বন্ধ সিটিং সার্ভিসে নারী ও শিশুর চরম ভোগান্তি

রাজধানীতে চলাচল করা বাসে সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্তে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে। গণপরিবহনের চাপে যে নগরিতে দম ফেলা দায় সে নগরীর রাজপথ অনেকটা ফাঁকা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও মিলছে না বাসের দেখা। যাত্রীদের অভিযোগ, আগের মতো অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের জন্য যাত্রীদের জিম্মি করতেই না বলে বাস বন্ধ রাখা হয়েছে।  বিশেষ করে অফিস সময়ে যাত্রীরা দীর্ঘ সময় অপোর পর গাড়ির দেখা পেলেও জীবন বাজি রেখে উঠতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ছেন।
রাজধানীতে গণপরিবহনের যাত্রী  নারী এবং শিশুরাই ভোগান্তির শিকার হচ্ছে বেশি। নারীদের অভিযোগ পুরুষের মত ধাক্কাধাক্কি করে বাসে উঠতে না পারায় তারা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে উঠতে পারছেন না। ভেতরে  প্রচন্ড ভিড় কারণে আর বাস আসার পর উঠতে গিয়ে হুড়োহুড়িতে সঙ্গে থাকা শিশুদের নিয়ে ওঠা যাচ্ছে না ।

সরেজমিনে রাজধানীর কয়েকটি মোড় ঘুরে দেখা গেছে, বাসের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছেন নারীরা। বাস আসলেও অনেকেই উঠতে পারছে না।
রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে দীর্ঘ সময় ধরে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী জান্নাতুন নাঈম। কয়েকটি বাস তার সামনে দিয়ে পার হয়ে গেল, অনেকবার ওঠার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন।  জান্নাতুন নাঈম আজকের বাজারকে বলেন, কাস শেষ করে দাঁড়িয়ে আছি বাসের জন্য। কয়েকটা বাস চলে গেল কিন্তু উঠতেই পারছি না। এতো ভিড়! বাসগুলো আগে থেকেই ভরা থাকছে। আর শাহবাগ মোড়ে আসামাত্রই পুরুষরা হুমড়ি খেয়ে  উঠছে। আমি তো আর ঠেলাঠেলি করে উঠতে পারি না। তাই অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি।
একই জায়গায় শিশু সন্তান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন দিলরুবা খাতুন। তিনি যাবেন মহাখালি। শাহবাগে এসেছিলেন বাচ্চাকে ডাক্তার দেখাতে। তিনিও অনেক সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছেন বাসের জন্য। কিন্তু উঠতে পারছেন না। দিলরুবা খাতুন আজকের বাজারকে বলেন, অনেক সময় দাঁড়িয়ে আছি। গাড়িই নাই। অনেক পরে পরে আসছে। লোকের ভিড়ে বাচ্চাকে নিয়ে উঠতেই পারছি না। অসুস্থ বাচ্চাকে নিয়ে এই ভিড়ের মধ্যে কীভাবে উঠি।
সকালে অফিস যাবার জন্য মগবাজার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে নিলুফা আক্তার। তিনি আজকের বাজারকে বলেন, আগেই ভালো ছিল। ভাড়া একটু বেশি নিত। তবে বাসের জন্য এতো অপেক্ষা করতে হতো না। আর ঠেলাঠেলিও করতে হতো না। আরামেই যেতে পারতাম। সরকারের এই সিটিং তুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের পরে থেকেই বাস মালিকরা ইচ্ছে করে রাস্তায় বাস কম নামিয়ে জনগণকে কষ্ট দিচ্ছে।

বাংলামটর থেকে মতিঝিলের উদ্দেশ্যে বিকল্প পরিবহনের একটি বাসে উঠলে দেখা যায়, গাড়িতে পা রাখার জায়গা নেই। নারী-পুরুষ একে অন্যের সাথে গাঁ ঘেসে দাঁড়িয়ে আছে। বাসের ভাড়া নিয়ে প্রতিটি যাত্রীর সাথেই বাসের স্টাফদের সাথে বাকবিতন্ডা চলছে। গরমে  যাত্রীদের  নাকাল অবস্থা । গাড়ির স্টাফদের ফ্যান ছাড়তে বললে তারা বলে, লোকাল গাড়িতে আবার ফ্যান কিসের। ফ্যান নষ্ট।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী আজকের বাজারকে বলেন, আমরা আগেও ল করেছি পরিবহন সেক্টরে যখনই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয় এবং যাত্রীবান্ধব কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তখনই কতিপয় মুনাফালোভী মানুষ যাত্রীবান্ধব প্রক্রিয়াগুলোকে  বাধা দিতে তারা উঠেপড়ে লাগে।  আজও কিছু পরিবহন মালিক বাস বন্ধ রেখে যাত্রীদের জিম্মি  করে তাদের স্বার্থ আদায় করতে চাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গণপরিবহনে যাত্রী ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য থামাতে গত ৪ এপ্রিল ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি ঘোষণা দেয়, ১৫ এপ্রিল থেকে ঢাকায় সিটিং সার্ভিস কিংবা গেট লক সার্ভিস চলতে পারবে না। এ ঘোষণা কার্যকর করা হয় ১৬ এপ্রিল থেকে।

আজকের বাজার রিপোর্ট: এঅআর/ডিএইচ/আরআর/১৮.০৪.২০১৭