বিশ্ববাজারে আমাদের ওষুধের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে

‘ওষুধের জন্য একটা প্যাটেন্ট রাইট আছে। উন্নয়নশীল দেশের জন্য এই প্যাটেন্ট রাইটের সময়সীমা নির্ধারিত থাকে। কেউ যদি এই প্যাটেন্ট রাইট নিয়ে প্রোডাক্ট তৈরি করে, তাহলে অন্য কেউ এই প্রোডাক্টগুলো অনুকরণ করে তৈরি করতে পারবে না। আমরা উন্নত দেশগুলোর মধ্যে পড়ি না বলে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত আমাদের প্যাটেন্ট ছাড় দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে, আমরা যদি র’ ম্যাটেরিয়াল বা কাঁচামাল কাভার করতে পারি, টেস্টিং প্রসিডিউর যদি ঠিক থাকে, তাহলে এ সমস্ত প্রোডাক্ট উৎপাদন করতে আমাদের কোনো বাঁধা নেই। চাইনিজ বা জার্মানরা কিন্তু ইচ্ছা করলেও এই প্রোডাক্টগুলো তৈরি করতে পারবে না সেেেত্র ওরা আমাদের দেশে চলে আসে, আমাদের টেকনোলজি সাপোর্ট দেয়। আমরা প্রোডাক্ট তৈরি করি এবং আমাদের এক্সপোর্টের সুযোগ আছে যেটা অন্যদের নই, সেই হিসেবে আমরা কিন্তু পারি। এটা অনেক বড় একটা সুযোগ, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমরা ওষুধ রপ্তানি করে দেশের জন্য বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারি। এটা যেমন আমার দেশের জন্য সুনাম, আমার কোম্পানির জন্য সুনাম, আমার ব্যক্তিগত সুনাম – সব কিন্তু একসূত্রে গাথা’। –ওষুধ শিল্পে ইউরোপের পুরষ্কার বিজয়ী টেকনো ড্রাগস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক,জালাল উদ্দিন আহমেদ আমাদের ওষুধ শিল্প নিয়ে আজকের বাজার ও আজকের বাজার টেলিভিশন এবি টিভির কাছে এমন আশাবাদের কথাই বলেছেন। তাঁর সঙ্গে আলাপচারিতার চুম্বক অংশ তাঁরই ভাষায় প্রকাশ করা হলো।

পুরষ্কার পেলো টেকনো ড্রাগস
‘বাইডস’ একটা স্প্যানিশ অর্গানাইজেশন, তারা আবার সমগ্র ইউরোপ নিয়ে একটা অ্যাসোসিয়েশন করেছে যাকে ‘বিজনেস ইনিশিয়েটিভ ডিরেকশন’ বলা হয়, ‘বাইডস’ এই পুরস্কারটা দেয়। স্মুদ বিজনেস প্লাস ইনোভেটিভ প্রোডাক্ট, ইনোভেশন এবং গুডস সাপ্লাইয়ের জন্য সাধারণত এই পুরষ্কারটা দেয় পাশাপাশি এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করা হয় । সে হিসেবে আমরাও জানি না, তারা আমাদের নামটা কোথা থেকে পেল? তারা দেখছে যে, আমরা ভালো ব্যবসা করছি, বাইরে রপ্তানি করছি, ওষুধ ব্যবসায় বাংলাদেশে আমরা তৃতীয় অবস্থানে আছি। জার্মানির মতো একটা দেশে আমাদের টেকনো ড্রাগস লিমিটেড প্রতিবছর কমপে ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার ব্যবসা করছে একটা কোম্পানির সঙ্গে। ‘হেলম জার্মান’ নামের একটি বৃহৎ ট্রেডিং কোম্পানি, ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডারের মাধ্যমে তারা আমাদের প্রোডাক্ট বিভিন্ন দেশে বিক্রয় করে । আর্ক অব ইউরোপ বলতে ইউরোপকে নিয়ে স্প্যানিশ এই অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন বিজনেসম্যানদের ইন্সপায়ার করা হয়, উৎসাহিত করা হয় । আমাদের ব্যবসা উৎসাহিত করার জন্য তারা গোল্ড ক্যাটাগরিতে পুরষ্কার দিয়েছে। আমরাও অবাক হয়েছি, তারা আমাদের সম্পর্কে কীভাবে জানলো?

ওষুধ উৎপাদন ও রপ্তানির সুদূরপ্রসারি সম্ভাবনা আছে
আমাদের দেশে ওষুধ উৎপাদন ও রপ্তানির জন্য কিন্তু এখনও একটা সুদূরপ্রসারী জায়গা রয়ে গেছে। লোকসংখ্যা অনুপাতে অলরেডি আমরা সাফিশিয়েন্ট ড্রাগস সাপ্লাই দিই, মানে আমরা আমাদের দেশে ওষুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখন আমরা বহির্বিশ্বে রপ্তানির জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি। দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে, আমরাও তার ব্যতিক্রম নই। এখন আমরা ওষুধ রপ্তানিতে বাংলাদেশের কোম্পানিগুলোর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে আছি। আমাদের ব্যবসা সামনের দিনগুলোতে আরো বাড়বে বলেই আমরা আশাবাদী। আমাদের পরিকল্পনা আছে ব্যবসা বাড়ানোর।

ওষুধের জন্য একটা প্যাটেন্ট রাইট আছে। উন্নয়নশীল দেশের জন্য এই প্যাটেন্ট রাইটের সময়সীমা নির্ধারিত থাকে। কেউ যদি এই প্যাটেন্ট রাইট নিয়ে প্রোডাক্ট তৈরি করে, তাহলে অন্য কেউ এই প্রোডাক্টগুলো অনুকরণ করে তৈরি করতে পারবে না। আমরা উন্নত দেশগুলোর মধ্যে পড়ি না বলে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত আমাদের প্যাটেন্ট ছাড় দেয়া হয়েছে। সেেেত্র, আমরা যদি র’ ম্যাটেরিয়াল বা কাঁচামাল কাভার করতে পারি, টেস্টিং প্রসিডিউর যদি ঠিক থাকে, তাহলে এ সমস্ত প্রোডাক্ট উৎপাদন করতে আমাদের কোনো বাঁধা নেই। চাইনিজ বা জার্মানরা কিন্তু ইচ্ছা করলেও এই প্রোডাক্টগুলো তৈরি করতে পারবে না সেেেত্র ওরা আমাদের দেশে চলে আসে, আমাদের টেকনোলজি সাপোর্ট দেয়। আমরা প্রোডাক্ট তৈরি করি এবং আমাদের এক্সপোর্টের সুযোগ আছে যেটা অন্যদের নই, সেই হিসেবে আমরা কিন্তু পারি। এটা অনেক বড় একটা সুযোগ, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমরা ওষুধ রপ্তানি করে দেশের জন্য বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারি। এটা যেমন আমার দেশের জন্য সুনাম, আমার কোম্পানির জন্য সুনাম, আমার ব্যক্তিগত সুনাম – সব কিন্তু একসূত্রে গাথা। আর্ক অব ইউরোপ আমাদের নামটাকে কিভাবে পেয়েছে? নিশ্চয়ই তারা বিচণতার বিচক্ষণতার সঙ্গে খোঁজ করেছে কোন কোম্পানি কোন দেশে কিভাবে ওষুধ বিক্রয় করে? কতটুকু ভালো, কতটুকু সুন্দর এবং কতটুকু সহজ উপায়ে তারা প্রোডাক্টগুলো জায়গামতো পৌঁছে দিতে পারছে? আমরা এর ব্যতিক্রম নই বলেই তাদের চোখে এই অ্যাওয়ার্ডটা পাওয়ার জন্য মনোনীত হয়েছি। সেজন্য ‘বাইডস’ কে আমরা ধন্যবাদ জানাই।

ওষুধ শিল্পে কিছু বাধা রয়েই যাচ্ছে
আমাদের দেশে ওষুধ শিল্পে কিছু বাধা আছে । আপনারা হয়তো জানেন যে,ওষুধ শিল্পের জন্য সরকার দেশের মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় একটা এপিআই পার্ক স্থাপনে জোরালোভাবে চেষ্টা করছে। আমি এখনও সন্দিহান যে, সেই এপিআই পার্কে আমরা পানি থেকে যত কিছু র’ ম্যাটেরিয়াল আমরা ব্যবহার করবো, সবই কিন্তু আমাদের কিনে আনতে হবে। আমি এখনও দুশ্চিন্তায় আছি, যেসব র’ম্যাটেরিয়ালস ইমপোর্ট করে সেই ইম্পোর্টেড আইটেম দিয়ে আমরা যে প্রোডাক্ট বানাবো, সেই প্রোডাক্টের কস্টিং এবং বাইরের কস্টিং এক হবে কিনা। যদি আমরা খরচাপাতিতে না এগোতে পারি, আমরা যতই তৈরি করি, আমরা যতই টেকনোলজি খাটাই, প্রকৃতপে কিন্তু আমরা টিকে থাকব না। যেরকম আমাদের আগে ছিলো অ্যামোক্সিলিন, অ্যাম্পিসিলিন -এগুলো কিন্তু আমাদের দেশে বেশ কয়েকটা কোম্পানি তৈরি করতো। প্রকৃতপে দেখা যাচ্ছে যে, ওনাদের যে রেট এবং আমরা ইমপোর্ট করি যে রেট, প্রায় ৫০% কম হয়। দেশের আইটেম কিনে লস করলে, তাহলে তো ইমপোর্টের দিকে ধাবিত হবো। প্রকৃতপে ওই জায়গাটাতে সরকারের দৃষ্টি দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি। উৎপাদন খরচ কমিয়ে বহির্বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা প্রোডাক্ট তৈরি করতে পারলেই প্রোডাক্টটাকে স্থায়ীভাবে উৎপাদন এবং বহির্বিশ্বে আমরা এক্সপোর্ট করতে পারবো। শুধু র’ম্যাটেরিয়ালস আমাদের দেশের প্রোপটে করলেই হবে না কিন্তু। চিন্তা করতে হবে, যে প্রোডাক্টটা তৈরি করবো, তা আমাদের দেশের চাহিদা মিটিয়ে এক্সপোর্টও করতে পারবো। এক্সপোর্ট করার মতো চিন্তা-ভাবনা করতে হবে, তাহলেই কিন্তু একটা কোম্পানি সুন্দরভাবে টিকে থাকতে পারবে।

নকল কিংবা ভেজাল ওষুধ এবং বিশেষজ্ঞ মতামত
নকল বা ভেজাল ওষুধ বলতে আনলে কী বুঝায়? –এই বিষয়টি কিন্তু আমাদের প্রথম বুঝতে হবে। নকল বা ভেজাল যারা বলেন, তারা এর ডেফিনেশন জানেন কিনা, সেটা নিয়ে আমি একটু সন্দিহান। নকল বা ভেজাল হবে কোনটা? ধরেন, স্কয়ার একটা ওষুধ তৈরি করছে, সেই ওষুধটা ভালো চলছে। আমি যদি সেই ওষুধ একই নাম দিয়ে মোড়ক, প্যাকেট বানিয়ে বাজারে সরবরাহ করি তাহলে সেটা হবে নকল। -এরকম মনোবৃত্তি দেশের কোনও ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির আছে কিনা সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। আবার ধরেন, আপনি একটা প্যারাসিটামল সিরাপ বা একটা অ্যামোক্সিলিন সিরাপের কথা বললেন, সেই আমোক্সিলিন সিরাপে অ্যামোক্সিলিন না দিয়ে যদি অন্যকিছু দিয়ে আমি তৈরি করি, এটা কিন্তু চোখে দেখে আপনি বুঝতে পারবেন না। এটার জন্য ক্যামিকেল টেস্ট লাগবে। টেস্ট করার পরেই আপনি বলতে পারবেন যে, এটা ভেজাল ওষুধ। আমাদের ওষুধ এক্সপার্ট, যারা দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো পরিদর্শন করে বিভিন্ন রিপোর্ট দিয়েছে, আমার মনে হচ্ছে যে, ওনারা নকল এবং ভেজাল কথাটা উল্লেখ করেছে প্রত্যেক রিপোর্টে। আসলে কোনটা নকল কোনটা ভেজাল এক্সপার্টদের সেই জ্ঞান আছে কিনা -এ ব্যাপারে আমি সন্দিহান। আমি কারও নাম বলতে চাচ্ছি না, যাদের আমাদের সরকার এক্সপার্ট মনে করছে, ওইসব এক্সপার্টদের সেই অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান সত্যি সত্যিই আছে কিনা তা ভালোভবে দেখতে হবে ।

নিবন্ধিত কারখানা ভেজাল ওষুধ বানাবে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়
একটা ওষুধের সংজ্ঞা যদি আমরা বলতে যাই, মনে করেন একটা ৫০০ মিলিগ্রাম প্যারাসিটামল ট্যাবলেট। আমি ৪৫০ মিলিগ্রাম দিলাম, সর্বোচ্চ ৫% প্লাস-মাইনাস অ্যালাউড বিপি বা ইউএসপি অনুসারে। এর মধ্যে থাকলেই আমরা বলবো এটি স্ট্যান্ডার্ড। সারা বিশ্বেই এটা একই রকম। যখনই এটা বাইরে আসবে, ধরেন ৪০০ মিলিগ্রামে চলে আসবে, এটা হবে সাব-স্ট্যান্ডার্ড। যদি আমি ৫০০ -এর জায়গায় ৬০০ মিলিগ্রাম দিয়ে দিই এটাও সাব-স্ট্যান্ডার্ড। এটাকে কিন্তু সুপার স্ট্যান্ডার্ড বলতে পারবেন না। কারণ রেঞ্জ অনুসারে এটা স্ট্যান্ডার্ড বা সাব-স্ট্যান্ডার্ড, সুপার স্ট্যান্ডার্ড বলে এরকম কিছু নেই। মনে করেন, কম দামী একটা ট্যাবলেট, কেমিক্যালের দাম পড়ে হয়তো পাঁচ পয়সা। অন্য সব খরচ মিলিয়ে পড়ে হয়তো ৫০ পয়সা। সরকার একটা সীমা দিয়ে দেয় যে, এত পার্সেন্টের বেশি যেতে পারবে না। মনে করেন ১০০% এর বেশি যেতে পারবে না, তাহলে এটার দাম হলো এক টাকা। সেখানে ৫ পয়সার কেমিক্যাল বাঁচানোর জন্য সে ৬ পয়সার ভেজাল মিশাবে না। তাহলে কি ভেজাল মিশাবে ৫ পয়সার জন্য? ভেজালটা আমার মনে হয় একটু সন্দেহের ব্যাপার। এই ধরনের মনোবৃত্তি নিয়ে কেউ ইন্ড্রাস্ট্রি করে না। তবে হ্যা, ভেজাল থাকতে পারে, কোথায়? মনে করেন কিছু কিছু লোক ঈর্ষান্বিত হয়ে, মিটফোর্ড বেইজড কিছু বিজনেস আছে, ওনাদেরও কিছু সাব-স্ট্যান্ডার্ড থাকে, বিভিন্ন জায়গাতে। চুরি করে ওরা বানায়, এটাকে বলতে পারেন নকল। কিন্তু একটা কোম্পানির ওরুধকে আপনি নকল বলতে পারেন না। কোম্পানি তৈরি করছে বৈধ লাইসেন্স এবং রেজিস্ট্রেশন নিয়ে, তাকে আপনি কোনও দিনই বলতে পারেন না যে, ভেজাল ওষুধ। সে কিন্তু অন্য কারও ওুষধ নকল করে তৈরি করছে না। নির্দিষ্ট কেমিক্যাল না দিয়ে ভিন্ন কিছু দিলে সেটাই হবে ভেজাল। ভিন্ন কেমিক্যালস দেবে একটা রেজিস্টার্ড কোম্পানি, এটা আমার বোধগম্য নয়।

রেজিস্টার্ড ফার্মেসি থেকে ওষুধ কেনা নিরাপদ
আপনারা রেজিস্টার্ড ফার্মেসি থেকে ওষধটা কেনেন, একটা রেজিস্টার্ড ফার্মেসি কোনও দিনই ভেজাল ওষুধ রাখবে না। যে ফার্মেসির কোনও লাইসেন্স নাই, ওরা মিটফোর্ডের সাইডে যে নকল ভেজাল ওষুধ তৈরি করে, ওদের ওষুধ রেখে ওরা বিক্রি করে। যদি একটা মডার্ন ফার্মেসি থেকে আপনারা ওষুধটা কেনেন, দেখবেন কোম্পানির নাম, ড্রাগস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের রেজিস্ট্রেশন নম্বর (ডিএআর নম্বর) আছে -এই নম্বরটা অবশ্যই থাকতে হবে। তারপর ম্যানুফ্যাকচারিং লাইসেন্স নম্বরটা থাকবে এবং এক্সপায়ার ডেট থাকতে হবে। -এই সবগুলো যদি থাকে, আপনি মনে করবেন যে, ওষুধটা ঠিক আছে। আপনি মানসম্মত ফার্মেসি বা নিবন্ধিত ফার্মেসি থেকে ওষুধ যদি আপনি নেন, তাহলে আপনার প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

মহল্লার ফার্মেসির রেজিস্ট্রেশন করা নেই এরকম ফার্মেসি কিন্তু করা উচিত না। যেমন, বাংলাদেশ সরকারের একটা নীতিমালা আছে যে, লাইসেন্স ছাড়া কোথাও কেউ মেডিসিন বিক্রি করতে পারবে না, প্রেসক্রিপশন ছাড়াও বিক্রয় করা যাবে না। আমার অনুরোধ থাকবে, যারা ওষুধ কিনবেন, তারা যেন সবসময় ওষধটা রেজিস্টার্ড অর্থাৎ বৈধ লাইসেন্সধারী কোনো ফার্মেসি থেকে ক্রয় করেন।

অ্যালোপ্যাথি না অন্যকিছু
প্রত্যেকটা মেডিসিন কোনও না কোনও সোর্স থেকে আসে। আপনি ধুতুরা বীজকে যদি বিশ্লেষণ করেন, দেখবেন যে ৪৫টার মতো অ্যালকালয়েড আছে। এর মধ্যে দুইটা কি তিনটা অ্যালকালয়েড আমাদের কাজে লাগে। একটা অ্যালকালয়েড হচ্ছে থায়ো-সায়ানাইড যেটা পেইন কিলার হিসেবে ওরাল ট্যাবলেট হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। একটা হচ্ছে অ্যাট্রোপিন সালফেট, এটা পেইন কিলার হিসেবে ডাইরেক্ট ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয়। তো এটা কিন্তু ওটা থেকে আইসোলেট করে নিতে হয়। অ্যালোপ্যাথিকের কাজটা হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালার প্রদত্ত যে ন্যাচারাল সোর্স আছে, সেগুলোর একটার অনেকগুলো গুণ আছে। কিন্তু মেডিসিনের কাজ মাত্র একটার উপরে। এই প্ল্যান্টের অ্যালকালয়েড কোনটা ওখানে কাজ করছে নির্দিষ্ট রোগের উপরে, সেটাকে আইসোলেট করে সুন্দর একটা ডোজ বানিয়ে দেওয়া এবং ওইটা হচ্ছে অ্যালোপ্যাথিক, যে সেপারেট করে নিয়ে আসে।

আর যাকে আমরা আয়ুর্বেদিক বলি, ইউনানী বলি, হারবাল বলি; হার্ব ছেঁচে দিয়ে দিচ্ছি, তাতে কী হয়? আজকে যদি আপনি ধুতুরার বীজ ছেঁচে খাইয়ে দেন, তাহলে কী হবে? পাগল হয়ে যাবে নাহলে মারা যাবে, আবার তার ব্যথাও কিন্তু কমবে। আপনি কোনটা নিবেন? তাহলে ডোজটাকে সেট-আপ করা। ডোজ সেট-আপ করতে হলে তার কেমিক্যালটাকে সেট-আপ করতে হবে। যেই কেমিক্যালটা একটা মানুষের জন্য ডোজ হবে এতটুকু। তাহলে, আপনাকে অ্যালোপ্যাথির দিকে ধাবিত হতে হবে। আর ওইটা যে খাবেন, কোনও ডোজ থাকবে না। কাজ করতেও পারে, আবার ওভারডোজে সে মারাও যেতে পারে; ভমিটিংও হতে পারে, অনেক কিছুই হতে পারে। সেই েেত্র আমি মনে করি যে, হারবাল বলেন, ইউনানী বলেন অথবা আয়ুর্বেদী বলেন, এইগুলোর উপর ভরসা কম করে অ্যালোপ্যাথিতে ভরসাটা করলে আমরা প্রোপার অ্যাকশনটা পাবো। ওইখানে অ্যাকশন পাবেন না, আমি কিন্তু বলি না। অ্যাকশন আছে, কিন্তু সাইড ইফেক্টটা কতটুকু, এরা যে বলছে সাইড ইফেক্ট নাই। অ্যাকচুয়ালি আমি তো ধুতুরা দিয়ে প্রমাণ করলাম যে, ৪৫টি অ্যালকালয়েড। একটা অ্যালকালয়েড কাজ করছে, ১০টা অ্যালকালয়েড তি করবে। আপনি তো এটা জানেন। আপনি বলে দিলেন যে, সাইড ইফেক্ট নাই; সেই নাই ই চলছে। ডেভেলপের দিকে যাচ্ছে, আমাদের মতো এমন দেশগুলোর লোকেদের এমন চিন্তা করতে হবে যে, আমরা হারবাল খাবো, আমরা ইউনানী খাবো, নাকি আমরা অ্যালোপ্যাথিক ওষুধগুলো খাবো। অ্যালোপ্যাথির সাইড ইফেক্ট আছে। নাই যে, এটা বলবো না; কিন্তু কতটুকু? তা বিবেচনা করতে হবে।

আমি একজন ইনোভেটিভ মানুষ
আমি একজন ইনোভেটিভ মানুষ। টেকনোড্রাগস যে প্রোডাক্টগুলো তৈরি করে, তা নিয়ে একটু ইনোভেটিভ ওয়েতে চিন্তা করে। বিজনেসের চেয়ে চিন্তা করি যে, আমাদের দেশে কোন প্রোডাক্টগুলো ইমপোর্ট হয়? সেই ইমপোর্টেড প্রোডাক্টগুলো যদি আমরা বানাতে পারি, তাতে কী হয়? একদিকে যেমন ফাইন্যান্সিয়ালভাবে দেশের ফরেন কারেন্সি সেভ করতে পারি, দ্বিতীয়ত আমার কোম্পানি ডেভেলপ করছে। তৃতীয়ত আমি হয়তো বড় বিজনেস করতে পারলাম না, আমাকে ফলো-আপ করে অন্য বড় একটা কোম্পানি এসে এই প্রোডাক্ট দিয়ে হিউজ বিজনেস করছে। আমি গর্ব অনুভব করি এজন্যই যে, আমার এই ইনোভেটিভ ওয়ার্কটা কাজে লাগিয়ে কেউ কেউ অনেক বড় বড় বিজনেস করছে। আমাদের দেশে সেই সুযোগ রয়ে গেছে যে, নতুন নতুন ইনোভেটিভ প্রোডাক্ট বাজারে আনা। এবং এটিকে প্রথম কেউ আনতে চায় না, দেখে ছোট বিজনেস। কিন্তু যখনই এসে পড়ে, দেখে যে, না এটার মার্কেট ব্যাপক বাড়ানো যায়, তখন কিন্তু বড় কোম্পানিগুলো আসে। এসে কিন্তু ওরা বড় বিজনেস ঠিকই করছে, আমাদের মতো কোম্পানিগুলো পড়ে থাকে কারণ আমরা মার্কেটিংটা সেভাবে করতে পারি না। কিন্তু আমাদের প্রোডাক্ট ইনোভেটিভ প্রোডাক্ট। দেশে এসব প্রোডাক্টের ভালো ভবিষ্যত আছে, যে প্রোডাক্ট দিয়ে আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণ ফরেন কারেন্সি আর্ন করতে পারবো। আমরা এ দেশকে সমৃদ্ধ করতে পারবো শুধু ফরেন কারেন্সি দিয়ে, যদি সরকার থেকে আমাদের কিছু কিছু জায়গাতে ছাড় দেওয়া হয়। যেমন, এখন অ্যান্টি-ক্যান্সারের কিছু কিছু প্রোডাক্টে আমরা ভ্যাট এবং ডিউটি ফ্রি পাচ্ছি। কিছু কিছু প্রোডাক্ট যেগুলো ইমপোর্ট হয়ে আসছে সেগুলোতে ভ্যাট নাই, কিন্তু আমরা তৈরি করতে গেলে সেগুলোতে ভ্যাট দেওয়া লাগে, ট্যাক্স দেওয়া লাগে, ডিউটি দেওয়া লাগে। সেেেত্র আমি বলবো যে, অ্যান্টি-ক্যানসার ড্রাগস, হরমোন ড্রাগস, যতকিছু আছে -এগুলোর প্রয়োজনীয়তা বুঝে এগুলোকে ভ্যাট ফ্রি করে দেওয়া, ট্যাক্স ফ্রি করে দেওয়া এবং পারলে তাদেরকে এক্সপোর্টের েেত্র যদি সম্ভব হয়, গার্মেন্টসের মতো কিছু সাবসিডি দেওয়া, উৎসাহিত করা। তাহলে কিন্তু কোম্পানি ডেভেলপ করবে, দেশ ডেভেলপ করবে, আমাদের কোম্পানিগুলো উত্তরোত্তর উন্নত হবে, এটা আমি কামনা করি, এবং এটা অবশ্যই হবে যদি সরকারের এদিকে একটু দৃষ্টি থাকে। তো এই সমস্ত ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদ বা সচিবালয়ের মতো জায়গাতে যদি ফার্মাসিস্ট বা ভালো কেমিস্ট যারা এ সম্পর্কে নলেজ রাখেন এমন মানুষ যদি থাকেন, তাহলে দেশকে উন্নত করা সহজ হবে বলে আমি মনে করি।

প্রসঙ্গ বাজেট, ভ্যাট
এ বছর আমরা দেখলাম যে সরকার বাজেট পাশ করলেন এর মধ্যে কারো কারো জন্য ২০% কারো নেই। তো কপোরেট বিজনেসের ক্ষেত্রে সবার জন্য ভ্যাট মিনিমাম ২২-২৫% হলে ভালো হয়। বাজার অংশীদার, মার্কেট মেকারের মাধ্যম হিসেবে যারা কাজ করেন, মার্চেন্টব্যাংক, অ্যাসেটমানেজমেন্ট কোম্পানি, স্টক ব্রোকার,অল্টারনেটিভ ফান্ড ম্যানেজার, ভেনচার ক্যাপিটাল সবার ট্যাক্স ২২-২৫%-এর মধ্যে একটা সম অবস্থানে থাকা উচিত। কারণ কোথাও ২০% আছে আবার কোথাও ৭.৫০০% আছে। এটাকে কমিয়ে যদি সবার জন্য সমানভাবে করা যায় তাহলে সরকারের কোনও ক্ষতি হবে না।

জালাল উদ্দিন আহমেদ
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
টেকনো ড্রাগস লিমিটেড