প্রস্তত কোরবানির পশুর হাট

সামনে ঈদ-উল-আজহা। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে জমে উঠছে কোরবানির পশুর হাট। আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত টোল ও চাঁদা। এদিকে প্রস্তুত চামড়া ব্যবসায়ীরা। ঈদকে পুঁজি করে সারা বছরের লোকসান কাটিয়ে নিতে চান তারা। রাজধানীসহ সারা দেশেই চলছে নানা প্রস্তুতি।
রাজধানীতে ২৩ পশুর হাট প্রস্তুত: পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় এবার কোরবানির পশুর হাট বসছে ২৩টি। এগুলোর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণে হাট থাকছে ১৪টি এবং ঢাকা উত্তরে ৯টি। হাটগুলোর ব্যাপারে টেন্ডার প্রক্রিয়াও প্রায় সম্পন্ন করে ফেলেছে দুই সিটি করপোরেশন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) হাটগুলোর মধ্যে রয়েছে: উত্তরা ১৫ ও ১৬ নম্বর সেক্টরের মধ্যবর্তী সেতুসংলগ্ন খালি জায়গা, খিলক্ষেত বনরূপা আবাসিক প্রকল্পের খালি জায়গা, মিরপুর সেকশন-৬, ওয়ার্ড-৬ ইস্টার্ন হাউজিংয়ে খালি জায়গা, ভাষানটেক বেনারশি পল্লী মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, বাড্ডা, আশিয়ান সিটি হাউজিং ও ভাটারা। এ ছাড়া গাবতলীতে রয়েছে একটি স্থায়ী হাট।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) হাটগুলোর মধ্যে রয়েছে: ঝিগাতলা হাজারীবাগ মাঠ, লালবাগের রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ, খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া হাট, ধোলাইখালের সাদেক হোসেন খোকা খেলার মাঠ, উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘের মাঠ, ধুপখোলার ইস্টএন্ড ক্লাব মাঠ, গোপীবাগ বালুর মাঠ, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা, লালবাগের মরহুম হাজি দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ, কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধ সংলগ্ন জায়গা, যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারের ভেতর, কমলাপুর স্টেডিয়ামের আশপাশের খালি জায়গা এবং শ্যামপুর বালুর মাঠ ও দনিয়া। এ ছাড়া রয়েছে সারুলিয়ায় একটি স্থায়ী হাট।

ডিএসসিসির এস্টেট বিভাগ জানিয়েছে, গোপীবাগ-কমলাপুর এবং কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন হাট এ বছর প্রথম দফার টেন্ডারে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছিলেন ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ। কিন্তু আইন অনুযায়ী কোনও কাউন্সিলর এ ধরনের টেন্ডারের যোগ্য না হওয়ায় তার ইজারা বাতিল করে অন্য একজনকে দেওয়া হয়েছে।

ডিএসসিসির হাটগুলোর মধ্যে কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন খালি জায়গা এবং যাত্রাবাড়ী কাচাবাজারের ভেতর এবারই প্রথম অস্থায়ী হাট বসছে। গত বছর পর্যন্ত শ্যামপুর ও দনিয়ার হাট দু’টি ইজারা দিত ঢাকা জেলা প্রশাসন। সম্প্রতি এলাকা দু’টি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনে চলে আসায় এবার সিটি করপোরেশনই হাট দুটি ইজারা দিচ্ছে।

চট্টগ্রাম: ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে কোরবানির পশুর হাট ইজারা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)।

করপোরেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতবারের মতো এবারো চট্টগ্রাম মহানগরীতে স্থায়ী দুটি পশুর হাটের পাশাপাশি অস্থায়ী ছয়টি হাটে কোরবানির পশু বেচাকেনা হবে। তবে এরমধ্যে কমল মহাজন হাট ও সল্ট গোলা রেলক্রসিংয়ে পশুর হাট বসা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
নগরীর সাগরিকা ও বিবির হাট স্থায়ী পশুর হাট ছাড়াও কর্ণফুলী পশু বাজার, স্টিল মিল পশুবাজার, পতেঙ্গা সিটি করপোরেশন উচ্চবিদ্যালয় মাঠ (কাটগড়) বাজার, পোস্তারপাড় স্কুল মাঠে পশুর বাজার বসছে এবার।

এ ব্যাপারে চসিকের এস্টেট শাখার সহকারী এস্টেট অফিসার এখলাস উদ্দিন আহমেদ বলেন, ছয়টি অস্থায়ী হাটের মধ্যে দুটি হাটের দ্বিতীয় দফা দরপত্র আহ্বান করেও কোনো ইজারাদার পাওয়া যায়নি। ফলে এ পশুর হাট দুটি নিয়ে একটু জটিলতা থেকে গেছে। এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দুএকদিনের মধ্যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। যদি কোনো ইজারাদার পাওয়া না যায় তাহলে এবারে এ বাজার দুটি বসবে না। কেননা ইজারা না হলে হাট দুটির বৈধতা থাকবে না।

চসিক সূত্র জানায়, কোরবানির পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। ঈদের দিনেই বর্জ্য অপসারণ শেষ করতে এবার করপোরেশনের নিয়মিত দুই হাজার কর্মচারীর পাশাপাশি আরও প্রায় দুই হাজার শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। ঈদের দিন সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত নির্ধারিত স্থানগুলো থেকে ২০০ গাড়ির মাধ্যমে তারা বর্জ্য সংগ্রহ করবে।

সূত্র আরও জানায়, চট্টগ্রামে কোরবানির অস্থায়ী পশুর হাট নিয়ে বিপাকে পড়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। দুটি অস্থায়ী পশুর হাটের জন্য দ্বিতীয় দফা দরপত্র আহ্বান করেও কোনো ইজারাদার পায়নি করপোরেশন। ইজারাদার না পাওয়া চসিকের অস্থায়ী বাজার দুটি হচ্ছে কমল মহাজন হাট ও সল্টগোলা রেলক্রসিং সংলগ্ন অস্থায়ী পশুর হাট। তবে অস্থায়ী অপর চারটি পশুর হাটের ইজারা এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

চার হাটের ইজারা দেয়া হয়েছে তিন কোটি ৬১ লাখ ৮১ হাজার টাকায়। সল্টগোলা রেলক্রসিং সংলগ্ন স্থানের জন্য তিনটি দরপত্র বিক্রি হলেও কমল মহাজন হাট পশু বাজারের জন্য একটি দরপত্রও বিক্রি হয়নি। এ ছাড়া সল্টগোলা রেল ক্রসিংয়ের জন্য তিনটি দরপত্র জমা হলেও কাক্সিক্ষত দর পায়নি চসিক। ফলে এ দুটি পশু বাজারের জন্য তৃতীয়বার দরপত্র আহ্বান করা হতে পারে বলে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে চাঁদ দেখাসাপেক্ষে আগামী ২৩ বা ২৪ আগস্ট থেকে হাটগুলোতে পশু বিক্রির কার্যক্রম শুরু হতে পারে।

চসিকের রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সল্টগোলা রেলক্রসিং পশুর হাটের জন্য তিনটি দরপত্র জমা হলেও তাতে কাক্সিক্ষত দর পায়নি চসিকের রাজস্ব বিভাগ। এই হাটের জন্য সর্বোচ্চ দর উঠেছে ২২ লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু রাজস্ব বিভাগের কাক্সিক্ষত দর ছিল ৪০ লাখ তিন হাজার ১৭৬ টাকা। অথচ গত বছর এ পশুর হাটের ইজারা দেয়া হয়েছিল ৪৪ লাখ ৪৪ হাজার ৪০০ টাকা।

খুলনা: ঈদুল আজহা উপলক্ষে খুলনা মহানগর ও জেলায় এবার ৩৩টি পশুর হাট বসবে। ইতোমধ্যে বটিয়াঘাটা উপজেলার বারোআড়িয়ায় ছাগলের হাট বসতে শুরু করেছে।

জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সূত্র জানান, ঈদুল আজহা উপলক্ষে পশুর হাটগুলোর মধ্যে রয়েছে- খুলনা মহানগরীর জোড়াগেট; ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়া, শাহাপুর, আঠারো মাইল, চুকনগর; পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী, গদাইপুর, কাছিকাটা, পাইকগাছা জিরোপয়েন্ট; দাকোপ উপজেলার বাজুয়া, চালনা; কয়রা উপজেলার দেউলিয়া, গোবিন্দপুর, কালনা, ঘুগরাকাঠি, মান্দারবাড়িয়া, হোগলা; ফুলতলা উপজেলা সদর; দিঘলিয়া উপজেলার এম এম মজিদ কলেজ মাঠ, জালাল উদ্দিন কলেজ মাঠ, পথেরবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়; তেরখাদা উপজেলার ইখড়ি কাটেঙ্গা; বটিয়াঘাটা উপজেলার বাইনতলা, খুটিরহাট, উপজেলা সদর, বারোআড়িয়া; রূপসা উপজেলার আমতলা, তালিমপুর ও পূর্ব রূপসা বাসস্ট্যান্ড।
পুলিশ প্রশাসনের সূত্র জানান, কোরবানির পশুবাহী ট্রাককে কোনোক্রমে পথের মাঝখানে আটকানো যাবে না। পশু ও ব্যাপারিদের নিরাপত্তার জন্য উল্লেখযোগ্য সড়কে পুলিশের টহল থাকবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গোয়েন্দা) সি এ হালিম পশুর হাটের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে বলেছেন, প্রত্যেক হাটে একজন অফিসারের নেতৃত্বে ৫/৬ জন পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। ক্ষেত্র বিশেষ বড় হাটের পাশের সড়কে পুলিশের টহল থাকবে।

কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. এনামুল হক এ প্রতিবেদককে জানান, এ মাসের শেষ দিকে আমাদী ও দেউলিয়া হাট সংলগ্ন এলাকায় মোটরসাইকেল যোগে পুলিশের টহল শুরু হবে।

কাস্টমস সূত্র জানিয়েছেন, নাভারণ করিডোর দিয়ে ভারত থেকে গরু আসা শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহ নাগাদ গরু আমদানির পরিমাণ বাড়বে। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সৈয়দ মো. আনোয়ার উল ইসলাম জানান, খুলনা মহানগরীসহ জেলার নয়টি উপজেলায় ১৬ হাজার ২৩৯টি গরু এবং ৯ হাজার ৭৮৩টি ছাগল মোটাতাজা করা হয়েছে। এ সব গবাদি পশুর মাংস স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের খুলনার উপ-ব্যবস্থাপক সোহেল নওরোজ জানান, নগরীর জোড়াগেট পশুর হাটে জালনোট প্রতিরোধে বিভিন্ন ব্যাংক ৩০টি বুথ স্থাপন করবে।

চাঁদপুর: কোরবানির ঈদ সামনে রেখে জমে উঠতে শুরু করেছে পশুর হাট। তবে ভারতীয় গরু আসায় দাম নিয়ে হতাশ চাঁদপুরের ব্যবসায়ীরা।
আর মোটামুটি লাভে বিক্রি করতে পারায় কিছুটা সন্তোষ মাগুরায়। হাটের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে, আইন শৃঙ্খলাবাহিনী। দোড়গড়ায় ঈদ, তাই খাটালগুলো এখন পরিপূর্ণ। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় জমতে শুরু করেছে স্থায়ী অস্থায়ী পশুর হাটগুলো। চাঁদপুর জেলায় এবার ১’শ ২৬ টি স্থানে গরুর হাট বসেছে।

তবে ভারতীয় গরু আমদানি বাড়ায় দাম নিয়ে হতাশ দেশি ব্যবসায়ীরা। তবে সব পশুরই দাম বেশীর অভিযোগ ক্রেতাদের। সড়কের পাশে যাতে হাট না বসে সেদিকে নজর রাখার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেন প্রশাসন।

বগুড়া: জেলায় কোরবানির পশুর হাট জমতে শুরু করেছে। ঈদের এখনো ৬ দিন বাকি থাকলেও ইতোমধ্যে পশুর হাটগুলোতে গরু আসতে শুরু করেছে।

ভারত থেকে গরু আসছে এমন সংবাদ পেয়ে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে থাকে বগুড়ার ৭৮টি হাটে। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্ত করিডোর দিয়ে গরু আসছে শুনে পশুর দাম কিছুটা ক্রেতার নাগালের মধ্যে এসেছে।

বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ শফিউজ্জামান জানান, বগুড়ায় কোরবানির পশুর কোন সংকট হবে না।
বগুড়াসহ এই অঞ্চলের ১৭টি হাটের ইজারাদার রতন মুখার্জি জানান, নওগাঁ জেলার সাপাহার সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু আসছে। সীমান্তে বিএসএফ ও বিজিবির সাথে সীমান্ত সমস্যা ছিল বলে গরু আসা বন্ধ ছিল। তা মিটে যাওয়ায় গত দু’দিন ধরে সাপাহারের ক্যাটল করিডোর দিয়ে প্রচুর কোরবানির পশু আসছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বগুড়া জেলায় মোট ১ হাজার ২৬১ জন খামারি আছেন। জেলার ১২টি উপজেলায় মোট ১৯ লাখ ৩৭ হাজার ২১৫টি গবাদি পশু রয়েছে। এর মধ্যে গরু ১২ লাখ ৮ হাজার ২৭৬টি, মহিষ ১৬ হাজার ৩৬৮টি, ছাগল/খাঁসি ৬ লাখ ১৪ হাজার ৮৩৬টি ও ভেড়া ৯৭ হাজার ৭৩৫টি। এসব গবাদি পশুর মধ্য থেকে আসন্ন ঈদুল আযহার জন্য খামারিরা মোট ৭৩ হাজার ৫৫১টি পশু দেশীয় পদ্ধতিতে মোটাতাজা করেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির গরু ৩৭ হাজার ১২২টি, মহিষ ৭২৬টি, ছাগল/খাসি ২৮ হাজার ৬৮৩টি ও ভেড়া ৭ হাজার ২০টি রয়েছে।

হাটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, মাঝারী আকারের গরুর চাহিদা বেশি থাকায় সেগুলোর দামও বেশি। পাশাপাশি বড় গরুর ক্রেতা কম হওয়ায় বড় গরুগুলোর দাম তুলনামূলক কম।

পাবনা: আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে পাবনায় জমে উঠতে শুরু করেছে কোরবানি পশুর হাট। এবার দেশি গরুর প্রতি চাহিদা বেশি দেখা যাচ্ছে ক্রেতাদের। দামও নাগালের মধ্যে থাকায় হাট ঘুরে কিনছেন পছন্দের পশুটি। আর এখন পর্যন্ত ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ থাকায় খুশি খামারি ও ব্যবসায়ীরা।

উত্তরবঙ্গের মধ্যে অন্যতম বড় পশুর হাট হিসেবে পরিচিত পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার অরণকোলা হাট। এছাড়াও পাবনা শহরতলীর আরিফপুর হাজিরহাট। যে হাটে প্রতিদিন বিক্রি হয় কয়েক কোটি টাকার পশু।

জেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তর দাবি করছে, জেলার উল্লেখ্যযোগ্য হাটগুলোতেই পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ভেটেরিনারি সার্জন বসানো হচ্ছে। যাতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই পশু ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ক্ষতির সন্মুখিন না হন।

জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের তথ্য মতে, এ বছর পাবনা জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা এক লাখ ৩২ হাজার। ইতোমধ্যে উৎপাদন আছে এক লাখ ৩৬ হাজার ৯২০টি। যা চাহিদার চেয়ে প্রায় পাঁচ হাজার বেশি। সেহেতু এই অঞ্চলে ভারতীয় বা বাইরে থেকে গরুর আমদানির প্রশ্নই আসছে না। স্থানীয় খামারি আর ব্যবসায়ীদের উৎপাদিত বা পালিত গরু দিয়েই কোরবানি পশুর চাহিদা মেটানো সম্ভব।

রাজশাহী: দেশি গরুতেই জমে উঠেছে রাজশাহী সিটি পশুর হাট । অল্প কিছু ভারতীয় গরুও উঠছে হাটে । তবে কোরবানির জন্য দেশি গরুরই চাহিদাই বেশি। অন্যদিকে ক্রেতা কম হওয়ায় দামটা বেশ কম বলছেন বিক্রেতারা। আর ক্রেতারা বলছেন, দামটা একটু বেশিই মনে হচ্ছে। রাজশাহী শহরের সিটি বাইপাস সড়কের পাশে অবস্থিত পশুর হাটই জেলার প্রধান হাট। এই হাটে সারা দেশের ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা আসেন। যদিও সপ্তাহে রোব ও বুধবার এই হাট বসে।

সরেজমিনে হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটের বেশির ভাগ গরুই দেশি। এর মধ্যে কিছু ভারতীয় গরু ও মহিষ রয়েছে। তবে দেশি গরুর চাহিদাই বেশি। একাধীক ব্যবসায়ীরা জানান, এবার কোরবানির জন্য গরুর মাংস ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা মণ আইডিয়াতে বেচা-কেনা চললেও ছোট গরু বিক্রি হচ্ছে ২০ হাজার টাকা মন দরে।

ভারতীয় গরু কম আসার বিষয়ে একজন ব্যবসায়ী বললেন, ভারতেই গরুর যে দাম পড়ে বাংলাদেশে আনার পর সরকারি কাগজ করা থেকে শুরু করে পুলিশ, বিজিবি, ঘাঁটিয়াল ইত্যাদি মিলে গরু প্রতি আরও প্রায় তিন হাজার টাকা খরচ বেশি পড়ে। খরচ বেশি পড়ায় ভারতীয় গরুর আমদানির ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কম। তাছাড়া দেশে পর্যপ্ত দেশি জাতের গরু রয়েছে। রাজশাহী সিটি হাট বেশ বড় হলেও হাটে মানুষকে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে কারন শহরের ভাগাড়ের বর্জ্য গলে হাটের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। পশু নিয়ে মানুষকে এর মধ্যে ছোটাছুটি করতে হচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: ঘনিয়ে আসছে ঈদুল আজহা। আর কোরাবানির পশু কেনার জন্য হাটমুখী হচ্ছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।

ইতোমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের হাটগুলোতে ক্রেতাদের ভিড়ে সরগরম হয়ে উঠেছে। জমে উঠেছে বেচা- কেনাও। যতদিন যাচ্ছে বাড়ছে ক্রেতাদের ভিড়ও। সাপ্তাহিক হাট ছাড়াও বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে বেচা কেনা হচ্ছে কোরবানির পশু। হাটে হাটে ভারতীয় গরুর উপস্থিতি থাকলেও দেশী গরুর পরিমাণই বেশি।

শিবগঞ্জ উপজেলার তর্তিপুর, আড়গাড়াহাট, খাসেরহাট, মনাকষা, নাচোলের সোনাইচ-ি, মলি¬কপুর, গোমস্তাপুরের রহনপুর, ভোলাহাটের গোহালবাড়ি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের বটতলাহাট ও রামচন্দ্রপুরহাট সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বটতলা হাটে ভারতীয় গরুর চাইতে দেশি গরুর সরবরাহ বেশি।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আনন্দ কুমার অধিকারী জানান, জেলায় এবার প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার কোরবানির জন্য চাহিদা রয়েছে। রোগাক্রান্ত গরু যাতে হাটগুলোতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ৫টি উপজেলায় ৮টি মেডিকেল টিম কাজ করবে।

এ জেলা থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন হাটের উদ্দেশ্যে গরু ভর্তি ট্রাক থেকে চাঁদা আদায়ের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়।

যশোর: এ বছর কোরবানির ঈদে যশোরে পশুর হাটগুলোতে ব্যাপক হারে দেশি গরু-ছাগল উঠানো হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় যোগান বেশি হওয়ায় গরু-ছাগলের দামও বেশ কম। ফলে ভারত থেকে তেমন গরু না আসলেও কোনও প্রভাবই পড়ছে না হাটগুলোতে। বরং, খামারি ও চাষিরা চাইছেন- এই অবস্থা যেন অব্যাহত থাকে।

যশোর সদরসহ আট উপজেলায় ১১টি স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে। আর ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন এলাকায় আরও ১০টি অস্থায়ী হাট গড়ে উঠেছে।
জেলা প্রাণি সম্পদ দফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে যশোর জেলায় প্রায় ৭০ হাজার গরু, ছাগল ও ভেড়া মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে গরুর সংখ্যা ৩৪ হাজার ১৭৯টি, ছাগল ৩৪ হাজার ২৭০ এবং ভেড়া ১ হাজার ৮০৮টি। এ বছর যশোরে চাহিদা ২৮ হাজার ২০০টি গরু এবং ছাগল ২৭ হাজার ৪০০টি।

এদিকে, সীমান্তবর্তী এ জেলার বিভিন্ন হাটে অল্প কিছু ভারতীয় গরুর দেখা মিলছে। এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন খামারিরা। তারা বলেছেন, ভারতীয় গরু আসলে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।

আক্তার হোসেন নামে এক খামারি বলেন, ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হওয়ায় দেশে গরু পালনে উৎসাহ বেড়েছে। প্রায় প্রতিটি কৃষক পরিবারে চার থেকে পাঁচটি করে গরু ঈদকে সামনে রেখে পালন করা হয়েছে। গরু যা পালন করা হয়েছে তাতে ঈদের চাহিদা মিটিয়েও আগামী ছয় মাস চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। তিনি অবিলম্বে ভারতীয় গরু আনা বন্ধের দাবি জানান।

যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ভবতোষ কান্তি সরকার বলেন, খামারিরা জেলার চাহিদা মেটানোর পর উদ্বৃত্ত আরও বেশি গরু-ছাগল পালন করেছেন। সেকারণে কোরবানিতে গরু-ছাগলের কোনও সঙ্কট দেখা দেবে না।

আজকের বাজার: আরআর/ ২৭ আগস্ট ২০১৭