বাংলাদেশর পরিচয় হবে ওষুধ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে

বিজনেসে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ থাকবে। বিজনেস মানেই হলো ঝুঁকি, অনিশ্চয়তা ও চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ক্ষমতা। একজন ব্যবসায়ী যখন একটা ব্যবসা শুরু করেন, তখন তাকে চাহিদা আর যোগানের গ্যাপটা খোঁজার মত সক্ষমতা থাকতে হবে। ব্যবসার আকর্ষণীয় দিকগুলো খুঁজে বের করার সক্ষমতা যদি একজন ব্যবসায়ীর মধ্যে না থাকে, তাহলে যেনতেনভাবে ব্যবসা শুরু করলে সে সফলতা নাও পেতে পারে। কেননা, যেনতেনভাবে কোন ব্যাবসা শুরু করলে সেটা থেকে বড় কিছু আশা করা যায় না।

ব্যবসা মানেই সেখানে প্রতিযোগীতাকে মোকাবেলা করার সক্ষমতা থাকতে হবে। সেখানে তুলনামূলক সেবা দিয়েই আপনাকে টিকে থাকতে হবে। আপনার কোম্পানির পণ্য বা সেবা অন্য কোম্পানি থেকে কতটা ভালো, সেটা গ্রাহকদেরকে বুঝানোর সক্ষমতা আপনার থাকতে হবে। আর আপনি যদি এমন পণ্য বাজারে আনতে চান, যেটা এর আগে বাজারে আসেনি সেটার ঝুঁকিও আপনাকে চিন্তা করতে হবে। কারণ, মানুষ যে কালচারে অভ্যস্ত, তা থেকে ভিন্ন রকমের পণ্য বাজারে আনলে সেটা গ্রাহকেরা নাও গ্রহন করতে পারে।

আমার ব্যবসার শুরুর কথা:
আমি যেটা শুরু করেছি সেটার সফলতা, শুরু করার আগেই আমি ড্র করে ফেলেছি। একজন কৃষি বিজ্ঞানি হিসাবে আমি জানি, আমাদের দেশের কৃষক যে ধরনের প্রযুক্তি ব্যাবহার করছে এবং যে ফসল উৎপাদন করছে, এর মাঝে গ্যাপটা কোথায়। যেহেতু কৃষির পাশাপাশি ব্যাবসা প্রশাসনেও আমার পড়াশুনা আছে, ফলে ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্টও আমি জানি। হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, রেকর্ড কিপিং পদ্ধতি এইসব কিছু আমার জানা। ফলে আমি বুঝতে পেরেছি, কি ধরনের পণ্য কৃষকদের দরকার। কিন্তু সেগুলো বাজারে সব সময় পাওয়া যায় না। সেই ধরনের পণ্য নিয়েই আমি ব্যাবসা শুরু করার কৌশল পরিকল্পনা করেছি এবং বলা যায় সফলতা পেয়েছি।

কীটনাশক নিয়ে আমার যাত্রা শুরু:
পৃথিবীতে এমন কোনো দেশ পাবেন না, যেখানে কীটনাশকের ব্যবহার নেই। আমাদের দেশেও তদ্রুপ কীটনাশক ব্যবহার হয়। তবে আমি দেখেছি যে, আমাদের দেশের বাজারে ব্যবহৃত কীটনাশকগুলোর বিভিন্ন দুর্বলতা রয়েছে। আমি সেই দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করে সেখানে নতুন কিছু সংযোজন করেছি। কৃষকরা দেখেছে যে, তারা আগের চেয়ে কম খরচে অধিকতর সুবিধা পাচ্ছে। এই ধরনের পণ্য আনাতে আমাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

আমাদের কীটনাশকের বিশেষত্ব:
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি কীটনাশক হলো মর্টার ৪৮ ইসি। এই ধরনের কীটনাশক বাজারে অনেক আছে। এই ধরনের কীটনাশক অন্য কোম্পানির আছে ২০ ইসি (অর্থাৎ ২০ শতাংশ কনসালটেশন)। আমি দেখলাম যে, সারা পৃথিবীতে বিশেষ করে আমেরিকাতে এই কীটনাশকটা ৪৮ শতাংশ ঘনত্বে কনসালটেশন। কিন্তু বাংলাদেশে এটি পারে নি। তখন আমি এই পণ্যটি সিলেক্ট করলাম। এটার রেজিস্ট্রেশন করাটা ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, রেজিস্ট্রেশন যে সকল সরকারি কর্মকর্তারা করবেন, তাদেরকে এটি আমার বুঝতে হয়েছে। আমার কারিগরি জ্ঞান ছিল বলে, আমি সেটা করতে সক্ষম হয়েছি।

পণ্যটি রেজিস্ট্রেশন করতে দুই থেকে তিন বছর সময় লেগেছে। এটি যখন বাজারে আসে, এটার সফলতার ব্যাপারে আমি আগে থেকেই আশাবাদী ছিলাম। কৃষক যখন দেখেছে, আগের পণ্য থেকে এই পণ্যে বেশি সুবিধা সে পাচ্ছে এবং খরচ আগের মতই, তখন সে এটা কিনতে আগ্রহী হয়েছে। কৃষক যখন দেখেছে, আগের পণ্য থেকে এই পণ্যে বেশি সুবিধা সে পাচ্ছে এবং খরচ আগেরটার মতই, তখন সে এটা কিনতে আগ্রহি হয়েছে। এখন আমাদের দেশে আমাদের কোম্পানি এই পন্যটি যে পরিমান বিক্রি করে, ৩০০ কোম্পানির মধ্যে বাকীরা সকলে মিলে সে পরিমান বিক্রি করে। এটাই হল ব্যবসার কৌশল, নতুন কিছু থাকতে হবে।

আমাদের গ্রুপের এখনকার অবস্থান:
এই ব্যবসায় আমাদের কোম্পানির যাত্রা ১৮ বছর পেরিয়েছে। এখনও হয়তো আমরা বিক্রিতে নম্বর ওয়ান হতে পারিনি। কিন্তু কোয়ালিটির যাচাই-বাছাইয়ে এটাই নম্বর ওয়ান কোম্পানি। কেননা, মহামান্য রাষ্ট্রপতি আমাদের ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ারকে নম্বার ওয়ান হিসাবে বিবেচনা করেছেন। তবে এই ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার যে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে তা কিন্তু একদিনে সম্ভব হয়নি। এজন্য ব্যবসার শুরুতেই আমাকে কৌশল ও পরিকল্পনা করতে হয়েছে যে, দীর্ঘ সময় ব্যবসা করার জন্য আমাকের কোয়ালিটি ধরে রাখতে হবে। আর সেটা আমি করেছি। এখন এর মাধ্যমে আমার অনেক ব্যবসার সাথে সংযুক্তি হয়েছে। আমার কোম্পানিতে এখন কয়েক হাজার কর্মচারী কাজ করেন। শুধু কৃষি বিজ্ঞানীই আছেন ৭০-৭২ জন। এটা অনেক বড় একটা অর্জন। কেননা, আপনি যদি গবেষণা কিংবা প্রতিযোগীতাকে পরিমাপ না করেন এবং কিভাবে সফল হবেন তার কৌশল না করে ব্যবসা শুরু করেন, তবে সেখানে সফলতা আসতেও পারে, আবার নাও আসতে পারে। কিন্তু একজন সঠিক বিজনেস পথগামীর ব্যর্থ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কেননা, সে পুরো পথ পরিক্রমা মেজারমেন্ট করেই মাঠে নেমেছে।

ব্যবসায়ীরা কেন ব্যর্থ হয়?
ব্যবসায়ীরা ব্যার্থ হয় তার নিজের কারনেই। কোনো ব্যবসায় পথের বাঁধা হলেন, যিনি কোম্পানির মালিক, তিনিই। তার প্রজ্ঞা বা জ্ঞান সিমিত হওয়ার কারনেই ব্যর্থ হয়। কেননা, ব্যবসা হলো সিলেকশনের উপর নির্ভরশীল। আপনি পিপলস সিলেকশনে যদি ভূল করেন, তাহলে ব্যর্থ হবেন। আপনি সঠিক প্রোডাক্ট না আনতে পারলে ব্যর্থ হবেন। রাইট মার্কেটে ভূল প্রোডাক্ট কিংবা ভূল মার্কেটে রাইট প্রোডাক্ট দিলে ব্যর্থ হতে হবে। এগুলো বড় ব্যবসা করার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে বেঁচে থাকার তাগিদে আমরা যেসব ছোট পরিসরে ব্যবসা করি, সেখানে এত পরিকল্পনার দরকার নেই। অর্থাৎ আপনি যদি বৃহৎ আকারে আর্ন্তজাতিক বা ন্যাশনাল লেভেলে ব্যবসা শুরু করতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই ওই ধরনের জ্ঞান, প্রজ্ঞা, নলেজ ও টেকনোলজি নির্ভর হয়েই আসতে হবে।

আরেকটা বিষয় হলো সরকারকে অতিক্রম করে কোনো ব্যাবসা করা যাবে না। সরকারি সাপোর্টে, সঠিক লোক, সঠিক পণ্য এবং সঠিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আপনাকে একটি সফল ব্যাবসা শুরু করার পরিকল্পনা করতে হবে। আজকের দুনিয়ায় আপনি লেখাপড়া না করে একটা বড় ব্যবসা করবেন, সেই দিন এখন আর নেই।

দ্বিতীয় পর্যায়ে যে ব্যবসা শুরু:
ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ারের পরে আমি রিয়েল এস্টেট ব্যবসা শুরু করি। তারপর আমার যেহেতু নিজস্ব ইন্ডাস্ট্রিতে কার্টুন, বোতল, প্রিন্টিং ম্যাটেরিয়ালস লাগে, সেহেতু আমি ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি করি। কেননা, ঢাকা থেকে যদি সঠিক টাইমে কার্টুন আমি না দিতে পারি, তাহলে আমি প্রোডাক্ট সাপ্লাই দিতে পারবো না । এগুলোর ঝুঁকি, অনিশ্চয়তা এবং চ্যালেঞ্জগুলো আগে থেকে বিবেচনা না করে যেনতেনভাবে শুরু করার কোনা সুযোগ নেই। তাহলে আপনার প্রতিষ্ঠান সেভাবে গ্রো করবে না।

রিয়েল এস্টেট ব্যবসার আগ্রহ ও বাস্তবতা:
আমরা যখন রিয়েল এস্টেট ব্যবসা শুরু করেছি, তখন হচ্ছে এটার স্বর্ণযুগ। তবে এটা ছিলো খুব পড়ন্ত সময়। সময়টা ছিলো ২০১০ সাল। তখন রিয়েল এস্টেটের গ্রাফটটা নিচের দিকে চলে গেলো। রিয়েল এস্টেট ব্যবসাটা হচ্ছে কিছুটা সমুদ্রের ঢেউয়ের মত। দেখা যাবে দশ বছর পরে এটার উত্থান হয়, আবার দশ বছর পরে পতন হয়। কারণ, মানুষের ইনকাম যখন ডিপোজিট হয়ে এক জায়গায় আসে, তখন সে বৃহত্তর ইনভেস্টমেন্টে যায়, অর্থাৎ বাড়িঘর করার চিন্তা করে। কেউ দশ বছর আগে একটা বাড়ি কিনেলে সে আবার দশ বছর পরে ইনভেস্টমেন্টের কথা ভাবে।

২০১০ সালের দিকে পুঁজিবাজারে যে ধস নেমেছিলো, তার সাথে সাথে আবাসন খাতেরও ধস নেমেছে। তবে আমার বিশ্বাস, রিয়েল এস্টেটের গ্রাফটা হলো এমন যে, দশ বছর ডাউন থাকার পর আবার দশ বছর পরে উপরে উঠবে। সেই বিশ্বাস থেকে বলছি, রিয়েল এস্টেটের বাজার আবার উঠবে। পাশাপাশি পুঁজিবাজারও সচ্ছল হবে।

সম্প্রতি আমাদের রিহ্যাবের মেলা শেষ হয়েছে। এটা আগের চেয়ে অনেকটা ভালো অবস্থায় গ্রো করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীরও এই সেক্টরে উন্নতি করার ব্যপারে নির্দেশনা রয়েছে। কারণ, এটা হচ্ছে একটা শ্রমঘন ইন্ডাস্ট্রি। রিয়েল এস্টেট যদি ভালো হয়, এর সাথে সাথে আরও ত্রিশটা ইন্ডাস্ট্রি ভালো থাকবে। তখন লেবার মার্কেটেও দেখবেন কাজের অভাব হবে না। আমাদের যারা কৃষিশ্রমিক রয়েছে, তাদের বছরে তিন মাস কাজ থাকে আর নয় মাস কাজ থাকে না। তো তারা ওই নয় মাস কোথায় কাজ করবে? এরা তখন এই রিয়েল এস্টেট সেক্টরে কাজ করতে পারবে। অর্থাৎ একটা ব্যবসার সাথে অন্য কোন কোন ব্যবসার সম্পর্ক আছে সেটা জানতে হবে। যিনি রাষ্ট্র চালান তিনি তো এটা জানেনই পাশাপাশি আমাদের ব্যবসায়ীদেরকেও জানতে হবে।

আমার ফার্মাসিউটিক্যাল ব্যবসার শুরু:
আমি মনে করি, বাংলাদেশের পরিচয় হবে ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি দিয়ে। কেননা, সারা পৃথিবীতে ৪৯টি স্বল্পোন্নত দেশ আছে। এই ৪৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যারা ওষুধের মত উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করতে পরে। আবার উন্নত দেশে রপ্তানিও করতে পারে এসব পণ্য। এক সময় যেমন সোনালী আঁশের দেশ বলতে বুঝা যেতো বাংলাদেশকে। তেমনি কোনো একসময় হয়তো বাংলাদেশের পরিচয় হবে ঔষুধের দেশ হিসেবে। এটা যদি আমি বুঝতে পারি, তাহলে আমি কেন ওষুধে বিনিয়োগ করব না। আমাদের যদি টাকা থাকে, তাহলে ওষুধে আরও বিনিয়োগ করা উচিত। কেননা, এই শিল্পটা অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া ওষুধ শিল্প গ্রো করানো যাবে না। কেননা, এটা কোন সাধারন ব্যবসা না। রড সিমেন্টের ব্যবসা আর ওষুধের ব্যবসা এক নয়। এটা করতে হলে সরকারের যারা নীতিনির্ধারক রয়েছে তাদের পলিসিতে পরিবর্তন আনতে হবে। ১৯৮০ সালের আমাদের যে ওষুধ নীতিমালা রয়েছে, বর্তমান সরকার এটাকে আবার পরিবর্তন করেছে। আপনারা দেখবেন যে, এখন কিন্তু আমাদের দেশে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো প্রথম ২০টির মধ্যে নেই। একটা দেশের চেহারা চেনা যায় যে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য থেকে, তার মধ্যে অন্যতম হলো, ইন্ডাস্ট্রি সেক্টরে দেশীয় কোম্পানি নেতৃত্ব দেয়, নাকি বিদেশি কোম্পানি নেতৃত্ব দেয়? আপনি যদি ভারতে যান তাহলে দেখবেন যে, টপ টেন কোম্পানি হলো দেশটির নিজেদের কোম্পানি। তারপর চায়নার টপ হান্ড্রেড কোম্পানি চাইনিজ, রাশিয়ার টপ হান্ড্রেড কোম্পানি রাশিয়ান, আমেরিকার টপ ৫০০ কোম্পানি আমেরিকান। এভাবে যার যার দেশের সরকার এই অবস্থানটা করে দেয়।

বাংলাদেশে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের চাহিদার ১০ শতাংশ ওষুধ বহুজাতিক কোম্পানিগুলো উৎপাদন করতো। বাকি ৯০ শতাংশ ওষুধ বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো। তখন ওষুধের অভাবে বিনা চিকিৎসায় মানুষ মারা গেছে। সেখান থেকে ঘুরে দাড়িয়ে আজকে বাংলাদেশ নিজেদের চাহিদার ৯৮ শতাংশ ওষুধ দেশেই উৎপাদন করছে এবং ১৫০টি দেশে ওষুধ রপ্তানিও করছে। তাছাড়া টপ টুয়েন্টি কোম্পানির সবগুলোই এখন দেশীয় কোম্পানি। এটা সম্ভব হয়েছে সরকারী দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতিমালার কারণে। অর্থাৎ সরকারকে ব্যবসায়ীবান্ধব হতে হবে।

একটা দেশ কতটা ধনী বা গরীব তা বিবেচনা করা হয় সেই দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কতটা উন্নত সেটার উপর নির্ভর করে। ১৫ বছর আগে আমাদের দেশের বাজেট ছিল ৫৪ হাজার কোটি টাকা। আর এখন আমাদের বাজেট হচ্ছে ৫ লক্ষ কোটি টাকা। সরকার আগে ৫ লক্ষ কোটি টাকা কোন কোন খাতে খরচ করবে, তা বের করে খরচ বাজেট করেছে। পরে বের করেছে ইনকামের বাজেট। আর আমরা ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার, ওয়ান ফার্মার ক্ষেত্রে আগে আয়ের বাজেট বের করি, পরে খরচ বাজেট। কারণ, দুটোর মধ্যে পার্থক্য আছে। সরকার এত বড় বাজেটের খরচ তুলবে এই ব্যবসায়ীদের থেকেই। সুতারং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যদি এ দেশে উন্নতি না করতো তাহলে এত বড় বাজেট করা সম্ভব হতো না। সবচেয়ে মজার ব্যপার হলো, আমাদের বাজেটে কিন্তু বিদেশি অনুদান একদমই সামান্য। বর্তমান বাজেটের ৯৫-৯৬ শতাংশ খরচ নিজস্ব অর্থায়নে হচ্ছে। বাকি ৪-৫ শতাংশ হচ্ছে অনুদান দিয়ে। যেটা না নিলেও আমাদের বাজেট পরিপূর্ণ হবে। এইযে পরিবর্তনটা আসছে, আমি এমনই একটা পরিবর্তন ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরে দেখেছি বলে এই ব্যবসায় এসেছি। এখন আমরা প্রায় দশটি দেশে ওয়ান ফার্মার প্রোডাক্ট রপ্তানি হচ্ছে।

তরুনদের উদ্দেশ্যে আমার গাইডলাইন:
তরুনদের উদ্দেশ্যে বলতে গেলে, প্রথমেই শিক্ষার কথা বলতে হবে। অর্থাৎ প্রথমেই দেখতে হবে যে, আমার শিক্ষা ব্যবস্থায় ত্রুটি আছে কিনা। আবার ধরুন, আমার ছেলে পড়াশুনায় ভালো না। কিন্তু আমার কাছে টাকা আছে। আমি আমার ছেলেকে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বা কৃষি বিজ্ঞানী বানাতে চাই। এটা করলে দেশের আমি ক্ষতি করলাম। কেননা, যার যতটুকু যোগ্যতা তাকে সেই অনুযায়ী কাজে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি যদি উন্নত বিশ্বের দিকে তাকান (উদাহরন স্বরুপ সিঙ্গাপুর), তাহলে দেখতে পাবেন যে, তাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এক শ্রেনীতে রয়েছে অতি মেধাবী শিক্ষার্থীরা, আর অন্য শ্রেনীতে রয়েছে তুলনামূলক কম মেধাবীরা। সেখানে কিন্তু যারা অল্প মেধাবী, তাদের জন্য ভোকেশনাল বা কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। তারাও কিন্তু এই শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে অনেক টাকা ইনকাম করতে পারছে।

তরুনদের উদ্দেশ্যে আমরা বলা হচ্ছে, আপনারা কখনো আশা ছাড়বেন না। উদ্যোগী হওয়ার জন্য আত্মবিশ্বাসী হোন। আমি বিশ্বাস করি, আপনাদেরকে নিয়েই এ দেশ একদিন সোনার বাংলা হবে। তবে সরকারের প্রতি আমার বলার আছে যে, শিক্ষা ব্যবস্থায় একটা ব্যপক পরিবর্তন আনতে হবে। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে এটা আমি অনুভব করি। কারণ, একটা ছেলে যখন আমার কাছে ইন্টারভিউ দিতে আসে, তখন দেখি যে, অনার্স বা মাস্টার্স ডিগ্রীর বিষয়বস্তু সম্পর্কে তার পর্যাপ্ত জ্ঞান নাই।

আপনি ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে গেলে দেখতে পাবেন যে, এখানে রাইট হিউম্যান রিসোর্সের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। গবেষণা ছাড়া উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। গবেষকরাই গবেষণা সেল করে আমাদের দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করবে। সমাজবিজ্ঞানীদের প্রয়োজন আছে আমাদের। আজকে আমরা যদি অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হই, আর আমাদের সমাজবিজ্ঞানীদের যদি কাজ না থাকে, তাহলেও বিপর্যয় ঘটবে। অর্থাৎ উন্নয়নের পাশাপাশি যে নেতিবাচক প্রভাব আছে, সেটা তো সমাজ বিজ্ঞানীরা খুঁজে বের করবেন। সেটাকে যদি আমরা খুঁজে বের করতে না পারি তাহলে আবার নেগেটিভ প্রভাব পড়বে।

কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান
ব্যবস্থাপনা পরিচালক,
ওয়ান ফার্মা ও ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার গ্রুপ