ব্র্যান্ডিং হবে দেশের পুঁজিবাজার-শফিকুল আলম,এফসিএ

বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’র উদ্যোগ বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে কেমন প্রভাব পড়বে : সম্ভবত আমিই প্রথম মিডিয়ার কাছে বলেছিলাম যে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলো কেন ভালো করে? বাংলাদেশের অনেক বটমনেক আছে, তারপরও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলো ‘ভেরি ফোকাস অন দেয়ার হিউম্যান রিসোর্সেস’। ওখানে কিন্ত ব্র্যান্ডিং মার্কেটিং প্রয়োজন হয়। আমি বলেছিলাম, আমাদের একটা স্ট্রং ব্র্যান্ড দরকার। বিশেষ করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের ব্র্যান্ডিং দরকার। সে অর্থে এ আয়োজনকে কেন্দ্র করে, সাকিব আল হাসানকে ব্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করা হয়েছে। এটা ভালো উদ্যোগ।

আমাদের দেশে অনেক বড় বড় ও ভালো কোম্পানি আছে, যারা প্রফিট মেক করছে। তাদের ভালো ব্যবস্থাপনা পরিচালনা কমিটি আছে। কিন্ত তারা কেউই স্টক মার্কেটে আসতে আগ্রহী নয়। আবার অন্যদিকে এমন কোম্পানি আছে, যারা স্টক মার্কেটে এসে ক্যাপিটাল রাইজ করছে। সুতরাং স্টক মার্কেটে এসব ভালো প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে আসতে হবে। এখানে এলে ক্রেতা ও বিক্রেতা দুই ধরনের ট্র্যানজেকশন হয়। ক্রেতাদের মার্কেটে নিয়ে আসতে হবে এবং আস্থা ফেরাতে হবে। সেজন্য এই উদ্যোগ, অনেক বেশি ভালো কাজ করবে বলে আমার মনে হয়।

আপনারা জানেন, আইওএসসিও, এটা একটা অর্গানাইজেশন, বিশ্বের সিকিউরিটির রেগুলেটরদের সবার সমন্বয়ে একটা এসোসিয়েশন। যেখানে সব মিলিয়ে ২০৭ টা মেম্বার বডি আছেন। সেই মেম্বার বডির, আইওএসসিও ‘ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টরস উইক’ নামের এই মেলার আয়োজন করছে। সেটারই পার্ট হিসেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন,বিএসইসি বাংলাদেশে এই প্রথম এ ধরনের মেলার উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগ যে, কেবল বাংলাদেশই হচ্ছে তা কিন্ত নয়। একই সাথে সারা বিশ্বে এটা পালিত হবে। এর একটা ভালো বেনিফিট আমরা পাবো বলে আশা করি।

শেয়ার ক্লোজিংয়ে কিছুটা ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে,তাতে আপনার অভিমত কি?: সারা বিশ্বের ক্লোজিং সিস্টেম কিন্ত প্রায় একই। কারেন্ট ইয়ারের ক্লোজিং ইনফরমেশন কিন্ত সবার জানাই থাকে। যেমন ফার্স্ট কোয়ার্টার, সেকেন্ড কোয়ার্টার, থার্ড কোয়ার্টার আমরা দেখেছি। কোন কোম্পানি কেমন ভাবে এগোচ্ছে, এটা কিন্ত আমরা মোটামুটি বুঝতে পারি। ফোর্থ কোয়ার্টার কি হবে, সেটাও কিন্ত অনুমান করা যায়। যে কারণে গ্লোবালি কারেন্ট ইয়ারের ইপিএস-এর উপর ডিপেন্ড করে শেয়ারের মূল্য বাড়া বা কমা নির্ভর করে না। আমাদের দেশে অতীতে দেখেছি, বিভিন্ন কোম্পানির স্টকের প্রাইজের উপর ডিপেন্ড করে কোম্পানি কিভাবে ডিক্লেয়ার করছে। আমরা আরও দেখি, একটা কোম্পানি ডিপেন্ড করে তার ক্যাশ দেয়ার সুযোগ আছে কি না তার উপর। আমরা জানি ডিভিডেন্ড পলিসি বলে একটা পলিসি আছে, যা একটা প্রতিষ্ঠানের ইক্যুয়েল সাস্টেইনেবল পলিসি মেইটেইন করে হয়। উদাহরণ হিসেবে বলি কোনো কোম্পানি যদি ২০ পারসেন্ট ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়,তাহলে তারা টেন, টুয়েন্টি, টুয়েন্টি ফাইভ এভাবেই আসবে। কোন কারণে যদি পার্টিকুলার কারো অনেক প্রফিট হয়, তাহলে তারা ফিফটি, সিক্সটি পারসেন্ট দিবেন না। এটা উদাহরণ হিসেবে থাকবে।

অতীতে দেখা গেছে, জুন এন্ডিংয়ের সব কোম্পানির শেয়ারের প্রতি সবার আগ্রহ থাকতো। কিন্ত এবার আমরা একটু ভিন্ন দেখছি। ব্যাংকিং, নন ব্যাংকিং সেক্টর ছাড়া, সব লিস্টেড কোম্পানির সাইনিং ক্যারিয়ার জুলাই টু জুন হয়ে গেছে। ব্যাংকগুলোর কিন্ত এখন প্রফিট বাড়ার কথা ছিল না। কিন্ত এবার চিত্রটা ভিন্ন। ডিফেন্ডিং কোম্পনিগুলোর মুভমেন্ট আমরা খুব বেশি লক্ষ্য করছি না। সে ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর ফ্লো হচ্ছে। ফলে এবারের মার্কেটের ফোকাস, বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ আমরা দেখছি। যেসব কোম্পানির ডিভিডেন্ড সামনে আসার জন্য ডিক্লারেশন হবে, বা বোর্ড মিটিং হবে, এগুলোকে কেন্দ্র করেই মানুষের আগ্রহ তৈরি হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর একটু ব্যতিক্রম লক্ষ্যণীয়, সাধারণ ট্রেন্ডের বাইরে বলে মনে হচ্ছে।

আইওএসসিও’র এ আয়োজনে আমাদের বিনিয়োগকারীরা কতটুকু উপকৃত হবেন : এ উদ্যোগকে বাংলাদেশে যেভাবে ফোকাস করা হচ্ছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন যেভাবে আয়োজন করছে, তাতে মনে হচ্ছে এর একটা সুদূরপ্রসারী উপকার আমাদের বিনিয়োগকারীরা পাবেন। এমনকি আমাদের স্টক মার্কেটেও এর একটা ভালো ইমপ্যাক্ট পড়বে। আমি প্রথমেই বলছিলাম, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি এবং স্টক মার্কেটের বিশদ ধারণা দেয়ার মাধ্যমে তাদের তৈরি করা হবে। এতে করে পুরো স্টক মার্কেরটের সাথে সম্পৃক্ত সবারই উপকার হবে। যা আমার কাছে খুবই ভালো মনে হচেছ। সার্বিকভাবে সকলের সমন্বয়ে যদি ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’কে সফল করা যায়, তাহলে এর ইমপ্যাক্ট পড়বে পুঁজিবাজারে। যার সুফল পাবে সবাই।

শফিকুল আলম
গ্রুপ সিএফও
সুপার স্টার গ্রুপ