বেতনা ও মরিচ্চাপ নদী খনন প্রকল্পে আইডব্লিউএম’র সুপারিশ উপেক্ষিত!

সাতক্ষীরায় বেতনা ও মরিচ্চাপ নদী খনন প্রকল্প থেকে টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) প্রস্তাবনা বাতিল করায় প্রকল্প থেকে সরকারের প্রত্যাশা অর্জন এবং নদীর ভবিষ্যত নিয়ে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

নদীর ভরাট রোধ ও জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ কমাতে সরকার চার বছর মেয়াদী ৪৭৫ কোটি ২৬ লাখ ১৪ হাজার টাকার নদী খনন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। সরকারের নেয়া সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং ১, ২, ৬-৮, ৬-৮ (সম্প্রসারণ)-এর নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে তালাসহ সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া, দেবহাটা ও আশাশুনি উপজেলার প্রায় ১৫ লাখ মানুষ জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হবে। এই প্রকল্পে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) দুটি নদীর অববাহিকায় টিআরএম বাস্তবায়নের প্রস্তাব রাখলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় টিআরএম প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। ফলে এই প্রকল্প কতটুকু সফল হবে তা নিয়ে রীতিমত সংশয় দেখা দিয়েছে।

বেতনা রিভার বেসিন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রউফ বাবু জানান, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জলাবদ্ধতা সমস্যাটি প্রায় চার দশক ধরে চলে আসছে। সমস্যাটি সমাধান করার জন্য সরকার বিভিন্ন সময়ে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। বেশিরভাগ সময়ই পলি অপসারণ, বাঁধ নির্মাণ, স্লুইস গেট স্থাপন, খাল পুনঃখনন প্রকল্প অগ্রাধিকার দিয়ে পরিকল্পনা নেয়া হয়। কিন্তু এসব কার্যক্রমে জলাবদ্ধতার স্থায়ী নিরসন হচ্ছে না বরং এই অঞ্চলের নদীগুলো ধ্বংস হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘নদীগুলো খনন করার পর স্থায়ীভাবে নাব্যতা ধরে রাখতে হলে টিআরএরম’র কোনো বিকল্প নেই।’

কেন্দ্রীয় পানি কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ এবিএম শফিকুল ইসলাম জানান, সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া, আশাশুনি ও তালা উপজেলার নদীগুলো পলি ভরাটের কারণে মৃতপ্রায়। বর্তমানে এসব এলাকায় প্রতিবছর প্রায় ৬ থেকে ৮ মাস জলাবদ্ধতা থাকে। চলতি বছরেও জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারণ করেছে। পাশাপাশি পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ইতোমধ্যে জনস্বাস্থ্যের ব্যাপক অবনতি ঘটেছে এবং খাবার পানির সঙ্কটও চলছে। অন্যদিকে, কর্মসংস্থানের অভাবে কাজের সন্ধানে এলাকার মানুষ স্থায়ী-অস্থায়ীভাবে এলাকা ত্যাগ (অভিবাসিত) করছে।

তিনি বলেন, ‘বেতনা ও মরিচ্চাপ নদী দুটি জোয়ার-ভাটার নদী। সে কারণে জোয়ার-ভাটার নদীর নাব্যতা রক্ষায় টিআরএম গুরুত্বপূর্ণ। বেতনা ও মরিচ্ছাপ নদী খনন প্রকল্পে আইডব্লিউএম’র  সমীক্ষায় স্পষ্ট করে বলা হয়, টিআরএম বাস্তবায়ন ছাড়া নদী খনন প্রকল্পটি টেকসই হবে না। কিন্তু আইডব্লিউএম’র সমীক্ষা ও সুপারিশকে শেষ মুহূর্তে উপেক্ষা করা হয়েছে। এর ফলে নদী খনন প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জিত হবে না।’

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-২ শুধাংশু কুমার সরকার বলেন, আইডব্লিউএম’র সমীক্ষা রিপোর্টে টিআরএম’র কথা থাকলেও পরিকল্পনা কমিশনে টিআরএম ছাড়াই প্রকল্প অনুমোদন হয়। সেজন্য টিআরএম বাদেই নদী দুটি খনন করা হবে।

সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, টিআরএম ছাড়া বেতনা ও মরিচ্চাপ খনন প্রকল্প টেকসই হবে না।

‘জোয়ার ভাটার কারণে আমাদের এই অঞ্চলের নদীগুলোর যে অবস্থা তাতে টিআরএম জরুরি। টিআরএম বাস্তবায়ন ছাড়া এই প্রকল্প অকার্যকর এবং সরকারি অর্থের অপচয় হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি,’ বলেন মুস্তফা লুৎফুল্লাহ।