ফেসবুক বন্ধের প্রশ্নই আসে না : তারানা হালিম

সরকার গভীর রাতে ফেসবুক বন্ধের চিন্তা করছে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবর সঠিক নয় দাবি করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। তিনি বলেছেন, ‘ফেসবুক বন্ধ করার প্রশ্নই আসে না।’ সচিবালয়ে মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) ফেসবুক সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘এটি সুদৃঢ়ভাবে বলে দিতে চাই ফেসবুক কোনো ঘণ্টার জন্যই বন্ধ হচ্ছে না। বন্ধ করার প্রশ্নই আসে না। ফেসবুক বন্ধ করার বিষয়ে কোনো সরকারি সিদ্ধান্ত কখনোই গ্রহণ করা হয়নি। বন্ধ করার বিষয়টি কখনো বিবেচিতও হয়নি।’

তারানা হালিম আরো বলেছেন, ‘তবে যে সংবাদ দেখেছি তাতে আমরা কিছুটা আহত হয়েছি এ কারণে যে কোথাও লেখা নেই যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এরকম একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। কিন্তু এর ভিত্তিতে অনেক আলোচনা-সমালোচনা, ভবিষ্যৎবাণী অনেক কিছু হয়েছে।’

টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী আরো বলেছেন, ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলনে জেলা প্রশাসকরা শঙ্কা ব্যক্ত করেছিলেন এবং উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা বলেছিলেন, কোমলমতি শিশুরা রাতের বেলা ফেসবুকে থাকে; এজন্য লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আমাদের কাছে মন্তব্যসহ একটি প্রতিবেদন চাওয়া হয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সুস্পষ্টভাবে মৌখিকভাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে জানিয়ে দিয়েছে, বিটিআরসিকেও জানানো হয়েছে, কোনো ঘণ্টার জন্য ফেসবুক বন্ধ হচ্ছে না। বন্ধ করা সমীচীন হবে না। এতে মানুষ বিরক্ত হবে, এটি একটি কারণ।’

ফেসবুক বন্ধ না করার দ্বিতীয় কারণ হিসেবে তারানা হালিম বলেছেন, ‘আমাদের দেশে যখন দিন অন্য দেশে রাত, অন্য দেশে যখন রাত আমাদের দেশে দিন। এই সময়ের পার্থক্যের কারণে অনেক ব্যবসায়ী আছেন যাদের রাতে ফেসবুক ব্যবহার করতে হয়। আমাদের তরুণ উদ্যোক্তারা আছেন, ই-কমার্স ব্যবহার করেন।’

বর্তমানে দেশে আড়াই কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারী রয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তারানা হালিম। প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে এবং টেকনিক্যাল বিষয় বিবেচনা করে ফেসবুক কখনো বন্ধ হচ্ছে না, করা সম্ভব নয় এবং আমরা করছি না।’

বিটিআরসিও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে জানিয়ে তারানা হালিম বলেছেন, ‘ফেসবুক কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ করা সম্ভব নয়; আমাদের এ মন্তব্যসহ চিঠি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আমরা পাঠিয়ে দিচ্ছি।’

তিনি বলেছেন, ‘শিশু-কিশোরদের ফেসবুক আসক্তি নিয়ে অভিভাবকদের শঙ্কা আছে। এজন্য আমরা বলেছি অভিভাবকদের ফেসবুকে প্যারেন্টাল কন্ট্রোলসহ কিছু সিকিউরিটি ও প্রাইভেসি ফিচার, এটা তারা ব্যবহার করতে পারেন।’

এ বিষয়ে তিনি আরো বলেছেন, ‘ফেসবুকের ইতিবাচক ব্যবহার নিয়ে আমরা স্কুলের বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। বিষয়টিকে আমরা সামাজিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি হিসেবে শুরু করব- এ ধরণের মন্তব্য সহ চিঠি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এমন কোনো কিছু এ সরকার করবে না, যা ডিজিটাল সরকারের মূল চেতনাকে আঘাত করে বা আহত করে বা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে।’

রাতে শুধু শিশুরা নন, প্রাপ্ত বয়স্করাও ফেসবুক ব্যবহার করেন জানিয়ে তারানা হালিম বলেছেন, ‘তাই সচেতনতাটাই হচ্ছে মূল জিনিস। সচেতন করতে হবে মানুষকে। ফেসবুসহ সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ইতিবাচক ব্যবহারে আপামর জনগোষ্ঠীকে উৎসাহিত করতে চাই।’

এর আগেও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ডিসিদের ফেসবুক বন্ধের সুপারিশের বিষয়ে মতামত চেয়ে টেলিযোগাযোগ বিভাগকে চিঠি দিয়েছিল বলে জানিয়েছেন টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী।

সিঙ্গাপুর সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘ফেসবুকের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। অনেক ইতিবাচক সারা পেয়েছি। সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানাবো আরও দু’দিন পর।’

এ সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার উপস্থিত ছিলেন।