বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে : আইনমন্ত্রী

জাপানি নাগরিক কুনিও হোসিকে হত্যা মামলার রায় উদাহরণ হিসেবে নিয়ে সাধারণ মানুষের মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সচিবালয়ে মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী এ কথা জানান।

মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে রংপুরের বিশেষ জজ আদালত কুনিও হোসিকে হত্যার রায় ঘোষণা করেছে। রায়ে আদালত ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এটা কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্রুততম সময়ে একটা খুনের মামলা শেষ করার অত্যন্ত উজ্জ্বল উদাহরণ। আমরা আশা করি বিচারিক আদালতে যে গতি এসেছে, এই গতি ধরে রাখলে নতুন করে মামলার জট হবে না।’

এর আগে রাজন হত্যা মামলা, রকিব হত্যা মামলার বিচারিক কাজ অত্যন্ত দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছিল জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘আশা করি এই মামলায় যে উদাহরণ সৃষ্টি হল সেই উদাহরণের ধারাবাহিকতায় আমাদের দেশে বিচার বিলম্বের সংস্কৃতি দূর হবে।’

সরকারের বিশেষ নজর যেখানে থাকে সেই মামলা দ্রুত শেষ হয়। সাধারণ মানুষের এভাবে দ্রুত বিচার পেতে কতদিন লাগবে- এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যেটা করার চেষ্টা করছি, সেটা হল এভাবে প্রত্যেকটি মামলা নজর দেওয়ার চেষ্টা করছি। সাধারণ মানুষের মামলা যাতে তাড়াতাড়ি শেষ হয়। সেটাই আমরা নিশ্চিত করার জন্য এগুলোকে টেস্ট কেস হিসেবে ব্যবহার করছি।’ ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর রংপুরের কাউনিয়ার আলুটারি গ্রামে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশিকে হত্যা করা হয়।

আনিসুল হক বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম আইন মাফিক বিচারিক সব কার্যক্রম সমাপ্ত করে দ্রুততার সাথে দোষীদের বিচার করব এবং শাস্তি নিশ্চিত করব। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আজকে কুনিও হোসি হত্যাকারীদের বিচার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মামলার রায় বেরিয়েছে। রায়ে ৬ আসামির মধ্যে একজন পলাতক আসামিসহ ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডদেশ দেওয়া হয়েছে। একজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।’

মন্ত্রী জানান, মামলা করা হয় ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর, চার্জশিট দেওয়া হয় ২০১৫ সালের ৩ জুলাই। আদালত চার্জশিট গ্রহণ করেন ওই বছরের ১৫ নভেম্বর। মামলাটি বিচারের জন্য জেলা জজের আদালতে যায় ও ১০ নভেম্বর বিশেষ জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়। অভিযোগ গঠনের তারিখ হচ্ছে ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর।

এই মামলায় ৫৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি। যুক্তিতর্ক হয় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি। ২৮ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করা হয়।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এগুলো মাধ্যমে আমরা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তা হল নজরদারিতে থাকলে দ্রুত মামলা শেষ করা যায়। সেই ম্যাসেজটাই প্রসিকিউশনের কাছে এবং সাব-অর্ডিনেট জুডিশিয়ারির কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

‘বিলম্বে বিচার হওয়ার কারণে যে একটা চিন্তাধারা ছিল জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনাইড সেই যে একটা সংস্কৃতির মধ্যে আমরা পড়ে যাচ্ছিলাম, সেটা থেকে বেরিয়ে আসার পদক্ষেপগুলো নেওয়া আমরা শুরু করেছি।’

গত নির্বাচনের পর সহিংসতার মামলাগুলোর তদন্তের ক্ষেত্রে অগ্রগতি নেই- এ বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘আমি তদন্তের বিষয়ে একটি কথা বলি, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে কোন হস্তক্ষেপ করি না। আমরা চাই তদন্তটা নিরপেক্ষ হোক, যারা দোষী তারাই আদালতের কাঠগড়ায় বিচারের জন্য দাঁড়াক। না হলে আপনারাই বলবেন হস্তক্ষেপ করে আমরা বিএনপি-জামায়াতের লোকজন ভরে দিচ্ছি। এজন্য তদন্ত সংস্থাকে যতটা সম্ভব সময় দেওয়ার চেষ্টা করি।’

প্রধান বিচারপতি মামলা জট এড়াতে নির্বাহী বিভাগের অসহযোগিতা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের কোন অসহযোগিতা নেই।’

রাজনৈতিক মামলাগুলোরও অগ্রগতি দেখা যায় না- এ বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রত্যেকটি মামলায় তার অনুপস্থিতি দেখিয়ে অন্তত ২০ বার করে সময় নিয়েছেন। এভাবে সময় নিলে মামলা এমনিতেই দেরি হয়ে যায়। তবুও প্রসিকিউশন থেকে আমরা এ সব মামলা অত্যন্ত দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

বিএনপি নেতা ও সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমেদ বলেছেন, খালেদা জিয়ার শাস্তি হলেও তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন- এ বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, ‘জানি না তিনি কোন প্রেক্ষাপটে এটা বলেছেন। মামলা আছে আদালতে, রায় দেবেন জজ সাহেব, আমি এখন বলতে পারব না যে রায় কি হবে কি হবে না। তাই এ কথাটা কোন রাজনৈতিক অ্যাঙ্গেল থেকে বলা হয়েছে আমি জানি না। এটা বলা অবান্তর।’

এ সময় আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মোহাম্মদ জহিরুল হক উপস্থিত ছিলেন।

সুত্র: দ্য রিপোর্ট