প্রায় ৪৮ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের টাইম স্কেলের মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ

২০১৩-২০১৪ সালে জাতীয়করণ হওয়া দেশের ৪৮ হাজার ৭শ’ ২০ জন শিক্ষকের টাইম স্কেল সংক্রান্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠি বিষয়ে আনা রিট নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টকে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে একটি ভার্চুয়াল আপিল বিভাগ বেঞ্চ আজ এই আদেশ দেন। আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
আদাালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস। আদালতের আদেশের বিষয়টি বাসস’কে জানান শিক্ষকদের পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার মোকছেদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ২০২০ সালের ১২ আগস্ট বেসরকারি থেকে সরকারি হওয়া প্রাথমিক শিক্ষকদের ‘টাইম স্কেল’-এর সুবিধা ফেরত দেয়ার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় একটি পরিপত্র জারি করে। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সংক্ষুব্ধ শিক্ষকরা হাইকোর্টে রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিভাগ পরিপত্র স্থগিত করেন এবং বিষয়টি নিয়ে রুলও জারি করেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করেন।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত করেন। পরে ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার (ভ্যাকেন্ট) চেয়ে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়। আজ সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ তিন সপ্তাহের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগে রিট মামলাটি নিষ্পত্তি করতে বলেছেন।
এর আগে হাইকোর্টর স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও ৪৮ হাজার ৭শ’ ২০ জন শিক্ষকের টাইম স্কেল বাতিল করে অতিরিক্ত অর্থ ফেরত নেয়ার নির্দেশ বহাল রাখায় গত বছরের ২০ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের প্রতি আদালত অবমাননা প্রশ্নে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়।
৪৮ হাজার ৭শ’ ২০ জন শিক্ষকের পক্ষে নোটিশটি পাঠান সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সেলিনা আকতার।
নোটিশে বলা হয়েছে, ১৯৭৩ সালে প্রায় ৩৭ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ করা হয়। পরে ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি শিক্ষক মহাসমাবেশে ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ১ লাখ ৪ হাজার ৭শ’ ৭২ জন শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণ করা হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন কর্তৃপক্ষ অধিগ্রহণকৃত প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরি শর্তাদি নির্ধারণ বিধিমালা এসআরও নং-৩১৫ আইন ২০১৩ প্রণয়নপূর্বক গেজেট প্রকাশ করেন। এরপর থেকে ওই বিধিমালার ২ (গ) নং বিধিতে ৫০ শতাংশ বেসরকারি চাকরি কার্যকর ধরে শিক্ষকরা বেতন-ভাতা, টাইম স্কেল, জ্যেষ্ঠতা, পদোন্নতিসহ সব ধরনের সুবিধাদি ভোগ করে আসছেন। মূলত ওই গেজেটের আলোকেই শিক্ষকরা টাইম স্কেল পেয়ে আসছেন। অথচ এর মধ্যে গত ১২ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয় একটি আদেশ জারি করে। ওই আদেশের মাধ্যমে ৪৮ হাজার ৭শ’ ২০ জন শিক্ষকের ক্ষেত্রে টাইম স্কেল বাতিল করে অতিরিক্ত অর্থ ফেরত নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা আদেশটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ৩১ আগস্ট হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির পক্ষে সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও রাজশাহীর গাঙ্গোপাড়া বাগমারার প্রধান শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমানসহ অন্যান্য শিক্ষকরা বাদী হয়ে এ রিট দায়ের করেন।
গত ৩১ আগস্ট ওই রিটের শুনানি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আদেশটি ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। এই আদেশের অনুলিপি গত ৮ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়সহ মামলার সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের পাঠানো হয়। কিন্তু এরপরও গত ২৪ সেপ্টেম্বর হাইেেকার্টের স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে পুনরায় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ৪৮ হাজার ৭শ’ ২০ জন শিক্ষকের ক্ষেত্রে টাইম স্কেল বাতিল করে অতিরিক্ত অর্থ ফেরত নেয়ার জন্য মহাহিসাব নিয়ন্ত্রককে নির্দেশ দেয়া হয়।
পরে আদালতের রায় বাস্তবায়ন চেয়ে বিবাদীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিশ প্রেরণ করা হয়।