বাংলাদেশের ঋণের বোঝা ‘আরও বাড়বে’

কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করার কারণে আগামী দিনে বাংলাদেশ আরও ‘ঋণের বোঝায়’ পড়বে বলে এক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে।

এখন পর্যন্ত সরকার কোভিড-১৯ থেকে দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম এবং উৎপাদন ব্যবস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে ১৩.২৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যা জিডিপির ৪.০৩ শতাংশের সমান।

সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের ঋণের পরিমাণ মোট জিডিপির ৩৮.৩ শতাংশ হবে।

সরকারি সূত্র অনুসারে, এ ঋণের পরিমাণ হবে ১৫,৪৮০ বিলিয়ন টাকা যেখানে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসবে ৯,৫৯৭.৮ বিলিয়ন টাকা, যা এ পরিমাণের ৬২ শতাংশ এবং বৈদেশিক উৎস থেকে আসবে ৫,৮৮২.৬ বিলিয়ন টাকা, যা ৩৮ শতাংশ।

২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৩,৫৩১.৫ বিলিয়ন টাকা, যা মোট জিডিপির ৩৭.৮ শতাংশ হবে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস ৮,৪০৮.৬ বিলিয়ন টাকা অবদান রাখবে, যা এ পরিমাণের ৬২.১ শতাংশ এবং বৈদেশিক উৎস ৫,১২২.৯ বিলিয়ন টাকা অবদান রাখবে, যা ৩৭.৯ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরে ঋণের পরিমাণ জিডিপির ৩৬.৮ শতাংশ নিয়ে ১১,৬৭৮.৩ বিলিয়ন টাকা দাঁড়িয়েছে। এতে অভ্যন্তরীণ উৎসগুলো ৭,৩৫৫.৫ বিলিয়ন টাকা অবদান রাখছে, যা ৬৩ শতাংশ এবং বৈদেশিক উৎস ৪,৩২২.৮ বিলিয়ন টাকা অবদান রাখছে, যা ৩৭ শতাংশ।

২০১৯-২০২০ অর্থবছরের সংশোধিত ঋণের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রা থেকে মোট জিডিপির ১.২ শতাংশ বেশি।

আগের অর্থবছরের সংশোধিত পরিমাণ ছিল ৯,৯৯৬.৯ বিলিয়ন টাকা এবং এটি জিডিপির ৩৫.৬ শতাংশ ছিল। এতে অভ্যন্তরীণ উৎসগুলো ৬,২৩৫.৮ বিলিয়ন টাকা দিয়েছে, যা ৬২.৪ শতাংশ এবং বৈদেশিক উৎস দিয়েছে ৩,৭৬১.১ বিলিয়ন টাকা, যা ৩৭.৬ শতাংশ ছিল।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ পরিমাণ ছিল ৮,৪১৯.১ বিলিয়ন টাকা, যা ছিল জিডিপির ৩৩.২ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ উৎসগুলো দিয়েছে ৫,৩৩৮.১ বিলিয়ন (৬৩.৪ শতাংশ) এবং বৈদেশিক উৎস ৩,০৮১ বিলিয়ন (৩৬.৬ শতাংশ) অবদান রেখেছে।

 

নথিতে উল্লেখ করা হয়, মধ্যমেয়াদি সময়ে বিশ্বব্যাপী ঋণের সুদের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমার সম্ভাবনা রয়েছে। এর জন্য কোভিড-১৯ মহামারি এবং বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার নেতিবাচক অবস্থাকে কারণ হিসেবে বলা হয়েছে।

নথি অনুসারে, ‘সামস্টিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য আরও কিছুটা সময় লাগবে।’

তাই, বৈদেশিক উৎস থেকে ঘাটতি অর্থায়ন তুলনামূলকভাবে কম হবে।

নথিতে আরও বলা হয়, অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশ থেকে ঋণের সঠিক সংমিশ্রণ অর্থ ব্যয় হ্রাস এবং বকেয়া ঋণের পরিমাণ চলতি থেকে হ্রাস করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

রপ্তানিমুখী শিল্প, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প, কৃষি, মাছ চাষ, হাঁস-মুরগি ও প্রাণিসম্পদসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রকে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় আনা হয়েছে।

প্যাকেজগুলোর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাত প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর্যকরী মূলধন সুবিধা প্রদানের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কুটির শিল্পসহ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এবং মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের কার্যকরী মূলধন সরবরাহের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবর্তিত রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) সুবিধাগুলো বাড়িয়ে বিশেষ তহবিল হিসেবে ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে।

মহামারির জন্য চাকরি হারানো যুবসমাজ ও প্রবাসীদের সহায়তার জন্য পল্লী সঞ্চার ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এবং পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের জন্য মোট ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

কোভিড-১৯-এ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষিকে রক্ষার জন্য কৃষকদের জন্য মাত্র ৪ শতাংশ সুদে আরও ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং করোনাভাইরাসে দেশব্যাপী লকডাউনের কারণে ক্ষতিগ্রস্থদের সরকার ১ হাজার ৮৪০ কোটি টাকার ব্যাংক সুদ মওকুফ করবে।