প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ১০০ দিন

ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে আলোচিত নাম। ধনকুবের থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার মতা গ্রহণের শততম দিন ছিল ২৯ এপ্রিল। তিন মাসেরও বেশি সময় কীভাবে কাটালেন বা তার সম্পর্ক বাইরের দুনিয়ার ভাবনাটা কেমন? এসব বিষয় নিয়ে একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা বিবিস। সেই ভিডিওর আঙিকে তৈরি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ স্লোগান নিয়ে যাত্রা শুরু হওয়ার পর রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক, সিরিয়ায় হামলা, চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক, উত্তর কোরিয়ার নীতি, সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ নিয়ে মেক্সিকোর সঙ্গে সম্পর্ক, মুসলিমদের প্রবেশে বাধা (যদিও আদালত আটকে দিয়েছেন) নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প ছিলেন আলোচনায়। নিচে ট্রাম্পের ওপর কয়েকজনের মন্তব্য দেওয়া হলো।

ট্রাম্প সম্পর্কে একজনের বক্তব্য এমন-আমার মনে হয় বিশ্ব এখন আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যে নির্বাচিত হয়েছেন, এ জন্য নয়। বিশ্ব এমনিতেই আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। যখন আমি কোনো মেট্রোরেলে চড়ে যাই, তখন আমার মনে হয় যেন খারাপ কিছু ঘটতে পারে। বিশ্ব এখন শতভাগ বেশি বিপজ্জনক জায়গা হয়ে উঠেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যখন বারাক ওবামার শাসনে ছিল, তখন হুমকি কমতে শুরু করেছিল। শেষ আট বছরে দেশটির নীতি শান্তির ওপর ভিত্তি করে চলেছে। কিন্তু যখনই হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প বসলেন, চারদিকে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-সমালোচনা শুরু হলো। সিরিয়া, ফিলিস্তিনে বোমার সংখ্যা বেড়ে গেল এবং যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব এসে গেল। তিনি (ট্রাম্প) যখন তাঁর নীতিতে আরও অনড় হলেন, তখন তা অশান্তি ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করল, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য। আপনারা ল করে থাকবেন যে উত্তর কোরিয়া নিয়ে মৌখিক যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। অনেকে মনে করছেন, তৃতীয় যুদ্ধ লেগে গেল বোধ হয়।

আরেকজন বলেন, ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ১০০ দিন হয়ে গেল। কিন্তু কে প্রেসিডেন্ট হলো, তা নিয়ে আমরা ভাবি না। সমস্যা হচ্ছে, তারা উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে শত্রুতামূলক নীতি বন্ধ করতে যাচ্ছে কি না এবং তারা আমাদের পুনরায় এক হওয়ার বিষয়ে সহায়তা করছে কি না। (ট্রাম্প) হলেন উসকানিদাতাদের প্রবক্তা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, তিনি একজন চটকদার লোক। যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ বলেছেন যে তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ায় তারা ভীতির মধ্যে, কারণ তিনি যুদ্ধ শুরু করতে পারেন। তিনি ইতিমধ্যেই কোরিয়ান সীমান্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। আমার মনে হয়, রাশিয়ার জন্য এটি বিপজ্জনক; কেননা প্রেসিডেন্ট ও রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি (ট্রাম্প) একজন মন্দ ব্যক্তি। একজন মন্দ রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি রাজনীতির সামান্য জ্ঞানই আছে তার,’ বলেন মস্কোর রুস্তম ম্যাগামেদভ।

ইসরায়েলের তেল আবিবের ড্যান মিরকিন বলেন,  ট্রাম্প যে পদপেগুলো গ্রহণ করেছেন, তা অনেক আগেই গ্রহণ করা উচিত ছিল এবং যদি এটি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠত, তবে তা কেবল ট্রাম্পের কারণে নয়। যদিও, তার কিছু বাধা আছে।

তেল আবিবের রায়া সওয়ারব্রুন বলেন, যদিও গর্জন করেও দেখা যায় যে কিছু কাজ চলছে। যদি এটি দীর্ঘদিন ধরে থাকে এবং টিকে যায়, তবে আমরা তা-ও জানি না।

সোমালিয়ার মোগাদিশুর মোহাম্মাদ শাইরের মন্তব্য, এটি নতুন পদপে হতে পারে; এটি নতুন কৌশলও হতে পারে। এখন আমাদের অপো করতে হবে। কিন্তু আমি মনে করি মার্কিন প্রশাসনের সোমালিয়ার ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে। একটি স্পষ্ট কৌশল নিয়ে সোমালিয়া সরকারের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে।

তেহরানের ইয়েদোলা সোবহানি, তীব্র আশা নিয়ে এসেছেন ট্রাম্প। রাশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও সিরিয়ার মতো কিছু বিষয়ে তাঁর অবস্থানের কারণে তিনি পিছিয়ে পড়তে থাকেন। তাঁর অসংগতিপূর্ণ কার্যকলাপ প্রমাণ করেছে যে তাঁকে খুব গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়।  এটা টিকবে কি না বা আরও সামরিক নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে কি না, এমন কোনো পূর্বাভাস আমরা দিতে পারি না। এর পাশাপাশি আমরা দেখতে পাচ্ছি যে উত্তর কোরিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে সামরিক উত্তেজনা বিরাজ করছে…এটা পরিষ্কারভাবে বলা যায় যে একটি বড় বিস্ফোরণ হতে যাচ্ছে এবং বিশ্বযুদ্ধও বেধে যেতে পারে।
মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটির জুয়ান পাবলো বোলানোসের ভাষ্য, ‘আমি মনে করি ব্যাপারটি উভয় পরে। সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের ব্যাপারে আমার স্পষ্টভাবে মনে হয়, তিনি (ট্রাম্প) সেটি করতে পারবেন না।

পিয়ংইয়ংয়ের রা সো ইয়োন বলেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর আমেরিকায় কোনো পরিবর্তন হয়নি। যদি আমাদের বিরুদ্ধে আমেরিকার আগ্রাসন বন্ধ না হয় এবং চাপ দেয়, তাহলে আমেরিকার ভালো কোনো চেহারা দেখতে পাই না; এটা শুধু খারাপের দিকে যাচ্ছে। আমেরিকা যা-ই করুক না কেন, এটা নিয়ে আমরা আশ্চর্য হই না এবং আমরা ট্রাম্পের কাছ থেকে আমরা কিছু আশাও করি না।

মস্কোর ইউরি বলেন, প্রকৃতপে কোনো কিছুরই পরিবর্তন হয়নি। রাশিয়া ও আমেরিকা সম্পর্কের মধ্য কোনোই পরিবর্তন হয়নি। তারা আমাদের বন্ধুও নয় শত্রুও নয়। ভৌগোলিক কারণে শত্রুতা, সম্ভবত এটিই।

বার্লিনের মার্গ্রেট মাচনার বলেন, এই মুহূর্তে আমার বিশ্বাসের জায়গাটি আগের চেয়ে অনেক কম। একজনের অনুভূতি এমন যে আমেরিকা একটি শক্তিশালী এবং নিরাপদ অংশীদারÑআমি আর এ কথা বিশ্বাস করি না।

তেল আবিবের ড্যান মিরকিন বলেন, আমার মনে হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের বীজ বানাচ্ছে, কারণ আমেরিকা নিজেই তার প্রেসিডেন্টের চেয়ে অনেক বেশি। প্রেসিডেন্ট কম বা কম হতে পারেন কিন্তু আমেরিকা একটি বেকন।

দামেস্কের মোহাম্মদ আলী বলেন, আমেরিকায় রিপাবলিকান বা ডেমোক্রেটিক একই। সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা আমাদেরই করতে হবে। তারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবে না। বরং তারা সার্বভৌম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালায়, যা সিরিয়ায় করছে। তারা একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র আরব লিগের সদস্যে রাষ্ট্রে বিমান হামলা চালায়।

মোগাদিসুর ডেকো সালাদ বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একসময় গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পইে ছিল। কিন্তু আজকাল, দৃষ্টিভঙ্গিতে বড় পরিবর্তন আমরা দেখি। কারণ আমরা দেখি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও বিভেদ বাড়াচ্ছেন। বিশেষ করে যখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার রার যে খ্যাতি ছিল, তা নষ্ট করেছেন তিনি।
আমরা কি ‘সত্য-উত্তর (পোস্ট-ট্রুথ)’ যুগে বাস করছি?

এ প্রশ্নের জবাবে তেলা আবিবের ডিয়ানে লালউজ বলেন, ‘আমি তা মনে করি না। কারণ আমরা ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত তথ্য-উপাত্ত পাচ্ছি। প্রকৃতপে গত কয়েক দশকে আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশি বেশি তথ্য পাচ্ছি। তবে খুব বেশি বাস্তব তথ্য পাই কি না, সেটি সমস্যা। লোকজন অর্ধসত্য বা অসত্যের ভিত্তিতে নিজের মতামতের জায়গা ঠিক করে ফেলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসলেই সত্য জানা অসম্ভব। এর কারণ কি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আমি তা মনে করি না? আমরা এখন যে সমাজে বাস করছি, আমি মনে করি ট্রাম্প এখানে শুধু ছবির অংশ মাত্র।

তেল আবিবের ড্যান মিরকিন, আমি মনে করি না আমরা যে তথ্য ব্যবহার করি, এতে এর কোনো প্রভাব আছে। তবে যেভাবে তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে, এতে অবশ্যই পরিবর্তন ঘটে। বিকল্প সত্যে, বিকল্প ঘটনা এখন নতুন উদ্ভাবন। তাই আমাদের পরিশোধন-নীতি প্রয়োগ করতে হবে।

ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে মাহমুউদ দ্রাঘেমা নেবুলাস বলেন, ‘বিশ্ব এখন সত্য থেকে অনেক দূরে। তা সত্ত্বেও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন খবর পৌঁছাতে সাহায্য করছে। কিন্তু আমার মনে হয়, সত্যের সঙ্গে একটু দূরত্ব আছে, এর কারণ গণমাধ্যম।

জবাবে বার্লিনের উটে হাবনার বলেন, আমি তাঁকে খুব সৎ মনে করি। ধারণার চেয়েও সৎ হিসেবেই পাই তাঁকে। তিনি বলেন, আমার মনে হয়, তাঁকে নিয়ে এত কথা বলা হয় এবং বলা হয় যে “সবকিছুই ভালো, বিস্ময়কর এবং সব ভালো”। আমরা জানি আসলে বাস্তবতা কী।

দামেস্কের ফাতমিহা বলেন, ট্রাম্পের কারণে আরব বিশ্বে সমস্যা বাড়ছে। এর প্রথম প্রমাণ হচ্ছে সিরিয়ায় হামলা। এতে সমস্যা ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারেননি, তিনি কেবল তা বাড়িয়ে তুলেছেন। নতুন কিছুই করেননি। তাঁর নীতি মানুষকে নিপীড়ন করা, বিশেষ করে আরবদের ওপর। আমরা নতুন কিছু দেখতে পাচ্ছি না।

ট্রাম্পের ব্যাপারে বেশি হতাশ হয়েছি, রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ অবস্থান থেকে সংঘর্ষে আকস্মিক পরিবর্তনে। আমি রাজনীতিবিদদের মাঝে এমন অস্থির আচরণ দেখতে চাই না।

তেহরানের পেয়াম মোসলেহর ভাষ্য, ট্রাম্পের মুসলিম নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ভয়ে আছি। ইতিহাস আমাদের শিা দিয়েছে, মানুষকে একে অন্যের থেকে আলাদা করে কেউ ভালো কিছু করতে পারেনি। বার্লিন বা আমেরিকায় দেয়াল কোনো ফল বয়ে আনবে না, এটা সর্বনাশা।

আজকের বাজার: আরআর/ ০২ মে ২০১৭