পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ আচরণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

ক্যাপিটাল মার্কেট প্রফেশনাল্স, সিএফএ সোসাইটি বাংলাদেশ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট। রেপুটেড মার্চেন্ট ব্যাংক আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান। পুঁজিবাজারের সেকেন্ডারি মার্কেট, সিএফএ প্রফেশনাল্স ও  ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টরদের ভূমিকা নিয়ে সম্প্রতি আজকের বাজার-এবিটিভি’র সাথে একান্ত আলোচনা করেছেন।

২০১৭-তে এরই মধ্যে আমরা পুঁজিবারে বেশ কিছু ইতিবাচক মুভমেন্ট দেখতে পাচ্ছি। ইনফ্যাক্ট ২০১৬ সালের নভেম্বর মাস থেকেই আমরা কিছু সিমটম দেখতে পাই। আসলে ২০১০-এ মার্কেট ক্রাশের পর পুঁজিবাজার অনেকটাই স্তিমিত অবস্থায় ছিল। কিন্তু ২০১৬-এর শেষের দিকে আমরা এমন কিছু অ্যাক্টিভিটিস দেখতে পেলাম, যেখানে নতুন অনেক ক্লায়েন্ট আসছে। যারা ৫-৬ বছর ট্রেড করে নাই, তারা তাদের একাউন্ট সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিচ্ছে, নতুন করে ফান্ড দিচ্ছে। সম্প্রতি আমরা কিন্তু মার্কেটে ২ হাজার কোটি টাকার ট্রানজ্যাকশন দেখলাম। এটা কিন্তু দীর্ঘদিন পরে ২০১০-এর বুল রানের মিড্্লে এ ধরনের ট্রানজ্যাকশন আমরা দেখতে পেয়েছি। গত ৬ বছরে কিন্তু এ ধরনের ছিল না। ইটস আ পজিটিভ ইন্ডিকেটর।

আমাদের বাংলাদেশের মার্কেটের যে অবস্থা, এ টার্নওভারটা অনেকটা হায়ার সাইডেই। ইট ইজ আ গুড সাইন। এখন বাংলাদেশে অলটারনেটিভ যে ইনভেস্টমেন্ট অপশনগুলো আছে, সেভিংস একাউন্টে রাখলে ২-৪%, ফিক্স ডিপোজিটে রাখলে ৪-৭% লাভ পাওয়া যায়। কিন্তু আফটার ট্যাক্স ওখানে রিটার্নটা আরও কমে যায়। ক্যাপিটাল মার্কেটে দীর্ঘ মেয়াদে আমরা বিশ্বাস করি যে উই ক্যান জেনারেট ১০-১৫% রিটার্ন এটলিস্ট। ভালো কোম্পানিতে, মানে যে কোম্পানির সেলসের গ্রোথ আছে, নিট প্রফিটের গ্রোথ আছে, এ ধরনের কোম্পানিতে রাখলে কোম্পানির ব্যবসা ১০-১৫% হারে বাড়বে। তার শেয়ার প্রাইজও কিন্তু ধীরে ধীরে বেড়ে যাবে।

সুতরাং পজিটিভ সাইট হচ্ছে, মানুষের হাতে টাকা ছিল কিন্তু মানুষ আসতে চাচ্ছিল না। ভাবছিল, এখানে গিয়ে আবারও কি সেই আগের মতো লসের ভাগিদার হয়ে যাবে কি না। যেহেতু মার্কেটের অ্যাক্টিভিটি বেড়েছে, অনেকগুলো স্টকও রাইটলি বেড়েছে। সবকিছু ছাপিয়ে পুঁজিবাজারে মানুষের অংশগ্রহণ বেড়েছে এবং এই এনার্জিটাকে যদি আমরা রাইট ওয়েতে চ্যানেলিং করতে পারি, তবে ২০১৭-তে ভালো একটা ভাইব্রেট মার্কেট আমরা দেখতে পাব।

বাজারের স্থিতিশীলতা

আমরা নানাভাবে দেখছি, ৫-৬ বছর পরে ২ হাজার কোটি টাকা টার্নওভার হয়েছে। আবার সূচকও ৫০০-৬০০ পয়েন্ট বৃদ্ধি পতে দেখেছি। আবার কয়েক দিনের মধ্যে পড়েও যেতে দেখছি। ট্রানওভার ২ হাজার কোটি থেকে নেমে ৭০০ কোটি, ৮০০ কোটি টাকায় নেমে যেতে দেখছি। তাহলে কেন আমরা স্থিতিশীল বাজার দেখতে পারছি না? কারণ হলো, আমাদের মার্কেটটা আসলে রিটেইল রিবেল মার্কেট। এখানে রিটেইল পার্টিসিপেন্ট কখন বাড়ছে? যখন দেখতে পাচ্ছে একটি ট্রেন্ড স্টাবলিশ হয়েছে। তারা ট্রেন্ড ফলোয়ার, তারা মার্কেটটাকে চেঞ্জ করতে চাচ্ছে।

স্থিতিশীলতার জন্য যে বড় ফ্যাক্টরটা দরকার, তা হলো এখানে একজন বায়ার হবেন, একজন সেলার হবেন। তাঁরা মনে করবেন না এখন এই প্রাইজটা ওভার ভ্যালুড, এখন সেল করা উচিত। কিন্তু এখানে সবাই সাইডলাইনে বসে ছিলেন। হঠাৎ করে মনে করছেন যে মার্কেটটা বাড়ছে, মার্কেটটা ভালো হচ্ছে। সুতরাং সবাই একসঙ্গে এখানে পার্টিসিপেট করতে চাচ্ছেন। এ কারণেই হঠাৎ করেই টার্নওভারটা সিগনিফিক্যালি বেড়ে যায়। আবার এই ভাইব্রেটটা একসময় একজস্ট হয়ে যাচ্ছে, সব সময় তো মানুষের আনলিমিটেড ফান্ড থাকে না। মার্কেট যখন বাড়তে থাকে, একটার প্রফিট দিয়ে আরেকটা শেয়ারিং করছে।

এর ফলে টার্নওভারটা কিন্তু ক্রমান্বয়ে বাড়তির দিকে থাকছে। কিন্তু ওখানে যখন ইনডেক্সে একটা স্যাচুরেটেড পয়েন্টে চলে যাচ্ছে বা স্টকের প্রাইস একটা স্যাচুরেটেড পয়েন্টে চলে যাচ্ছে, তখন এটা আবার কমতির দিকে যাচ্ছে। সুতরাং এই অবস্থাটা বাংলাদেশ মার্কেটে থাকবে যত দিন পর্যন্ত না ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টররা এখানে ডমিনেন্ট রোল প্লে করবে। এখানে আইসিবি অনেক বড় একটা প্রতিষ্ঠান। প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে তাদের বিনিয়োগ আছে। তার বাইরে আছে ব্যাংকগুলো। কিন্তু স্টিল অ্যাক্টিভ ট্রেডিং যদি ধরা যায়, তাহলে দেখা যাবে যে রিটেইল ইনভেস্টররা মার্কেটটাকে ডমিনেট করছে।

ইনস্টিটিউশনাল ফান্ডগুলো যখন আরও বড় হবে, মিউচুয়াল ফান্ড বড় হবে বা মার্চেন্ট ব্যাংকের ডিস্ক্রিশন এরিয়া যখন বড় হবে, এ রকম আরও প্রতিষ্ঠান যখন বড় হবে, তখন মানুষ ভ্যালুবেজ ইনভেস্টমেন্ট বা জাজমেন্ট খাটিয়ে প্রতিটা সেক্টরের মেরিট বেইজড ইনভেস্টমেন্টগুলো করতে পারবে। তখন একটি শেয়ারের দাম বেশি বেড়ে গেলে সেখানে সেলার হিসেবে আবির্ভূত হবে। আমাদের দেশে ট্রেন্ড ফলোইন যে ন্যাচারটা আছে, এর কারণে অনেক ক্লায়েন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হন। অনেক সময় একেবারে ম্যাচিউরড স্টেজে বা পিক-এ গিয়ে তাঁরা শেয়ারটা কিনছেন।

কেনার পরে দু-এক দিন বাড়ছে, আবার কখনো কেনার পরদিন থেকেই দর কমা শুরু হচ্ছে। এটাতে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কারণ তাঁরা বুঝতে পারছেন না কখন আন্ডার ভ্যালুড অবস্থা, তখন শেয়ারটা কিনতে পারছেন না। এখানে ডিমান্ড সাপ্লাইয়ের এই ডায়নামিক্সটা কাজ করছে। তাই আমাদের কাছে মনে হচ্ছে যে মার্কেটটা স্থিতিশীল না। বুল মার্কেটের যে বৈশিষ্ট্য, সেটা হচ্ছে যে মার্কেটের শেয়ার প্রাইজটা যদি খুব বেশি ওভার ভ্যালু না হয়, তাহলে দেখা যায় যে প্রাইজটা ঘুরে ঘুরে আবার আগের জায়গায় আসে। তবে ভালো স্টকে থাকলে একটা রিটার্ন জেনারেট করা যায়।

পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনাতে হলে এই যে মানুষের স্প্যাকুলেটিভ বিহেবিয়ার, এটাকে কন্ট্রোল করতে হবে। ইনস্টিটিউশনগুলো আরও বেটার রোল প্লে করতে পারে। মিউচুয়াল ফান্ডগুলো সম্পর্কে মানুষের মনে খুবই নেগেটিভ একটা সেন্টিমেন্ট কাজ করে। মানুষ এখন তেমন একটা গ্রহণ করে না। তাদের অফারগুলো তেমন একটা দেখছে না। এই ফান্ডগুলো যদি মানুষের মনের আস্থার জায়গায় নিয়ে আসতে পারে, তারা যদি ভালো ডেভিডেন্ড দিয়ে ধীরে ধীরে মানুষের মন জয় করতে পারে, তাহলে মিউচ্যুয়াল ফান্ড একটা বড় ফোর্স হতে পারে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা আনার জন্য।

ইনস্টিটিউটগুলোর যে সক্ষমতা, সে অনুযায়ী সবাই সেভাবে ভ্যালু বেইজ ইনভেস্ট করছেন না। এখানে যে বড় বড় ফান্ড আছে, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আছে। এখানে যদি রিসার্চ বেইজ ইনভেস্ট করা হয়, সেক্টর এনালাইসিস করে প্রপারভাবে ইনভেস্ট করা হয়, তাহলে দেখা যাবে, যেখানে ভ্যালু আছে, ফিউচার গ্রোথ প্রটেনশিয়াল আছে, সেসব কোম্পানিতে মানুষ বিনিয়োগ করবে। এখন অনেক প্রতিষ্ঠানের যদি পোর্টফোলিও খুলে দেখেন, তাহলে দেখবেন যে ওখানে একশ-দেড়শটা স্টকস পড়ে আছে। একটা কোম্পানি যখন দুইশটা স্টকস করে, তখন আপনি ধরে নেবেন যে তার কোনো ফোকাস নাই, তার কোনো স্টাডি নাই যে কোন কোম্পানিটা আসলে ভালো করবে। আমরা তো ইনভেস্ট করি একটি ফিউচার বিজনেস গ্রোথের জন্য। কিন্তু সবগুলো কোম্পানিতে যদি ঢালাওভাবে বিনিয়োগ করা হয়, তবে এখানে কোনো ইনভেস্টমেন্ট প্রসেস প্রপারলি ওয়ার্ক করছে না।

রিয়েলিটি হচ্ছে যে আমাদের হিউম্যান রিসোর্সের অভাব। যে ছেলেগুলো এখন আমাদের সিএফএ সার্টিফায়েড হচ্ছে, এরা মোস্টলি ইয়াং জেনারেশন। কয়েক বছর চাকরি করেছে বা ইউনিভার্সিটি থেকে বের হয়েছে। এরা কোম্পানিগুলোতে যখন মিড ম্যানেজমেন্টে যাবে, সিও হিসেবে যখন রোল প্লে করবে, তখন প্রোবাবলি অ্যাপ্রোচে একটি ভিন্নতা দেখতে পাব। ওভারঅল ইন্ডাস্ট্রিতে একটা চেঞ্জ দেখতে পাব। অ্যাটলিস্ট ইন দ্য প্রাইভেট সেক্টর। আর মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো কেন পারফর্ম করতে পারছে না, কতটুকু পারছেÑ এ বিষয়ে বলব, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো একপ্রকার চেঞ্জ নিয়ে এসেছে।

আমি যখন চাকরিজীবন শুরু করি, এভাবে কাজ করার মতো তেমন ভালো কোনো প্রতিষ্ঠানও ছিল না। সরকারি আইসিবি ছাড়া আসলে ২০ বছর আগে ওভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানকে খুঁজে পাবেন না। এখন অ্যাটলিস্ট মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো আসার পরে তারা কিছু অপরচুনিটি তৈরি করেছে, সেখানে কিছু কোয়ালিফায়েড প্রফেশনালস্দের কাজে লাগাচ্ছে। তাদের রিক্রুট করেছে, ট্রেন্ড করেছে, তাদেরকে ইন্ডাস্ট্রির সাথে কাজ করার একটা সুযোগ করে দিয়েছে। বাট এখানে গভর্নমেন্টের আরও একটি বড় জায়গা রয়ে গেছে। আমাদের মার্কেটটা একেবারেই নেসেল্্স্্ স্টেইজের মার্কেট।

আমাদের প্রোডাক্ট বলতে তো শুধু ইকুইটিটা এবং ইকুইটি নিয়েও আমাদের ঘাটতি রয়েছে। আমাদের বিনিয়োগের স্টাইলটা ম্যাস পিপলের ইন্টিমিশন নেই এবং ৩০ লক্ষ বিনিয়োগকারী যাঁরা আছেন, তাঁরা কীভাবে যে বিনিয়োগ করেন, সেটাও ভেবে দেখার একটা জায়গা আছে এবং সেখানে একটা ইমপ্র“ভমেন্টের যায়গা আছে। সুতরাং মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো নতুন নতুন কোম্পানিকে নিয়ে আসছে শেয়ারবাজারে। এটা তাদের বড় একটা দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব কিছুটা হলেও পালন করেছে। বলতে হবে, লাস্ট কয়েক বছরে কিছু ভালো কোম্পানি আসছে, আবার সবাইকে নিয়ে আসাও সম্ভব হয়নি। কারণ এই ডিপ্রেস মার্কেটে তারা আসতে চায় না। তারা অপেক্ষা করতে চায় ভালো রেটের। পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্টে আমাদের সেবা দেওয়ার ভালো একটি সুযোগ আছে। পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্টের এই কাজটা আমরা ওইভাবে অগ্রসর হতে পারিনি। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো এখানে একটা ডিফিসিয়েন্সি আছে।

আমরা মোস্টলি মার্জিন লোন প্রোডাক্টটাকেই বেইজ প্রোডাক্ট হিসেবে ধরে নিয়েছি। আমাদের রেভিনিউর অধিকাংশই এখান থেকে আসছে। যদি পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্টটা আরও আমরা প্রফেশনালি হ্যান্ডেল করতে পারি এবং এর মাধ্যমে যদি ভালো রিটার্ন জেনারেট করতে পারি, তবে তারা আমাদের কাছে আসবে। আমাদের বাজারটাও স্থিতিশীল হবে। আর নতুন আইপিও নিয়ে আসারও কোনো বিকল্প নাই। নতুন নতুন কোম্পানি না এলে বাজার তো বড় হবে না। আর রিসার্চ একটা বড় সমস্যা। আমরা বিনিয়োগকারীদের কাছে কিন্তু রিসার্চের কোনো ফল এখনো পৌঁছে দিতে পারিনি। ফরেন ইনভেস্টররা এই ফ্যাসিলিটিসটা সঠিকভাবে গ্রহণ করে। কিন্তু আমাদের লোকাল মার্কেটের বিনিয়োগকারীরা এই সুবিধার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। সিএফএ সোসাইটি বাংলাদেশের যেসব নিয়ম-কানুন আছে, সেগুলোকে লোকাল মার্কেটে কীভাবে ইনপুট দেওয়া যায় সে বিষয়ে কাজ করছে। সবাই মিলে কাজ করছি এবং আমাদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই মার্কেটটা বড় হবে এবং স্বচ্ছতার সাথে, জবাবদিহির সাথে মার্কেটটা রান করবে।

ম্যাচিউর মার্কেট

ম্যাচিউর মার্কেটের মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনের একটা সাইজ থাকে। যেমন ধরেন যে গ্লোবাল ইমাজির্ং মার্কেটের একটা ইনডেক্স আছে। আমাদের মার্কেট সাইজটা এত বড় না, আমাদের টার্নওভারটাও ও রকম বড় না যে আমরা ইমার্জিং মার্কেটে যেতে পারি। আমাদের এখানে ফরেন ইনভেস্টররা যখন আসে, তখন তাদেরকে আমরা ৮-১০টার বেশি কোম্পানিকে লিস্ট করার জন্য রিকমান্ড করতেই পারি না। কারণ ওই কোম্পানিগুলোর সব থেকে বড় যে সমস্যাটা আমরা ফেস করি, তা হলো স্ট্যাবলিশ করপোরেট কাভার নেই বা ট্রান্সপারেন্সি লেভেল নেই। এটার ওপরে আমরা নিজেরাও কনফিডেন্স পাই না আর ফরেন ইভেস্টররাও তাদের আস্থাটা রাখতে পারে না। ম্যাচিউরড বাজারের জন্য রিসার্চ রিপোর্টও ঠিকমতো আসছে না, পার্টিসিপেন্টরা তাদের আস্থার জায়গাটা পাচ্ছে না। কোন স্টকটা ভালো, কোনটা ভালো না, এই ইনফরমেশনটা কিন্তু কোনো মাধ্যমই ইনভেস্টরদের জানাতে পারছে না।

কোনো শেয়ার ভালো বা মন্দ বলার বিষয়টা আমাদের দেশের রিসার্চ গাইডলাইনেই অনুমতি দেওয়া আছে। কেউ যদি রিসার্চ বেইজ একটা কথাবার্তা বলে এবং তার কাছে ব্যাকগ্রাউন্ড ওয়ার্ক থাকে, যে এটা বলবে সে এটা প্রমাণ করতে পারে, তাহলে বলতে পারে। বাইরের বাজারে দেখা যায় যে এক বছর পরে এই স্টকটার দাম এত হওয়া উচিত এবং কেন হওয়া উচিত তিনি এটার প্রেক্ষিতে প্রমাণ দিতে পারলে অবশ্যই বলে দেয়। আমাদের দেশে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান করে। তবে এই ফ্যাসিলিটিসটা ফরেন ইনভেস্টরদের আমরা দিয়ে থকি। লোকালি করা হয় না, কারণ অনেকে মনে করে যে এখানে প্রাইজমানি পলিউশন করছে, তারা নিজেরা কিনে পরে তারা বিনিয়োগকারীদের এখন কিনতে বলছে। এ রকম একটা অভিযোগ এখানে আসতে পারে। এটা কমফোর্টেবল না, ওভারঅল বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য।

বাজারে রিউমার যাতে না ছড়ায়, সে বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কিছু গাইডলাইন আছে। কিন্তু তারা রিসার্চ গাইডলাইনও আবার তৈরি করেছে। কেউ যদি চায় নিয়মতান্ত্রিকভাবেও আমরা এই জিনিসগুলো মার্কেটে ডেসিমিনেট করতে পারি।

ম্যাচিউরড বাজারের বিহেবিয়ারগুলো ম্যাচিউরড হবে। আনইউজুয়াল প্ল্যান ইস্যুতে ট্রেড হচ্ছে, ইনফরমেশন নাই, কয়েক মাসের মাথায় ডাবল হয়ে যাচ্ছে। কী হচ্ছে না হচ্ছে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। অথবা প্রাইস হঠাৎ করেই অর্ধেক হয়ে যাচ্ছে। অনেক কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে, কারখানা চলছে না, সেটার কোনো জবাবদিহি নাই। ট্রেডিং হচ্ছে, দামও বাড়ছেÑ এগুলো খুবই আনইউজুয়াল। ম্যাচিউরড মার্কেটে কোয়ার্টারলি আর্নিংসের আগেও যদি কোনো সারপ্রাইজ থাকে, তখন ম্যানেজমেন্ট বলে যে তার আর্নিং এস্টেটমেন্ট এ রকম বা এ কারণে তার আর্নিংসটা খারাপ আসবে। দেয়ার ইজ আ কমিউনিকেশন।

আমাদের দেশে কমিউনিকেশনটা শুরু হয়েছে, গ্রামীণফোন কোয়ার্টারলি ইনভেস্টরদের সাথে কমিউনিকেশন করছে। ব্র্যাক ব্যাংক ও আইডিএলসি ইনভেস্টরদের সাথে আর্নিং নিয়ে কমিউনিকেশন করছে। নানা চ্যানেল তারা সৃষ্টি করছে। এখানে রিলেশন্স অফিসার আছেন, যিনি কোনো ইনভেস্টমেন্ট সম্পর্কে তথ্য দেবেন। আমাদের দেশের দু-একটা কোম্পানির আছে। অনেক কোম্পানি আছে, তারা কোনো মিটিংয়ে আপনাকে অ্যালাও করবে না। কোনো এনালাইসকে তারা এনট্রেন্স দেয় না। এর মধ্যে অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানও আছে। সবচেয় বড় সমস্যা হচ্ছি আমরা বিনিয়োগকারীরা।

একটি প্রতিষ্ঠান যে আর্নিং-ফ্লো জেনারেট করতে পারবে, এই কনফিডেন্সটা আমরা পাই না। তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে রাইট রেজাল্ট রিফ্লেক্টেড কি না, এটা কন্টিনিউ থাকবে কি না, এখানে বেশি বা কম দেখানো হচ্ছে কি নাÑ এ ধরনের একটা সংশয় থেকেই যায়। সুতরাং একাউন্ট স্টেটমেন্টের যে ক্রেডিবিলিটি, সবচাইতে বড় সমস্যা অ্যানালিস্টদের জন্য। এডুকেট ডিসক্লোজড হয় না, ওপেন ডিসকাশন নাই যে কেন একটা প্রোডাক্ট ভালো করছে। হঠাৎ করে একটি কোয়ার্টারলি ভালো হলো। সেটা কেন ভালো হলো বা কেন খারাপ হচ্ছে, ডিসকাশনটা হওয়া দরকার। সেটা এখন আমাদের দেশে দু-একটা কোম্পানি ছাড়া এখন খুব একটা হচ্ছে না। ডেভেলপ মার্কেটে একটা কোম্পানির অনেকটা এনালাইসিস থাকে, তাদের বিশেষ পয়েন্টগুলো একটি রিপোর্টে পাবলিশ করে।

এটা আমাদের দেশে এখনো প্রেজেন্ট না। ওখানে স্পেশিয়ালি ইনভেস্টররা খুব সিগনিফিকেন্স একটি রোল প্লে করে। পরে তাদের ইনডিপেনডেন্ট জাজমেন্ট নিয়ে লং টার্ম আউটলুকে কাজ করে। এখানে ইনভেস্টরদের সেই অ্যাক্টিভ এবং কোয়ালিটি পার্টিসিপেশন নেই, যে প্রসেসের মাধ্যমে একটি স্টককে পিক করে। তারা যদি নিউইয়র্ক থেকে এসে এ দেশের ম্যানেজমেন্টের সাথে কথা বলে একটা ফিলিংস নেয়, তারপরই কিন্তু তারা ফান্ডটা ইনভেস্ট করে। সুতরাং এ ধরনের বিজনেস তারা ইউরোপ-আমেরিকা থেকে এসে করতে পারে। আমাদের দেশের ইনভেস্টররা কিন্তু এখনো ইনস্টিটিউশনাল ওয়েতে প্রসেসগুলা অ্যাপ্লাই করতে পারে। ইনস্ট্রুমেন্টের তো অভাব আছেই আমাদের সবাই জানেন। মানুষ এখনো ইকুইটি বা মিউচুয়াল ফান্ডই বোঝে না। কখনো অনেক ডিসকাউন্টে ট্রেড হচ্ছে, আবার কখনো অনেক বেশি দামে ট্রেড হচ্ছে। সুতরাং মানুষের বেসিক লার্নিংয়ের বেসিক বিহেবিয়ারের ইম্প্র“ভমেন্টের জায়গা আছে।

সবচেয়ে বড় যে রোলটা প্লে করতে পারে, সেটা হচ্ছে রেগুলেটরি। রেগুলেটররা স্ট্রাকচার যেটা দাঁড় করাবেন, তার মধ্য থেকেই বাজারটা বিকশিত হবে এবং এখানে সত্যকে সত্য ও ন্যায়কে ন্যায়, অন্যায়কে অন্যায় স্বীকার করতে হবে। একটি অন্যায় হলে তাৎক্ষণিক তাঁর বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তবেই মানুষের মধ্যে আস্থার জায়গাটা ফিরে আসবে। এখন পর্যন্ত শেয়ারবাজার সম্পর্কে কোনো সাধারণ মানুষের কাছে যদি যাই এবং তাঁদের কিছু বিনিয়োগের কথা বলি, উনি বলেন, না ভাই ভয় লাগে, যদি আবার সবকিছু হারিয়ে ফেলি! তাঁর ভয়ের জায়গাটা আমাদের দূর করতে হবে। তিনি যেন ফিল না করেন যে তিনি চিটেড হবেন। মার্কেট ভালো হতে থাকলে অনেক এন্টারপ্রেনার খুব রোজি রোজি পিকচারস একাউন্টস দিতে থাকেন।

যেমন বিভিন্ন এগ্রিমেন্টস হচ্ছে, প্রজেক্ট বাড়ছেÑ এ ধরনের ইনফরমেশন দিতে থাকে। মার্কেট ভালো হতে থাকলে এগুলোকে আমরা দেখি। ইনভেস্টররা এই ভালো নিউজগুলো দেখে যখন আসবেন, অ্যাট্রাক্টেড হবেন। ফলে রেগুলেটরি রুলসগুলো যখন বাস্তবায়ন হবে না, তখন এসব ইনভেস্টর ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সুতরাং রেগুলেটররাই পারে একটা এনভায়রনমেন্ট তৈরি করতে, যাতে মোর অ্যান্ড মোর ভালো কোম্পানি লিস্টেড হয়। দ্বিতীয়ত যারা লিস্টেড, তারা যাতে রাইটলি তাদের একাউন্টগুলো ডিসক্লোজ করে আর্নিসগুলো ডিসক্লোজ করে। যদি কোনো ধরনের ম্যানুপুলেটেড ট্রেডিং বা ইনসাইডেড ট্রেডিং বন্ধ করা হয়, তাহলে ফেয়ার প্লের জন্য একটি গ্রাউন্ড তৈরি হবে এবং তখন দেশি বিনিয়োগকারীরা আসবে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসবে এবং সবাই মিলে ভালো একটা বাজার তৈরিতে সহায়ক হবে। এখানে মার্কেট পার্টিসিপেন্ট লাগবে, ভালো কোম্পানি লাগবে, গুড গভর্নেন্স লাগবে, ফেয়ার প্লে লাগবে। তবেই আমরা একটা ম্যাচিউরড বাজার পাব।

সিএফএ সোসাইটির রোল

সিএফএ সোসাইটি কিন্তু ৫ বছর আগেও ছিল না। এটা গ্লোবাল একটা প্রফেশনাল ইনভেস্টরদের জন্য গোল্ড চ্যাপ্টার ধরা হয়। সুতরাং বাংলাদেশে সিএফএ সোসাইটির একটি নতুন চ্যাপ্টার চালু হয়েছে। সুতরাং ইটস আ পজিটিভ নিউজ ফর দি কান্ট্রি অ্যান্ড ফর দ্য ডেভেলপমেন্ট অব দিস ক্যাপিটাল মার্কেট। সুতরাং তারা প্রফেশনালদের এনকারেজ করবে, ইনভেস্টর প্রফেশনালদের তারা তৈরি করবে। তাদের দেখে এনকারেজ হয়ে কেউ কেউ হয়তো শেয়ারবাজারে আসতে পারে।

ইন্ডাস্ট্রিতে মেজর যে এলিমেন্টসগুলো- ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টমেন্ট এবং ইনস্টিটিউশনালদের যে থট প্রসেস, তাদের ইন্টারনাল ম্যাকানিজম, তাদের বিহেবিয়ার থিংসগুলোকে কন্ট্রোল করে একটা ন্যাশনাল ইনভেসমেন্টের ডিসিশনগুলো নেওয়া এবং ইনভেস্টমেন্টের সাথে রিস্কটাও কিন্তু ইন্টিগ্রেটেড। শুধু রিটার্র্ন বুঝব, রিস্ক বুঝব না? একটা প্রোডাক্ট কীভাবে এফেক্টেড হতে পারে, সেই জিনিসগুলো আমরা যখন বুঝি না, তখন সেখানে কিন্তু সিস্টেমেটিক একটা ডিজস্টার তৈরি হয়, যেটা মার্জিন লোনের ক্ষেত্রে হয়েছিল। আমি মনে করি, মার্কেটে যদি বেশি বেশি প্রফেশনালসরা আসে, ইয়াং গ্র্যাজুয়েটরা যদি এখানে এট্রাক্টেড হয়, তাহলে তারা এই প্রসেস ইম্প্র“ভমেন্টের দিকে যাবে। আমি যেটা শুনেছি, ইন্ডিয়ার মার্কেটে মেজর যে রিগ্যাল রিফর্ম স্ট্র্যাকচারিংগুলো হয়েছিল, এগুলো বিদেশি ইভেস্টররা করেছিল।

ফরেন ইনভেস্টররা যখন ইন্ডিয়ার মার্কেটটাকে অ্যাট্রাক্টিভ মনে করেছিল, ওইটার সাথে কাজ করে করে তাদের আইন-কানুনগুলো আরও সফ্সটিকেটেড করেছে। সুতরাং বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে যদি আস্থায় নিতে চান, শেয়ারবাজারে তাদের যদি আসতে বলেন, তারা যে জায়গাগুলো বিশাস করতে চায়, সেই জায়গাগুলোকে বিশাসযোগ্যতায় আমাদের নিয়ে যেতে হবে। একটা কোম্পানি যখন অ্যানুয়াল রিপোর্ট তৈরি করবে, সেটার বিশাসযোগ্যতা আমরা যত বেশি বাড়াতে পারব, ততই আমাদের পুঁজিবাজার ম্যাচিউরড হবে। তারা সেই ২০১০ সালে ফিরে যেতে চায় না। কেউ তাদের সর্বস্ব নিয়ে যাচ্ছে এটা কেউ আশা করে না।

আমাদের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে অ্যাট্রাক্ট করতে চাইলে তাদের এনসিয়োর করতে হবে যে তারা এখানে এসে প্রতারিত হবেন না, এসেটটা এখানে গ্রোথ হবে। তাদের এসেটটা যে গ্রোথ হবে, ফিক্সড ডিপোজিট বা এ রকম যেসব অপশন আছে, সেগুলোর থেকে অনেক বেটার। সুতরাং বেটার রিটার্নের জন্য তারা কিছুটা ঝুঁকি নেবে। তারা এমন একটা জায়গায় ইনভেস্ট করছে, কিছুটা ঝুঁকির মধ্যে থেকেও ভালো রিটার্ন পাবে। এটা রেগুলেটেড ইনভায়রনমেন্ট। পুঁজিবাজারে অনিয়ম হতে পারে, কিন্তু সেগুলো মেজর যদি না হয়, তবে আস্থার জায়গাটা ফিরে আসবে।

আশা প্রত্যাশা

ভালো বাজার কত দিনে দেখতে পাব, সেটা বলা খুবই ডিফিকাল্ট। এখন গ্লোবালাইজেশন যেভাবে হচ্ছে, বিশেষ করে টেকনোলজি যে স্পিডে আমাদের জীবনযাত্রাকে বদলে দিচ্ছে। আপনি যদি চান যে ওয়ার্ল্ডের বেস্ট টেকনোলজিটা এখানে নিয়ে আসব, এখন সেটা সম্ভব। মানুষ অনেক বেশি রিসেপ্টিভ টু নিউ আইডিয়া। ইয়াং জেনারেশন নতুন কিছু ট্রাই করতে চায়, নতুন কিছু ইনভেস্ট করতে চায়। আমার মনে হয়, সাইজটা যদি বড় হয়, উইথ ইন ১০-১৫ ইয়ারস, এখানে ফরেন ইনভেস্টররাও অনেক বেশি আগ্রহী হবে।

আমাদের জিডিপির সাইজ নিয়ে গ্লোবাল যে ফোকাসগুলো খুবই প্রমিজিং কিছু পিকচার যায়, যা আমাদের স্বপ্ন দেখায় অনেক বড় হয়ে যাব, অনেক বড় বড় দেশের মতো জিডিপির আকার হবে, এই গ্রোথটা যদি আমাদের ইকোনমিতে হয়, তবে আমাদের শেয়ারবাজারেও এর একটা রিফ্লেকশন অটোমেটিকলি আসবে। তখন পার্টিসিপেন্টগুলো বাড়বে। নতুন প্রজন্মরা এই জায়গাগুলোকে আরও এক্সাইটিং মনে করবে। শেয়ারবাজারে তাদের,কেরিয়ার গড়তে চাইবে এবং গ্লোবাল যে বেস্ট প্রাকটিসগুলো হয়, তা এখানকার লোকাল ইন্ডাস্ট্রির পার্টিসিপেন্টদের মধ্যে তার একটা প্রভাব দেখতে পাব।

 

মো. মনিরুজ্জামান সিএফএ

ব্যবস্থাপনা পরিচালক

আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড