বাজেটে স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষা থাকতে হবে

উদয় হাকিম। ওয়ালটনের সিনিয়র অপারেটিভ ডিরেক্টর। এ দেশের  ইলেকট্রনিকস শিল্পের  নানা দিক নিয়ে তাঁর চিন্তাভাবনা, বিশেষ করে বাজেটে স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষা নিয়ে তার পরিষ্কার মতামত আজকের বাজারের কাছে প্রকাশ করেছেন। তাঁর কথোপকথন তাঁরই জবানিতে পাঠকদের জন্য ছাপা হলো।   

আসলেই বাজেট খুব বিশাল একটি বিষয়। আমি এক কথায় বলব, যেখানে স্থানীয় শিল্পের পুরোপুরি সুরক্ষা থাকবে। যেমন আমার দেশে যে পণ্যটি উৎপাদিত হচ্ছে, সেই পণ্যটির সুরক্ষা দিতে হবে। তা না করে যদি বিদেশ থেকে সেই একই পণ্য আমদানির অবাধ সুযোগ করে দিই, তাহলে দেশে উৎপাদিত পণ্যটির উৎপাদন ব্যাহত হবে। যেমন ধরুন, ইন্ডিয়া এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে দেশে মোবাইল ফোন তৈরি করবে। সে কারণে তারা স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষা দিয়ে শিল্পের জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবটুকুই দিয়েছে। তারা চাচ্ছে, তাদের অর্থ তাদের দেশেই থাকুক। আমরাও সে রকম উদ্যোগ নিতে চাচ্ছি, বাংলাদেশেও মোবাইল ফোন তৈরি হবে।

আমরা জানি, তাইওয়ানে ঘরে ঘরে শিল্প। বাংলাদেশেও ১৬ কোটি মানুষের ঘরে ১৬ কোটি শিল্প গড়ে উঠতে পারে। মোবাইল ফোন এমন একটি বিষয়, যা কিনা কারোর একার পক্ষে সরবরাহ করা সম্ভব নয়। আমাদের বেশির ভাগ ফোন আসে চায়না থেকে। এখন চায়না যদি বলে যে আমি আর মোবাইল ফোন দেব না, তখন কিন্তু একটা সেটও আসবে না। তাই আমাদের এখনই ভাবনার সময় যে বাংলাদেশে মোবাইল ফোনসেট তৈরি হতে পারে। বাংলাদেশের সব মানুষকে এর সঙ্গে যুক্ত করা যেতে পারে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমরা যদি মোবাইল ফোনসেট পুরো তৈরি অবস্থায় দেশে আনি, তখন ট্যাক্স দিতে হয় ২৩ শতাংশ, কিন্তু যখন আমরা মোবাইলের ‘র’ ম্যাটেরিয়ালসহ যাবতীয় অংশ আমদানি করি, তখন আমাদের সব মিলিয়ে ট্যাক্স দিতে হয় ৯৫ শতাংশ।

আমরা মনে করি, এটা সম্পূর্ণ দেশবিরোধী একটা নীতি। এটা যে কেউ শুনলে বলবে, এ ধরনের পলিসি থাকা উচিত না। আমরা আওয়াজ তুলছি এ বিষয়ে। সরকারও বলছে যে তারা শিল্পবান্ধব সরকার। আমি চাইব আগামী বাজেটে এর একটা ইতিবাচক দিক দেখতে। আমি চাইব এ রকম দেশবিরোধী নীতি ফেলে দিয়ে শিল্পবান্ধব নীতি গঠন করা হবে। হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে নিশ্চিতভাবে আমরা ব্যবসায় লস করব, তাহলে তো কেউ বিনিয়োগ করবে না! যার ফলে আমরা সারা জীবন অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকব।

আমাদের পণ্য যাচ্ছে দেশের বাইরে
ওয়ালটন শুধু মোবাইল ফোনসেট নিয়ে ভাবছে তা না নয়, অর্থাৎ আমাদের মূল পণ্য রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশন, এয়ারকন্ডিশনার থেকে দৃষ্টি সরাচ্ছি না। আমরা চাইছি আমাদের পণ্য দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে আরও বেশি করে বিদেশে রপ্তানি করতে। আমাদের মূলমন্ত্র কোয়ালিটি। আপনারা হয়তো জানেন না যে এশিয়ার মধ্যে অন্যতম বৃহৎ রিসার্স সেন্টার রয়েছে আমাদের। আমরা যখন বিদেশে যাই তখন তারা প্রশ্ন করে, আপনাদের পণ্য কি চায়নার চেয়ে বেটার? তখন আমরা বলি, অবশ্যই ফার ফার বেটার। তখন তারা বলে, তাহলে পণ্যটিতে মেইড ইন বাংলাদেশ লিখে দেন। তাহলে আমাদের আর সমস্যা নেই।

কারণ হিসেবে জানি যে চায়নার পণ্যের বেলায় বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। আমাদের পণ্য ভুটান, নেপাল, মিয়ানমারে যাচ্ছে। আগামী পরিকল্পনার মধ্যে হয়েছে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাব। দেশের বাইরে শ্রীলঙ্কায় আমাদের প্ল্যান্ট করা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছেও আবেদনপত্র দেওয়া আছে।  আমাদের সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় হচ্ছে, বিদেশের মাটিতে মেইড ইন বাংলাদেশ লেখা আমাদের পণ্য ব্যবহৃত হচ্ছে।

উদয় হাকিম
সিনিয়র অপারেটিভ ডিরেক্টর, ওয়ালটন