ফাওয়াদের সেঞ্চুরি ম্লান করে পাকিস্তানকে হারিয়ে শীর্ষে নিউজিল্যান্ড

বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান ফাওয়াদ আলমের সেঞ্চুরি ম্লান করে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে বক্সিং-ডে টেস্টে পাকিস্তানকে ১০১ রানের বড় ব্যবধানে হারালো স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। ফাওয়াদের ১০২ রানেও হার এড়াতে পারেনি পাকিস্তান। তবে এ এই জয়ে আইসিসি টেস্ট র‌্যাংকিংএ অস্ট্রেলিয়াকে হটিয়ে শীর্ষে উঠলো কেন উইলিয়ামসনের দল। ১১৭ রেটিং নিয়ে শীর্ষে এখন নিউজিল্যান্ড। ১১৬ রেটিং নিয়ে দ্বিতীয়স্থানে নেমে গেল অস্ট্রেলিয়া। ১১৪ রেটিং নিয়ে তৃতীয়স্থানে আছে ভারত।
সিরিজের প্রথম টেস্টটি জিততে ম্যাচের শেষ দিন নিউজিল্যান্ডের দরকার ছিলো ৭ উইকেট। আর পাকিস্তানের জিততে আরও ৩০২ রান করতে হতো। নিউজিল্যান্ডের ছুঁড়ে দেয়া ৩৭৩ রানের টার্গেটে চতুর্থ দিন শেষে ৩ উইকেটে ৭১ রান করেছিলো পাকিস্তান। আজহার আলী ৩৪ ও ফাওয়াদ আলম ২১ রানে অপরাজিত ছিলেন।
পঞ্চম দিনের নবম বলেই নিউজিল্যান্ডকে আনন্দে মাতিয়ে তুলেন পেসার ট্রেন্ট বোল্ট। আজ আর মাত্র ৪ রান যোগ করে ফিরেন আজহার। তার ১২০ বলের ৪টি চার ছিলো।
দলীয় ৭৫ রানে চতুর্থ উইকেট পতনের পর জুটি বাঁধেন ফাওয়াদ ও ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান। উইকেট ও পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে বড় জুটি গড়ার দিকে মনোযোগি হন তারা। মধ্যাহ্ন-বিরতি পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন থাকেন তারা। এমনকি চা-বিরতি পর্যন্ত আর কোন উইকেট পতন হতে দেননি ফাওয়াদ ও রিজওয়ান। ঐসময় পাকিস্তানের রান ছিলো ৯২ ওভারে ২১৫।
২১ রান নিয়ে দিন শুরু করা ফাওয়াদ পৌঁছে যান ৯৪ রানে। রিজওয়ান ৪৫ রানে ছিলেন। ফাওয়াদের সেঞ্চুরির অপেক্ষায় থেকে চা-বিরতিতে যায় পাকিস্তান।
বিরতি থেকে ফিরে ইনিংসে ৯৮তম ওভারের প্রথম ও নিজের মুখোমুখি হওয়া ২৩৬তম বলে নিউজিল্যান্ডের পেসার নিল ওয়াগনারকে বাউন্ডারি মেওে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ টেস্ট ম্যাচে দ্বিতীয় সেঞ্চুরির স্বাদ পান বাঁ-হাতি ফাওয়াদ। ২০০৯ সালে টেস্ট অভিষেকের পর এখন পর্যন্ত মাত্র ৬টি টেস্ট খেলেছেন তিনি। কলম্বোয় শ্রীলংকার বিপক্ষে অভিষেক টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করে ১৬৮ রানে আউট হয়েছিলেন ফাওয়াদ। পঞ্চম উইকেটে ফাওয়াদ-রিজওয়ান ১৬৫ রান যোগ করেন।
ফাওয়াদের সেঞ্চুরি ও রিজওয়ানের হাফ-সেঞ্চুরিতে ভালোভাবেই রানের চাকা ঘুড়ছিলো পাকিস্তানের। ফলে ম্যাচের লড়াইয়ে দারুনভাবে টিকে ছিলো পাকিস্তান। ড্র বা জয়ের স্বপ্নও দেখছিলো তারা।
তবে মাত্র ২ রান ও ২০ বলের ব্যবধানে ফাওয়াদ ও রিজওয়ানকে হারায় পাকিস্তান। দলীয় ২৪০ রানে রিজওয়ানকে থামান নিউজিল্যান্ডের পেসার কাইল জেমিসন। লেগ বিফোর হবার আগে ১৯১ বলে ৬টি চার মারেন রিজওয়ান।
আর ফাওয়াদকে তুলে নেন ওয়াগনার। ২৬৯ বল খেলে ১৪টি চার মারেন ৩৫ বছর বয়সী ফাওয়াদ। দলীয় ২৪২ রানে ফাওয়াদের আউটের পর পাকিস্তানের ভরসা ছিলেন ফাহিম আশরাফ। প্রথম ৯১ রান করে পাকিস্তানকে ফলো-অনের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন তিনি। কিন্তু এই ইনিংসে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি ফাহিম। ওয়াগনারের দ্বিতীয় শিকার হন তিনি।
আর রানের খাতা খোলার আগেই ইয়াসির শাহকে ফিরিয়ে দেন জেমিসন। ১ রান করে নিউজিল্যান্ডের স্পিনার মিচেল স্যান্টারের বলে আউট হন মোহাম্মদ আব্বাস। ফলে ২৬১ রানে নবম উইকেট হারিয়ে ম্যাচ হারের পথে ছিটকে পড়ে পাকিস্তান। তখনও দিনের খেলার ৬৮ বল বাকী ছিলো।
তাই ম্যাচ ড্র করতে শেষ উইকেটে ৬৮ বল অবিচ্ছিন্ন থাকতে হতো পাকিস্তানের শাহিন আফ্রিদি ও নাসিম শাহকে। দু’জনে দারুন দক্ষতার সাথে নিউজিল্যান্ডের বোলারদের খেলছিলেন। অপরদিকে, দু’প্রান্ত দিয়ে বোলার পরিবর্তন করে শেষ উইকেট তুলে নেয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছিলেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন।
অবশেষে ১২৩তম ওভারের তৃতীয় বলে নাসিমের বিদায় ঘন্টা বাজান স্যান্টনার। নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নিয়ে ২৭১ রানে পাকিস্তানের শেষ উইকেট তুলে নেন তিনি। ৪৭ বল খেলে ১০ রানের জুটি গড়েও পাকিস্তানের হার রুখতে পারেননি আফ্রিদি ও নাসিম। ২৪ বলে ১ রান করেন নাসিম। ৩০ বলে ৮ রানে অপরাজিত থাকেন আফ্রিদি। নিউজিল্যান্ডের সাউদি-বোল্ট-জেমিসন-ওয়াগনার-স্যান্টনার ২টি করে উইকেট নেন।
ম্যাচ সেরা হয়েছেন নিউজিল্যান্ডের উইলিয়ামসন। আগামী ৩ জানুয়ারি ক্রাইস্টচার্চে শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (টস- পাকিস্তান) :
নিউজিল্যান্ড : ৪৩১ ও ১৮০/৫ডি, ৪৫.৩ ওভার (ব্লানডেল ৬৪, লাথাম ৫৩, নাসিম ৩/৫৫)।
পাকিস্তান : ২৩৯ ও ২৭১/১০, ১২৩.৩ ওভার (ফাওয়াদ ১০২, রিজওয়ান ৬০, সাউদি ২/৩৩)।
ফল : নিউজিল্যান্ড ১০১ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : কেন উইলিয়ামসন (নিউজিল্যান্ড)।
সিরিজ : দুই ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল নিউজিল্যান্ড।