বগুড়ায় ৩০০ কোটি টাকার মরিচ উৎপাদনের আশাবাদ

জেলার যমুনার চরাঞ্চলের পাকা শুকনা মরিচ মানে সোনার ফসল। বগুড়ার মরিচের খ্যাতি দেশ জোড়া। যমুনার চরাঞ্চলে এখন চলছে শুকনা মরিচ উত্তোলন, বাছাই উৎসবে মেতে উঠেছে শত-শত নারী শ্রমিকের বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে।
এবার কয়েক দফা বন্যায় যমুনার চরাঞ্চলের মানুষের ক্ষতি হলেও বন্যায় পলি পড়া চরে আবার মরিচেই ভাগ্য ফিরে দিয়েছে। রবি মৌসুমে জেলায় ৩০০ কোটি টাকার মরিচ (কাঁচা-পাকা) উৎপাদনের আশাবাদ কৃষি কর্মকর্তাদের।
জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচারক শাহাদুজ্জামান জানান, শুধুমাত্র সারিয়াকান্দির যমুনার চরে ১৫০ কোটি টাকার উপরে শুকনা মরিচ কেনা-বেচা হবে। মরিচ সংগ্রহের জন্য দেশের নামকরা স্কায়ার, প্রাণ, বিডি ফুডসসহ অনেক ফুড প্রোসেসিং কোম্পানি মরিচ কেনার জন্য ভীঁড় করছে।
এখন রবি মৌসুমের মরিচ গাছ থেকে উঠানো প্রায় শেষ পর্যায়ে। সারিয়াকান্দিতে যমুনার চরের কৃষকের উঠান, বাড়ির চালা মরিচে লাল হয়ে গেছে। বর্ষার আগে মরিচ শুকাতে না পারলে মরিচের রঙ নষ্ট হয়ে যাবে। পাকা মরিচ শুকিয়ে এমন ভাবে সংরক্ষিত হয় যে যাতে বস্তা বা মাটির বড়-বড় পাত্রে এমনভাবে রাখা হয় যেন মরিচের গায়ে বাতাস স্পর্শ করতে না পারে। তবে এই মরিচ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন ফুড প্রসেসিং কোম্পানির পক্ষ শুকনা মরিচ সংগ্রহের জন্য থেকে স্থায়ীভাবে সারিয়াকান্দিতে আড়ৎ তৈরী করেছে। সেখানে তারা এমনভাবে আড়ৎ তৈরী করেছে যাতে কোন মতে শুকনা মরিচে বাতাস লাগতে না পারে। এখন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে মরিচ শুকাতে বাছাই কাজে শত-শত নারী শ্রমিকদের কাজে লাগিয়েছে। ফুড প্রসেসিং কোম্পানিগুলো তাদের দিন মজুরী হিসেবে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দিয়ে থাকেন বলে জানান সারিযাকান্দি উপজলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ আব্দুল হালিম।
মরিচ উৎপাদন এবার আবহাওয়া ছিল অনুকুল। তা ছাড়া বন্যার পর চরের জমিতে পলি পড়ায় খুব একটা সারের প্রয়োজন পড়ে না। সাধারনত: চরে মরিচ উৎপাদনে সামান্য কিছু টিএসপি, ডিএপিসারের প্রয়োজন পড়ে। বিঘা প্রতি মরিচ উৎপাদনে খরচ পড়ে ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি এবার মরিচের ফলন (শুকনা আকারের) হয়েছে ৮ থেকে ৯ মন। এখন প্রতি মন মরিচ বিত্রিু হচ্ছে ৬ থেকে ৯ হাজার টাকা পাইকারীতে। এতে কৃষকের বিঘা প্রতি লাভ থাকে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। মরিচের মান যত ভাল হবে ততোই লাভবান হবে কৃষক।
সারিয়াকান্দির বোহাইল ইউনিয়নের মরিচ চাষী মোসলেম জানান, এবার কয়েক দফা বন্যায় বেশ কিছু মরিচের গাছ নষ্ট হয়েছে। তবুও সরকারি সহায়তায় তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
উপ-পরিচালক শাহাদুজ্জামান জানান, উৎপাদনের সিংহ ভাগ রবি মৌসুমের মরিচ বগুড়ার উৎপাদন হয়ে থাকে জেলার যমুনার সারিয়াকান্দি উপজেলার চর থেকে। রবি মৌসুমে জেলায় এবার ৭ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। কাঁচা ও পাকা মিলে জেলায় এবার সাড়ে ১৬ টন মরিচ উৎপাদন হয়েছে। এর ৭০ শতংশ কাঁচা মরিচ মানুষ রান্নার কাজে ব্যবহার করে। প্রায় ১৫০০ হেক্টর জমির মরিচ শুকনা আকারে বেচা কেনা হয়ে থাকে। বিলম্বে বন্যার কারনে অল্প জমিতে মরিচ চাষ হতে পারেনি। কিন্তু রবি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুল থাকায় পাকা মরিচ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে এমন তথ্য দিলেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরেরর সহকারি কৃষি অফিসার ফরিদ উদ্দিন। রবি মরিচের পর এখন বর্ষাকালীন খরিপ-২ মরিচের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে কৃষক।