ব্যাংকের ৯৮% গ্রাহকের বিমা নিয়ে ধারণা নেই: বিআইবিএম

এক দশকে ব্যাংকিং খাত দ্রুত এগিয়ে গেলেও গ্রাহকদের একটি বড় অংশের বিমা খাত সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নেই।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) ব্যাংক গ্রাহকদের অনুধাবন এবং আচরণ সম্পর্কিত এক গবেষণার তথ্যে বলা হয়, ৯৮ শতাংশ ব্যাংক গ্রাহকের বিমা সম্পর্কে ধারণা নেই এবং ৪৭ শতাংশ গ্রাহকের ফাইন্যান্সিয়াল এস্টেটমেন্ট সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। তবে ৫২ শতাংশ আমানতকারী মনে করেন ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা খারাপের দিকে গেলে তা খুব ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া বাংলাদেশের ৮১ শতাংশ গ্রাহক প্রথমে সঞ্চয়ী হিসাব খোলে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) মিলনায়তনে রিচার্স অ্যালামানক অনুষ্ঠানে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে ব্যাংকের ওপর ১০টি বিভিন্ন ধরণের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান। বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্ণর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, বিআইবিএমের সাবেক চেয়ার প্রফেসর এস এ চৌধুরী, বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলী বক্তব্য রাখেন।

সূচনা বক্তব্য দেন বিআইবিএমের পরিচালক অধ্যাপক ড.প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী। এতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্ণর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রমে আগের চেয়ে গতিশীলতা আসার পাশাপাশি সমন্বয় জোরদার হয়েছে। পুরো কার্যক্রমে সমন্বয় করার জন্য একটি উইং খোলা হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন কার্যক্রম আরও কার্যকর করার জন্য আগেই একটি পূর্ব পরিদর্শন প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। যে সব শাখায় অনিয়মের আশঙ্কা থাকে সেখানে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কোনো ব্যাংক ভুল তথ্য দিলে জরিমানা করার পরিকল্পনা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্ণর আরও বলেন, নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে আরও দক্ষতার সঙ্গে গ্রাহকদের সেবা দিতে হবে। নতুন ব্যাংকিং সেবার পাশপাশি মান আরও বাড়াতে হবে। এসব করতে পারলে গ্রাহকদের আস্থা পাওয়া যাবে।

বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকিং খাতের ওপর গুণগত গবেষণা এ খাতকে আরও এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে। এসব গবেষণায় আরও হালনাগাদ তথ্য ব্যবহার করে সুপারিশ আকারে সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্ণর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা উইংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতের বিভিন্ন ধরণের গবেষণা সংগ্রহ এবং সমন্বয় করবে। তিনি বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অনিয়ম হচ্ছে। ব্যাংক খাতের বাইরে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বিকল্প পদ্ধতি বের করতে পারলে এসব অনিয়ম বন্ধ হবে।

বিআইবিএমের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর এস এ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকগুলোর ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের অবস্থা খুব খারাপ। এ দিকে ব্যাংকগুলোকে আরও বিনিয়োগ করতে হবে।

তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর নতুন কোন সেবা নেই। এক্ষেত্রে তিনি ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্টরিং, ভেনচার ক্যাপিটালসহ বিভিন্ন নতুন সেবা আরম্ভ করতে বলেন। বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রেটিং কার্যক্রমকে আরো সমন্বয় করতে হবে। ব্যাংকের দেওয়া তথ্যের ওপর নির্ভর না করে ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পরিদর্শনের পর রেটিং করলে বাস্তব চিত্র উঠে আসবে।

গবেষণা প্রতিবেদনের মধ্যে রয়েছে- এসএমই ক্লাস্টার ডেভেলপমেন্ট:ইমপ্লিকেসন ফর ব্যাংক; অ্যান অ্যাসেসমেন্ট অফ অন সাইট সুপারভিশন অফ বাংলাদেশ ব্যাংক; কস্টিং, অ্যাকসেসিবিলিটি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল অ্যাসপেক্টস অফ অ্যানুয়াল রিপোর্ট অফ ব্যাংকস ইন বাংলাদেশ; ইস্যুস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জস ফর ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং ইন বাংলাদেশ ইন দি পারসপেকটিভ অফ গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট; ফাইন্যান্সিং পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশীপ (পিপিপি) প্রজেক্টস ইন বাংলাদেশ: অ্যান অ্যাসেসমেন্ট ফর ফিউচার স্ট্রাটেজি; ব্যাংক ফাইন্যান্স ইন লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং স্মল এন্টারপ্রাইজেস ইন বাংলাদেশ: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড পসিবল ইননোভেসন; ট্রেইনিং ইফেকটিভনেস ইন দ্যা ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রসেস অফ ব্যাংকস; প্রমোটিং গ্রীন ইকোনমি থ্রো গ্রীন ব্যাংকিং: বাংলাদেশ পারপেকটিভ; এ স্টাডি অফ দি পারসেপসন অ্যান্ড বিহেভিয়ার অফ দি ডিপোজিটরস ইন দি ব্যাংকিং সেক্টর অফ বাংলাদেশ।

এছাড়া ইমপ্যাক্ট অফ মোবাইল ব্যাংকিং অন ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুসন ইন বাংলাদেশ বিষয়ক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।