বিনিয়োগ আকর্ষণে কর কাঠামোর সংস্কার চায় ব্যবসায়ীরা

সরকার স্থানীয় ও বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষনে নানামুখী উদ্যোগ নিলেও অন্যান্য চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি বিদ্যমান কর কাঠামোকে অন্যতম বাধা হিসেবে দায়ী করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলেন, এ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে প্রত্যাশিত বিদেশী বিনিয়োগ আসবে না।
আজ শনিবার বিদেশী বিনিয়োগ সংক্রান্ত এক অনলাইন সেমিনারে (ওয়েবিনার) তারা এসব কথা বলেন। ‘এফডিআই ফর এক্সপোর্ট ডাইভারসিফিকেশন এন্ড স্মুথ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন’ শীর্ষক ওয়েবিনারের আয়োজন করে অর্থনীতি বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)। এতে সহযোগিতা করে দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন ও গবেষণা সংস্থা রিসার্স পলিসি ইনটিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‌্যাপিড)।
ইআরএফের সহসভাপতি এম শফিকুল আলমের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন, এই পরিস্থিতিতে (করোনা অতিমারি) জিডিপি এগুচ্ছে, আপনারা আয় করতে পারছেন এটা ইতিবাচক।
ইআরএফ সাধারন সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা বক্তব্য দেন। বিষয়ভিত্তিক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন র‌্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যবসায়ী নেতা ও এমসিসিআইর সাবেক সভাপতি সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, বর্তমান কর প্রদান পদ্ধতি ব্যবসাবান্ধব নয়। তিনি বিনিয়োগ আকর্ষণে এলোমেলো চিন্তা না করে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করার পরামর্শ দেন।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান কর কাঠামোর সংস্কারের পরামর্শ দিয়ে বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে কর হার অনেক বেশি। এ সময় সরকারের কালো টাকা বিনিয়োগের প্রসঙ্গও তোলেন। তিনি বলেন, কর না দিলে সাড়ে ২২ শতাংশ লাভ। কেননা কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ থাকায় কর দিতে হয় মাত্র ১০ শতাংশ।
ড. এম এ রাজ্জাক করোনা ভাইরাসের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশী বিনিয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরেন। বাংলাদেশে প্রতিযোগী অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় বিদেশী বিনিয়োগ অনেক কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অথচ একই সময়ে কম্বোডিয়ায় এই বিনিয়োগের পরিমাণ ৩৪ বিলিয়ন ডলার আর ভিয়েতনামে ১৬১ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশে বার্ষিক বিদেশী বিনিয়োগের প্রবাহ জিডিপির মাত্র এক শতাংশের মতো আর ভিয়েতনামে তা প্রায় ৬ শতাংশ। অথচ সরকারের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাসহ অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য বিনিয়োগের বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ তথা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতির পথে থাকা বাংলাদেশ আগামী পাঁচ বছর রপ্তানিতে বিদ্যমান সুযোগ পেতে যাচ্ছে। এই সময়ের মধ্যেই ইউরোপ, কানাডাসহ বড় বাজারগুলোতে রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা ধরে রাখতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যদিকে বিনিয়োগ আকর্ষণে চলমান সীমাবদ্ধতা দ্রুত সমাধান করা বিশেষত ব্যবসা সহজ করার সূচকে উন্নতি করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বিদেশীরা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশ^ব্যাংকের এই সূচকটিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেন।
এমসিসিআইর সভাপতি ব্যরিস্টার নিহাদ কবীর বিনিয়োগ উপযোগি পরিবেশের উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বিনিয়োগ আকর্ষণে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা স্বীকার করেন। বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নয়নে বিডার পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থাগুলোর সমন্বয় বাড়ানো হচ্ছে বলে তিনি জানান।
এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ, র‌্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক ড. এম আবু ইউসুফ প্রমুখ।