বাদাম চাষে ঝুঁকছেন পাবনার কৃষকরা

ফাইল ছবি

পদ্মা ও যমুনা সংলগ্ন জেলা পাবনা। এ জেলায় রয়েচে বিশাল বিশাল চর। এ সব চর বাদাম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। জেলার ঈশ্বরদী, সদর, সুজানগর, বেড়া ও সাঁথিয়া এ ৫টি উপজেলায় বিপুলসংখ্যক মানুষ চিনাবাদাম চাষ করে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। চিনাবাদাম চাষ লাভ জনক একটি কৃষি। তাই পাবনার কৃষকরা এখন চিনাবাদাম চাষে ঝুঁকছেন।আর তিন দিন চাষেরউপযোগী জমিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্রে জানা যায়, পাবনার চরাঞ্চলের মাটি বাদাম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। জেলার ৫টি উপজেলাতে মোট ২,২৬৬ টন চিনাবাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যে চিনাবাদাম চাষের অধীনে মোট ১,৪৫৪ হেক্টর জমির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে বেড়ায় ১,৬৮০ মে.টন উৎপাদনের লক্ষ্যে ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমি, সুজানগরে ২৫০ টন উৎপাদনের লক্ষ্যে ১৫৬ হেক্টর, ঈশ্বরদীতে ২২৪ টন উৎপাদনের লক্ষ্যে ১৪০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ১৬০ টন উৎপাদনের লক্ষ্যে ১০০ হেক্টর এবং সাঁথিয়া উপজেলায় ১২ টন উৎপাদনের লক্ষ্যে ৮ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

বাদাম চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় শেষ হয়ে এসেছে বাদাম লাগানো। এরই মধ্যে কিছু জমির বাদাম গাছ সবুজ হয়ে উঠছে। প্রতি বছর বর্ষার পানিতে চরাঞ্চলে বাদাম ক্ষেত তলিয়ে যায়। সেজন্য একটু আগে ভাগেই লাগানোর কাজ শেষ করা হচ্ছে। যাতে পানি আসার আগেই বাদাম ক্ষেত থেকে তোলা যায়।

চাষিরা জানায়, সাধারণত আষাঢ় মাসের মধ্যেই বাদাম তোলা শেষ হয়ে থাকে। ন্যূনতম উৎপাদন খরচ এবং সহজ চাষ পদ্ধতির জন্য চিনাবাদাম চাষের ক্ষেত্রে আগ্রহী হয়ে উঠছেন তারা। প্রতি বছর বাদাম চাষের আওতায় জমি বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে বাদাম চাষি ও কৃষি কর্মকর্তারা জানান।

চিনাবাদামের দাম বিপুল চাহিদার সঙ্গে বাজারে উচ্চ মূল্যে কৃষকরা উৎসাহী হয়ে উঠছে। যার ফলে উল্লেখিত ৫টি উপজেলার চিনাবাদাম চাষিরা আরও বেশি জমি চাষের আওতায় আনছেন।

সদর উপজেলার শুকচর, দাসপাড়া, নতুন গোহাইলবাড়ী এলাকার বেশ কয়েকজন বাদাম চাষির সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, আমরা গত কয়েক বছর যাবত চিনাবাদাম চাষ করছি তাতে আমরা ভালো ফলনের সাথে অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হয়েছি। এ বছর আমরা আরও বেশি জমিতে চিনাবাদাম চাষ করছি।

চাষাবাদের পদ্ধতি ও অভিজ্ঞতাসহ বিভিন্ন দিক উল্লেখ করে ওই গ্রামের উচ্চ শিক্ষিত আদর্শ কৃষক এসএম আলাউদ্দিন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘বাদাম আবাদে চরাঞ্চলসহ বেশ কিছু এলাকায় চিনাবাদামে কৃষক ভালো সাফল্য পাচ্ছেন এবং বহু মানুষ স্বাবলম্বী হয়েছেন। বাদাম লাগানোর ৯০ দিনের মধ্যে তা তোলা শুরু হয়। প্রতি বিঘায় ১০ থেকে ১৫ মন বাদাম অর্জিত হয়ে থাকে। লাভের অংক ভালো হওয়ায় দিন দিন বাদাম আবাদের পরিধিও বাড়ছে।’

ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী, মন্ডুতোষ, রুপপুর এলাকার কৃষকেরা বলেন, ‘গত বছর আমরা বাদাম চাষ করে বাম্পার ফলন পাই সেই সাথে মূল্যটাও ভালো পেয়েছি। আমরা অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হয়েছি। ফলে বাদাম চাষকে আমরা অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে আবাদ করছি।

বেড়া উপজেলার কাশিনাথপুর বাজারের পাইকারি বিক্রেতা ইদ্রিস আলী বলেন, আমি পাবনার বাদাম কিনে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তা সরবরাহ করে থাকি। তিনি আরো বলেন, আমার মত অনেকে পাবনার বাদাম অন্যান্য জেলাতে সরবরাহ করে থাকে এবং আমার মত তারাও এ ব্যবসায়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

পাবনা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক বিভূতি ভূষন সরকার বলেন, কৃষি বিভাগের ক্ষেত্রকর্মী ও ফসল বিশেষজ্ঞরা ক্ষেত্রের সেবা প্রদান এবং চাষিদের সাথে মতবিনিময় করে তাদের মাটি চাষের আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে সর্বোত্তম হার অর্জনের জন্য শিক্ষাদান করছেন। এতে করে কৃষক আরো উদ্বুদ্ধ হয়ে বাদাম চাষে ঝুঁকছেন। বিস্তৃতি লাভ করছে বাদাম আবাদ।

আরএম/