ফ্রান্সের বিপক্ষে আপসেট ঘটিয়েও নকআউট পর্বে উঠতে পারল না তিউনিশিয়া

প্রথম দুই ম্যাচ জয়ের মাধ্যমে আগেই শেষ ষোল নিশ্চিত করে নিয়েছিল ফ্রান্স। তবে আজ নিয়ম রক্ষার ম্যাচে তিউনিশিয়ার কাছে ১-০ গোলে হেরে গেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। গ্রুপের অপর ম্যাচে ডেনমার্কের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া ১-০ গোলে জয়লাভ করায় হারের পরও গ্রুপ সেরা হিসেবে শেষ ষোলতে উন্নীত হয়েছে দিদিয়ের দেশ্যমের ফ্রান্স। এদিকে নক আউট নিশ্চিতের জন্য জয় ছাড়া কোন বিকল্প পথ খোলা ছিলনা তিউনিশিয়ার সামনে। শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করার পরও অবশ্য নক আউট পর্বে খেলার সুযোগ হলোনা তিউনিশিয়ার। ডেনমার্ককে হারানো অস্ট্রেলিয়া গ্রুপ রানারআপ হিসেবে নিশ্চিত করেছে শেষ ষোল।
তবে একটি ধারাবাহিকতা ঠিকই রক্ষ করেছে তারা। আর সেটি হলো বিশ^কাপে গোল। বিশ্বকাপে সব সময় গোল করে থাকে তিউনিশিয়া। এর আগে পাঁচটা বিশ্বকাপ ১৯৭৮, ১৯৯৮, ২০০২, ২০০৬ এবং ২০১৮ আসরে গোল করেছে তারা। দোহার এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে আজকের মাস্ট উইন ম্যাচেও ফ্রান্সের বিপক্ষে আপসেট জয়ে সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছে তারা। তিউনিশিয়ার হয়ে জয়সুচক একমাত্র গোলটি করেছেন ওয়াহবি খাজরি।
ম্যাচের শুরুতেই  ৮ম মিনিটেই আক্রমনে যায় তিউনিসিয়া। বাঁ প্রান্ত দিয়ে ফ্রি কিক থেকে খাজরির ক্রস লাফ দিয়ে ডান পায়ে গোল করেন ডিফেন্ডার নাদের ঘানদ্রি। তবে অফসাইডের কারণে গোলটি বাতিল হয়।
এরপর ১৫ তম মিনিটে প্রথম আক্রমণ রচনা করে ফ্রান্স, পেয়ে যায় কর্নার। কর্নার থেকে মাত্তেও গুয়েনডোজি  শট নিলে সেটি তিউনিসিয়ার রক্ষণভাগে বাঁধা পেয়ে ফের মাঠের বাইরে চলে যায়। দ্বিতীয় কর্নার থেকে অবশ্য খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি বিশ^ চ্যাম্পিয়নরা।
পরক্ষণেই ছোট ডি বক্সে বল নিয়ে ঢুকেই ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যান তিউনেশিয়ার আনিস বেন সিলমানে, ফলে সহজ সুযোগ পেয়েও গোল করতে পারেননি। ২৫ মিনিটে দারুন এক প্রতি আক্রমণে যায় ফ্রান্স। ডিফেন্স থেকে মিডফিল্ডার ইউসুফ ফোফানের বাড়িয়ে দেয়া ক্রস থেকে ডি বক্সে বল পেয়ে যান কিংসলে কোম্যান। কিন্তু  চলন্ত বলটি তিনি জালে না মেরে বাইরে পাঠিয়ে দেন  দেন।
৩০ মিনিটের তিউনিসিয়ার ওয়াজদি কেচিরদা ডি বক্স  থেকেই বল তুলে দিলে ক্রসের বল দারুন দক্ষতায় নিচু হয়ে হেড নেন বেন সিলমানে। বলটি পোস্টে ঢুকার মুহুর্তে  গ্রীবে ভরে নেন ফ্রান্সের গোলরক্ষক স্টিভ মান্দান্দা।
এরপর ৩৪ মিনিটে তিউনিসিয়ার আইকন খাজরি ডি বক্সের বেশ কিছুটা বাইরে থেকে আচমকা এক শট নেন। তার বাঁ পায়ের বুলেট গতির শটটি ফিস্ট করেন ফ্রান্সের গোল রক্ষক মান্দান্দা। ৪২ মিনিটে মধ্যমাঠ থেকে সিলমানে বল নিয়ে বুদ্ধিমত্তার সাথে এগিয়ে দেন খাজরির কাছে।  তিনি ডান প্রান্ত দিয়ে ফরাসি বক্সের ভেতর থেকে আড়াআড়ি ক্রস করলেও দলীয় কোন খেলোয়াড় না থাকায় সেটি ক্লিয়ার করে ফ্রান্সের ডিফেন্ডাররা।
বিরিতর আগমুহুর্তেও দুই দল আক্রমন ও পাল্টা আক্রমন চালালেও গোল করতে পারেনি কোন পক্ষ। ফলে গোর শুন্য ড্রয়ে বিরতিতে যায় তারা।
বিরতি থেকে ফিরে আক্রমনে ধার বাড়িয়ে দেয় তিউনিশিয়া। খাজরির নেতৃত্বে একের পর এক আক্রমনে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে লেস ব্লুজদের। শেষ পর্যন্ত গোলখরা দূর করেন খাজরি। ম্যাচের ৫৮ মিনিটে মধ্যমাঠে আইসা লেইডুনির কাছ থেকে বল পেয়ে দ্রুত গতিতে ফরাসি সিমানায় ঢুকে পড়েন তিনি। এই সময় তাকে প্রতিহত করতে আসা ফ্রান্সের তিন ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে তাদের মাঝখান দিয়েই ডান পায়ের প্লেসিং শটে গোল করেন তিনি (১-০)। এই সময় কিছুটা আহত মনে হয়েছে তাকে। ফলে গোলের পরপরই মাঠ ছাড়েন তিউনিশিয় আইকন।
এদিকে গোল হজমের পর কিলিয়ান এমবাপ্পেকে বদলী হিসেবে মাঠে নামিয়ে ফ্রান্সের শক্তি বৃদ্ধি করেন কোচ দেশ্যম। এরপর কিছুটা কোনঠাসা হয়ে পড়ে তিউনিশিয়া।  একের পর এক আক্রমন চালিয়ে গেলেও তাদের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়ান তিউনিশিয়ার গোল রক্ষক আয়মেন ডাহমেন। এমবাপ্পের অন্তত দুটি শট ফিরিয়ে দেন তিনি। তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি। আট মিনিটের ইনজুরি টাইমের শেষ মিনিটে তিউনিশিয়ার গোলপোস্টের সামনে সৃস্ট জটলা থেকে আঁতোয়ান গ্রিজম্যান দুর্দান্ত এক শটে গোল করেন। মুহুর্তেই জেগে উঠে ফরাসি শিবির। কিন্তু থামতেও সময় নেয়নি।  ভিএআর প্রযুক্তিতে দেখা যায় বল পাবার আগে অফসাইডে ছিলেন গ্রিজম্যান। ফলে গোলটি বাতিল করেন কর্তব্যরত নিউজিল্যান্ডের রেফারি। এতেই বিশ^ চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে অপ্রত্যাশিত  জয় পায় তিউনিশিয়া।
ফ্রান্সের পাশাপাশি গ্রুপ ডি’র রানার আপ হিসেবে বিশ^কাপের নকআউট পর্ব নিশ্চিত করেছে অস্ট্রেলিয়া।