ভ্যাট-ট্যাক্স হতে হবে জনবান্ধব

বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ পরিস্থিতির সার্বিক অবস্থা কতটা ভালো কিংবা খারাপ, তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের ধারণার রকমফের আছে। মতভিন্নতার বাইরে গিয়েও আমরা বলতে চাই যে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সচল থাকুক। ব্যবসার পরিবেশ, ট্যাক্স-ভ্যাট, করপোরেট ট্যাক্স, দক্ষ জনশক্তি, পুঁজিবাজার পরিস্থিতিসহ নানা বিষয়ে অ্যাসেন্ট গ্রুপের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ও কোম্পানি সচিব মো. মুশফিকুর রহমান আজকের বাজার ও এবিটিভির সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁর কথোপকথন প্রকাশ করা হলো।

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এক কথায় বলতে গেলে, আমি বলতে পারি যে ব্যবসা করতে নতুন ইনভেস্টররা আসছেন না। এলেও সংখ্যায় তাঁরা খুবই কম। লোকাল ইনভেস্টররাও এখন স্বস্তি পাচ্ছেন না। যেমন বলতে পারি, রিয়েল এস্টেট সেক্টরটা এখনো খুব নাজুক। দিনে দিনে খারাপের দিকে যাচ্ছে। অন্যান্য সেক্টরেও অতটা ভালো কোনো সাড়া দেখছি না। জব মার্কেটও খারাপ। যদিও ব্যাংকিং ইন্টারেস্ট অনেকটা কমেছে, তবু ব্যবসায়ীরা কেন যেন নতুন করে ইনভেস্ট করছেন না। বাংলাদেশে যে পরিমাণ ব্যবসা এক্সপান্ড করার দরকার, ততটা হচ্ছে না।

কেন নাজুক : প্রথমত আস্থার অভাবের কারণে ব্যবসার পরিস্থিতি নাজুক। ব্যবসায়ীরা সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না বলে আমার মনে হয়। তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক, মুদ্রার তারল্য, যোগাযোগব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে, এ কথা আমি স্বীকার করি। কিন্তু আমি একজন ব্যবসায়ী হিসেবে যখন ব্যবসা করতে যাব, তখন অনেকগুলো এলিমেন্টস সামনে চলে আসবে।

আমাকে তখন ব্যবসা করার জন্য সরকারের বিভিন্ন সেক্টরে যেতে হবে। যখন বিদ্যুতের জন্য আবেদন করব, তখন আমাকে সংযোগ দেবে না, সংযোগ পেতে হলে আমাকে হয়রানি হতে হবে দিনের পর দিন। ঘুষের কথা তো বলাই বাহুল্য। এভাবে গ্যাস সংযোগের জন্য গেলে সংযোগ পাব না। ট্যাক্স বিভাগের সহায়তা পাব না। আগের তুলনায় সহযোগিতার মাত্রা কমেছে বলে মনে হয় আমার। অথচ সরকারের এসব প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নিয়ে নতুন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করার কথা। একজন ব্যবসায়ী সেখানেই ইনভেস্ট করবেন, যেখান থেকে তাঁর লাভের নিশ্চয়তা থাকবে। সুতরাং আমি বলতে পারি, সরকারের এসব সার্ভিস ডিপার্টমেন্টের অসহযোগিতার মানসিকতার কারণেই নতুন ইনভেস্টররা আসছেন না।

ট্যাক্স-ভ্যাট ব্যবস্থাপনা হবে জনবান্ধব
ট্যাক্সের ব্যাপারে আমি সব সময় পজিটিভ। আমরা যদি ভ্যাটের সঠিক ব্যবহার করি, তাহলে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। বর্তমানে ট্যাক্স-ভ্যাট অনলাইনের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এখন ফাঁকি দেওয়ার সুযাগ কম। কিন্তু আমাদের ট্যাক্স-ভ্যাট হতে হবে জনবান্ধব। আমি যখন ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে যাব, তখন আমাকে সুন্দর সার্ভিস দিতে হবে। আমি সৎ মানসিকতা নিয়ে ১ কোটি টাকা রিটার্ন জমা দিতে গেলাম। তখন তারা ১ কোটির জায়গায় দেড় কোটি টাকা রিটার্ন দেখাবে।

এখন সরকারকে অনলাইনে এই ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে হবে, এই অনিয়ম হবে না। আমি যদি আপিল করি, তখন আমাকে সহায়তা করতে হবে। কারণ আমার কোনো অনিয়ম তারা দেখাতে পারবে না; যা অনিয়ম ভ্যাটের সুপাররা করেন। তাঁদের দায় আমরা নেব না। এসব কারণেই ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে ভয় পান। ভ্যাট-ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টের পাওয়ার অনেক বেশি। তারা ইচ্ছা করলে যা খুশি করতে পারে। অথচ যারা ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি দিচ্ছে, তাদের কিছু বলছে না। যারা সততার সঙ্গে নিয়মিত ভ্যাট-ট্যাক্স দিচ্ছে, তাদের ওপর আরও চাপ বাড়ছে। এই নিয়ম পাল্টাতে হবে। আমরা আসলে ভ্যাট বিষয়টা ঠিকমতো বুঝি না। আর বুঝি না বলেই অনেক কথা বলি।

কোম্পানি যখন কোনো পণ্য তৈরি করে, তখন তা সে ১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিয়েই তৈরি করে। কিন্তু যখন ভোক্তা পণ্যটি ক্রয় করেন, তখন তাঁকেই ভ্যাট দিতে হয়। কোম্পানি কিন্তু দিচ্ছে না। সে কারণে ভ্যাট নিয়ে ব্যবসায়ীদের আপত্তির কিছু আমি দেখি না। অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন করপোরেট ট্যাক্স কমাবেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে, এর কারণে ব্যবসা কমবে না বাড়বে? সত্যি বলতে, আমি এখনো বিষয়টি বুঝে উঠতে পারছি না। সে কারণেই এটা নিয়ে কিছু বলতে পারছি না।

আমাদের পুঁজিবাজার
আমাদের দেশে পুঁজিবাজারের বর্তমান সাইজ যেমনটি আছে, তেমনটি থাকা উচিত বলে আমি মনে করি। আমাদের দেশে অনেক বড় বড় ভালো ভালো কোম্পানি আছে, যারা পুঁজিবাজারে আসছে না। এর কারণ হিসেবে আমার মনে হয় লার্জ ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে আসতে তারা আস্থা পায় না। পুঁজিবাজারের বিষয়ে আরও উন্নতির প্রয়োজন। যেমন আইপিওতে আসার আগে এই প্রসেসটার আরও উন্নতি প্রয়োজন। অনেক কোম্পানি আইপিওতে আসার পর এক মাসের মধ্যে বন্ধ হয়ে যেতে দেখেছি আমি।

আইসএমএবির চেয়ারম্যান হিসেবেও আমি ও আমাদের প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারের সঙ্গে কাজ করার জন্য ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে। আমাদের কয়েকজন কাজ শুরু করে দিয়েছে। সরকার যদি আমাদের সহায়তা করে, তাহলে আমরা ভালো কাজ করতে পারব।

 দক্ষ জনশক্তি আছে আমাদের
আমাদের দক্ষ জনশক্তির অভাব আছেÑ কথাটির সঙ্গে আমি পুরোপুরি একমত নই। আমি বলব, আমাদের দক্ষ জনশক্তির অভাব নেই। আমাদের অনেক সেক্টরে পর্যাপ্ত দক্ষ জনশক্তি আছে। আমরা স্টিল, সিমেন্ট, জুট, গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, সুগার, ফার্মাসিউটিক্যালে ভালো করছি।

মোহাম্মদ মুশফিকুর রহমান
প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ও কোম্পানি সচিব
অ্যাসেন্ট গ্রুপ