বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করবে ডিবিএ

মোশতাক আহমেদ সাদেক
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী এবং ব্রোকার্সদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করবে ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন-ডিবিএ। বিনিয়োগকারীরা পুজিবাজারের প্রাণ। আর তাই ব্রোকার ছাড়া তো স্টক মার্কেট চলে না। সে কারণে তিন বছর আগে নিজেদের জন্য ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন নামে একটি রেজিষ্টার্ড সংগঠন চালু করা হয়। তাই এর সঙ্গে সম্পৃক্ত বিনিয়োগকারী এবং ব্রোকার্সদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।

ডিএসই ব্রোকার্স এ্যাসোসিয়েশনের শুরু বেশি দিনের নয়। তবে মাত্র তিন বছরে অনেক অর্জন রয়েছে ডিবিএ’য়ের। গত তিন বছরে অনেক কাজ হয়েছে। সিকিউরিটিজ এণ্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের অনেকগুলো আইন ছিল,যা যুগোযুগি ছিল না। পুঁজিবাজারের স্বার্থে সবার সংগে আলোচোনার মাধ্যমে সেসব আইন পূণর্গঠিন করা হয়েছে।

ট্যাক্সের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা ছিল। তা কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে এবং সম্ভব হয়েছে অনেকাংশে।
মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো মার্কেটে আসছিল না। তাদেরকে পুঁজিবাজারে অন্তভূক্ত করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অনেকে ৯৫ ভাগ শেয়ার নিয়ে রেখেছে,অথচ বাজারে শেয়ার ছাড়ছে না। ফলে মার্কেটের ট্রেড সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটাও সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে।

সরকার বা স্টক এক্সচেঞ্জ যদি কোন নতুন নিয়ম বা আইন চালু করে, তাহলে সেটা দেখবে কে? তা মার্কেটের জন্য উপযোগী কিনা বা ব্রোকার্সদের স্বার্থ বিরুদ্ধে যায় কি না, এর জন্য কমিশন আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে নেয়। এর জন্য মার্কেটের উন্নয়নে আমাদের বড় একটা ভূমিকা থাকে। মার্কেট প্রাইসিং,হাউজগুলোর সার্ভিস, স্টক মার্কেটের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান আমরা এখন দ্রুত দেথতে পাই। সার্বিকভাবে আমাদের মাধ্যমে মার্কেটের কনফিডেন্স লেভেলটাকে অনেক হাই করা যায়। মূল কথা ব্রোকার্সদের স্বার্থ সংশিষ্ট বিষয় এবং পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বিভিন্ন ভাবে সহয়তা প্রদানের লক্ষে আসলে এই সংগঠনের উৎপত্তি।

মার্কেটের উন্নয়নে ডিবিএ’য়ের ভুমিকা রয়েছে। ভবিষ্যতেও পুজিবাজারের উন্নয়নে কাজ করবে সংগঠনটি। অনেক সময় আইনগত জটিলতার মধ্যে পড়তে হয় বিনিয়োগকারীদের। তাই আইনগত সংস্কারেও মতামত দিয়ে ভুমিকা রাখবে ডিবিএ। মার্কেটকে বড় করার জন্য মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে বাজারে তালিকাভুক্ত করার জন্য কাজ করবে ডিএসই ব্রোকার্স এ্যাসোসিয়েশন। ওটিসি মার্কেট উন্নয়নে কাজ করার পরিকল্পনাও রয়েছে। কিছু কিছু কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর দুই,তিন বছর পর লভ্যাংশ দিতে পারে না। ফলে এক সময় তারা ওটিসিতে চলে যায়। যার কারনে বিনিয়োগকৃত অর্থ এক সময় অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। এতে করে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ সমস্যারও সুরহা হতে পারে। মার্কেট নিয়ন্ত্রণকারি সংস্থার নিকট সবার ভাবনাগুলো তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি সাংবাদিকদের ইতিবাচক লেখনির মাধ্যমেও পুঁজিবাজারের উন্নয়ন করা সম্ভব। এ ভাবনা থেকে সংবাদ মাধ্যমের ভ’মিকা নিশ্চিত করতে সাংবাদিকদের মতামত নেয়া হবে। যারা কিনা বৃহৎ আকারে বিনিয়োগ করার জন্য তৈরি আছেন। তারা দেশের পুঁজিবাজার অবজার্ভ করছে, দেখছে সার্বিক পরিস্থিতি। তারপর তাদের কনফিডেন্স বেড়েছে।

মার্কেটের আকার এখন অনেক ছোট। ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কিছুদিন আগেও মিউচুয়ালাইজড ছিল। সেখানে ব্রোকার্সরা থাকতো, শাসন করতো, বোর্ডে ব্রোকার্সদের অবস্থান থাকতো। আবার অনেকে মনে করেছে ব্রোকার্সরা কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট নিতো। ডিমিউচুয়াল আর মিউচুয়ালাজাইশনের মধ্যে পার্থক্য হলো স্টক মার্কেটে শেয়ার হোল্ডারদের মধ্যে যারা শেয়ার হোল্ড করতো এবং তাদের ইনডিপেন্ডেন্ট ডাইরেক্টার হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা এবং মিউচুয়ালাইজড হতো। সারা পৃথিবীতে দেখা গেল যে, সবাই মিউচুয়ালাইজড শেয়ারে আস্থা রাখে না। এজন্যই সারা বিশে^ ডিমিউচুয়ালাইজড স্টক এক্সচেঞ্জ চালু হয়েছে।

স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচুয়ালআইজেশন আইন,২০১৩ এর আলোকে দেশের স্টক এক্সচেঞ্জ এখন ডিমিউচুয়ালাইজড।
দেখুন ডিমিউচুয়ালাইজড হবার পর, আমরা মনে করেছিলাম মার্কেটটা আরো বেগবান হবে,বড় হবে। কিন্ত এখনও তা হয়নি। তাই আমাদের প্রথম কাজটাই হবে, মার্কেটকে আরো বড় করা, মার্কেটের ডেপ্থ বাড়ানো। আগে এক সময় জাঙ্ক শেয়ার নিয়ে লেনদেন হতো এখন কিন্ত সংবাদ প্রচারের কারণেই তা বন্ধ হয়েছে। ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে আমরা প্রতিটা হাউজে, প্রতিটা জেলায় সবার কাছে যাচ্ছি। সরকারের কমপ্লায়েন্স নিয়ে কা হচ্ছে। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের কনফিডেন্স অনেক বেড়েছে।

আমরা যখন ডিমিউচুয়ালাইজড হয়ে গেলাম, তখন আমাদের মাধ্যমেই স্টক এক্সচেঞ্জ গড়ে উঠেছে। তাই পুজিবাজারও এখন উন্নত দেশের বড় বড় মার্কেটের মত স্বচ্ছতা আর জবাবদিহিতার মধ্যে চলে আসছে। যার কারনে এখন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসছে। মার্কেটের ইতিহাসে বর্তমানে বিদেশি বিনিয়োগ তুলনামূলক বেশি।
যারা পুঁজিবাজারে অনৈতিকভাবে ফায়দা হাসিল করছে বা অস্থিতিশীল করছে,আইনের হাতে তুলে,দেয়া হচ্ছে। কিন্ত কোর্টে যদি তারা নিজেদের পক্ষে রায় নিয়ে বেরিয়ে আসে, সেখানে পুঁজিবাজার বা আমাদের কি করার থাকে। আমরা পুঁজিবারের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য এক হয়ে কাজ করছি। যাতে বিনিয়োগকারীরা সঠিকভাবে বিনিয়োগ করতে পারে। নিজের উন্নয়ন, দেশের উন্নয়ন করতে হলে শুধুমাত্র ব্যাংকের টাকায় সেটা সম্ভব না। পুঁজিবাজারে আসতে হবে এবং বাজারকে এগিয়ে নিতে হবে। পুঁজিবাজারে আসলে নিজের কনফিডেন্স লেভেল হাই করে আসতে হবে। উত্থান পতন তো থাকবেই, না হলে আর পুঁজিবাজার কেন?

ডিবিএ’র প্রথম ও প্রধান কাজ হলো- পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা। ওটিসি মার্কেট ও নন প্রফিটেবল কোম্পানীগুলোকে নিয়ে আমরা কাজ করবো। ইতিমধ্যে কতৃপক্ষের সাথে এ ব্যাপারে কথা হয়েছে এবং শিগগিরই আমরা কাজ শুরু করবো।

আমরা মাত্র শুরু করলাম পথ চলা, একদিনে চাইলেও আমরা সকল সমস্যার সমাধান করতে পারবো না। আমরা ধিরে ধিরে চেষ্টা করবো এগিয়ে যাবার। আমি তো মাত্র এলাম, আমি চেষ্টা করবো সবাইকে নিয়ে একসাথে পথ চলতে। সরকার, পুঁজিবাজার আর বিনিয়োগকারীদের সমন্বয়ের মাধ্যমে স্টক মার্কেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা থাকবে সবসময়। সংগঠনের সকল বোর্ড সদস্যদের মাধ্যমে সংগঠনকে একটা শক্ত কাঠামোয় নিয়ে যাব।

মোশতাক আহমেদ সাদেক
প্রেসিডেন্ট, ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন-ডিবিএ।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইনভেস্টমেন্ট প্রোমশন সার্ভিসেস লিঃ