ববিতার চোখের আলো জ্বালাতে

পড়াশুনার পাশাপাশি বাড়িতে উপার্জনক্ষম লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে উঠেছিল ববিতা। কিন্তু হঠাৎ করেই ববিতার চোখের আলো নিভে গেছে। চোখের এ আলো জ্বালাতে তৎপর হয়েছে নাটোরের জেলা প্রশাসন।

শহরতলীর মাঝপাড়া দিঘাপতিয়াতে শ্রমজীবী বাবা আর ভাই এবং গৃহিনী মাকে নিয়ে আর্থিক টানাপোড়েনের সংসার ছিল ববিতার। সংকট কাটাতে পড়াশুনা করে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ছিলো ববিতার। তাই এসএসসি শেষে দিঘাপতিয়া এম কে অনার্স কলেজে চলছিল উচ্চ মাধ্যমিক। সংসার খরচের টাকা যোগান দিতে হিমশিম খাওয়া বাবা আর ভাইয়ের পাশে দাঁড়ায় ববিতা। স্থানীয় উত্তরা কেজি একাডেমিতে ক্যাশ সেকশনে কাজ করে আর বাড়িতে করে সেলাইয়ের কাজ। কিন্তু কোথা থেকে কি যেন হয়ে গেল। মাথা ব্যথার তীব্রতা বাড়তে থাকে আর কমতে থাকে চোখের আলো। সিটি স্ক্যানে জানা যায়, তাঁর ব্রেন টিউমার। টিউমার বাড়তে বাড়তে মস্তিষ্কের দৃষ্টি শক্তির স্নায়ুতন্ত্রকে অকেজো করে ফেলেছে। এক সময় দৃষ্টি শক্তি পুরোপুরি হারিয়ে ফেলে ববিতা। সিনেমার মত ঘটনা, ঘটে গেছে বাস্তবে।

সংসারের বোঝা টানতে টানতে এখন ববিতা নিজেই যেন বোঝা। অন্ধের তো আর কাজ করার সক্ষমতা নেই, নেই উপার্জন। কিন্তু থেমে যায়নি ববিতা। চোখের আলো না থাকলেও মনের আলো জ্বেলে, অদম্য ইচ্ছেগুলোকে শক্তিতে পরিণত করেছে সে। শ্রুতি সহায়কের সহযোগিতা নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিল ২০২১ এর এইচএসসি। ফলাফল জিপিএ সাড়ে চারের কাছাকাছি।

ববিতার ভাই জাকির জানান, মাথা ব্যথার কারণ জানতে সিটি স্ক্যান করা, পরীক্ষায় শ্রুতি সহায়কের ব্যবস্থা করা, কলেজে শিক্ষকমন্ডলী আর সহপাঠীদের সহমর্মিতা আর সহযোগিতা আদায় করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন এম কে অনার্স কলেজের সদ্য অবসরে যাওয়া অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক। ববিতাকে মাতৃহে আগলে রাখেন ঐ কলেজের শিক্ষক মাজেদা বেগম।

ববিতার জটিল আর সুক্ষ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে গতকাল বিকেলে নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ এর সাথে সাক্ষাৎ করা হয়। জেলা প্রশাসক তাৎক্ষণিক ববিতার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। যোগাযোগ করেন রাজধানীর নিউরোসায়েন্স ইন্সটিটিউটে। রাতেই শিক্ষকসহ ববিতাকে নিয়ে তাঁর পরিবার রওনা হয়েছেন ঢাকার পথে।

ববিতার চোখের আলো নিভে গেলেও মনের আলো এখনও জ্বলজ্বল করছে। ওর কন্ঠে প্রত্যয়, ‘পড়াশুনা চালিয়ে যেতে চাই, পড়াশুনা শেষ করে একটা চাকুরীর সংস্থান করতে চাই, আমি আমার অসহায় হৃত দরিদ্র বাবা-মায়ের সেবা করতে চাই’।

জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ববিতার চোখের আলো ফিরিয়ে আনতে সব রকমের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে জেলা প্রশাসন। চাকুরীর ক্ষেত্রে জনসেবার সুযোগ পেয়েছি। এর সর্বোত্তম ব্যবহার করতে চাই। আমৃত্যু মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে চাই। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান