিমাণ এমন হবে যাতে তার ডেবিট ব্যালেন্স ১৫০ শতাংশের উপরে থাকে। নোটিশ দেওয়ার তিন কার্যদিবসের মধ্যে পর্যাপ্ত মার্জিন জমা দেওয়া না হলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে নতুন কোনো লেনদেনের অনুমতি দিতে পারবে না ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান।

আজকের বাজার: সালি / ১৭ আগস্ট ২০১৭