বিদেশী বিনিয়োগ সম্প্রসারণে বাংলাদেশ সঠিক পথে আছে

বৈশ্বিক পর্যায়ে বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবাহ নেতিবাচক হলেও সরকারের ব্যবসাবান্ধব নীতি-সহায়তার কারণে বাংলাদেশ ২০১৮ সালে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।
সোমবার রাজধানীর একটি পাঁচতারা হোটেলে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা-এর (আঙ্কটাড) বিশ্ব বিনিয়োগ রিপোর্ট-২০১৯ প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব একথা বলেন।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। বিড়ার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)’র নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বক্তব্য রাখেন।
আঙ্কটাড গত ১২ জুন প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। বাংলাদেশ আজ আনুষ্ঠানিকভাবে এটি প্রকাশ করল।প্রতিবেদেনে দেখা যায়, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২১৫ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার। অথচ ২০১৮ সালে বাংলাদেশে এফডিআই এসেছে রেকর্ড পরিমাণ ৩৬১ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। ফলে এক বছরের ব্যবধানে দেশে বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় ৬৮ শতাংশ।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে ভারতে ২০১৮ সালে বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে ৪ হাজার ২২৮ কোটি ৫৭ লাখ ডলার,এর আগের বছর সেখানে এফডিআইয়ের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৯৯০ কোটি ৩৮ লাখ ডলার, ফলে এক বছরে সেখানে বিদেশী বিনিয়োগ বেড়েছে ৬ শতাংশ। মালদ্বীপে গতবছর এফআিই ছিল ৫৫ কোটি ১৮ লাখ ডলার, নেপালে ১৬ কোটি ৮ লাখ ডলার এবং শ্রীলংকায় ১৬১ কোটি ৫ লাখ ডলার।
অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার দু’টি দেশে গতবছর এর আগের বছরের তুলনায় এফডিআই হ্রাস পেয়েছে। পাকিস্তানে ২০১৭ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিলো ৩২৩ কোটি ২০ লাখ ডলার, যেটা গতবছর কমে দাঁড়িয়েছে ২৩৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। আরা ভুটানে ২০১৭ সালের ৯৯ লাখ ডলারের এফডিআই গতবছর কমে হয়েছে ৫৯ লাখ ডলার। ফলে সেখানে এফডিআই কমেছে ১৬০ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষনের জন্য সরকার সারাদেশে ১’শটি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছে। ইতোমধ্যে ১১টি অঞ্চলের সনদ প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থে এফডিআই আনতে হলে অবকাঠামো উন্নয়নের বিকল্প নেই। আমরা অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে সেটাই করছি।
তিনি বলেন, দেশে এখন বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আশা করি এফডিআই আরো বৃদ্ধি পাবে।
উপদেষ্টা বলেন, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের উন্নয়নে বেশ কিছুৃ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তাই এ বছরের শেষের দিকে ব্যবসা সহজীকরণ সূচকের যে র‌্যাঙ্কিং প্রকাশ করা হবে, সেখানে বাংলাদেশ ভাল করবে। তিনি জানান, ব্যবসা শুরু করার প্রয়োজনীয় অনুমতি যেন একই ছাদের নিচে পাওয়া যায়, এজন্য বিডা চলতি বছরের মধ্যে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভানীয় সাফল্য অর্জন করেছে। এখন বিনিয়োগ প্রবাহ সম্প্রসারণের প্রয়োজন। তিনি বলেন, বিনিয়োগ বাড়লে সরকারের রাজস্ব আয় আপনাআপনি বৃদ্ধি পাবে।
অনুষ্ঠানে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, এখনও আমদানি-রফতানি শুল্ক থেকে আমরা উল্লেখযোগ্য রাজস্ব পাচ্ছি। আন্তর্জাতিক শুল্কের পরিবর্তে ভ্যাট ও আয়কর থেকে রাজস্ব আয়ের ওপর আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। সেক্ষেত্রে এফডিআই বড় উৎস হতে পারে এফডিআই।
বাংলাদেশ আগামীতে বিনিয়োগ কেন্দ্র হতে যাচ্ছে বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনাকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার জন্য সংবাসমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান।