ব্যবসা বান্ধব কর পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে : এনবিআর চেয়ারম্যান

কর আহরনের ক্ষেত্রে ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ নিশ্চত করার আশ্বাস দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান (এনবিআর) মো. মোশারফ হোসেন ভুঁইয়া। গত ২ মার্চ, শনিবার ঢাকা কর অঞ্চল-১ এর অংশগ্রহনমূলক রাজস্ব সংলাপের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের দেশে ১৮ কোটি মানুষ কিন্তু সরাসরি করদাতার সংখ্যা এক কোটিও নেই। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আরও এগিয়ে নিতে কর জিডিপির হার বাড়াতে হবে। বর্তমানে আয়কর রিটার্ন জমা হয় ২০ লাখেরও কম। আয়কর জিডিপি না বাড়লে দেশের উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্থ হবে। কারণ, বিদেশী ঋন ২০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। কর আদায় না বাড়ালে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেবে। এ ঋণ নেওয়ার ফলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে যাবে। সেজন্য কর আদায় বাড়াতে হবে। করের আওতা বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে করহার কমিয়ে আওতা বাড়ানোর জন্য অর্থমন্ত্রীও একমত হয়েছেন। এ নিয়ে পলোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি কাজ করছে। এছাড়া করদাতা বৃদ্ধির জন্য বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ অন্যান্য খাতে জরিপ শুরু হয়েছে। তথ্য সংগ্রহের সময় করদাতাদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একজন করদাতা হয়ত আগে কর দেয়নি। পুরনো বিষয় জিজ্ঞেস করলে করদাতাদের মধ্যে ভীতি তৈরি হবে। সেজন্য আগের করের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা যাবে না। ভীতি নয় বন্ধুত্বের আচরণ করে আমরা করদাতা বাড়াতে চাই।
তিনি বলেন, আয়কর দিতে জনসাধারনের মধ্যে নেতিবাচক ধারনা রয়েছে। এটাকে দূর করতে কর্মকর্তাদেরকে ভালো ব্যবহার করার মাধ্যমে এই ভীতি দূর করতে হবে। কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কর কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রত্যেককে রাজস্ব-বান্ধব ও সৎ হতে হবে। নিজের নয় দেশের স্বার্থে কাজ করতে হবে। অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারিদের শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই, যাতে করদাতাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলায়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের গণপরিবহন খাত অনেক বড় হয়েছে। এ খাত থেকে কর আদায়ের সময় এসেছে। কিন্তু এ খাতে কর বৃদ্ধি করতে গেলে একটি গোষ্ঠি ঐক্যবদ্ধভাবে তা ব্যাঘাত ঘটায়। যাত্রীদের উপর ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। ফলে কর আদায় করা যায় না। তাই সময় এসেছে আলোচনার মাধ্যমে এ খাত থেকে কর আদায় বৃদ্ধি করার। অনেকেই সম্পত্তি কিনে রাখে। এক সময় এর দাম অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু বৃদ্ধি করা দাম অনুযায়ী কর আদায় হয় না। তবে এ সম্পত্তিকেও করের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। এছাড়া সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশন ফি অনেক বেশি, কিন্তু কর কম। আমাদের প্রস্তাব, রেজিস্ট্রেশন ফি কমিয়ে করের আওতা বাড়ানো উচিত।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এনবিআর সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) কালিপদ হালদার বলেন, আমরা করদাতাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে যাই কিছু করি না কেন, করদাতাদের মধ্যে এখনো ভীতি রয়েছে। সে অলীক ভীতি দূর করতে আমরা কাজ করছি। এ বছর থেকে কর আহরণ পদ্ধতি আরো সহজ করা হবে। আধুনিক কর ব্যবস্থায় উৎসে কর ভূমিকা রাখছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ পদ্ধতি কর প্রদান করে বছর শেষে করদাতারা রিবেট পায়। আমাদের সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা তা চালু করতে পারি না। তবে এ ক্যালেন্ডার বছর থেকে কয়েকটি উৎসে কর অঞ্চল গড়ে তোলা হবে।
সোনালী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, সোনালী ব্যাংকের ১ হাজার ২১৫টি ব্রাঞ্চ জিডিটাল করা হয়েছে। ডিজিটাল করার আগে এসব ব্রাঞ্চে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার উৎসে কর আদায় হতো। ব্রাঞ্চ ডিজিটাল ও হোম সার্ভিস চালু করার ফলে প্রায় ৬’শ কোটি টাকার উৎসে কর আদায় হয়। এছাড়া ব্যাংকের লোকসান এবং দুর্নীতি অনেক কমে গেছে। কর সেবা জিডিটাল করলে হবে না, দোরগৌড়ায় পৌঁছে দিলে কর আদায় অনেক বেড়ে যাবে। অনুষ্ঠানে কর অঞ্চল-১ এর কমিশনার নাহার ফেরদৌসী বেগমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন, কাতার এয়ারওয়েজ বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার জয় প্রকাশ নায়ার। অনুষ্ঠানে কর অঞ্চল-১ এর আওতাধীন ৯৮টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ৩৪টি এয়ারলাইন্স এর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।