মল প্রতিস্থাপন: ৯০ শতাংশ কার্যকর!

ইংরেজিতে এর নাম দেওয়া হয়েছে ট্রান্স-পু-শন, এবং একে নিশ্চিতভাবেই বলা যেতে পারে ডাক্তারি-বিদ্যার সবচেয়ে ঘৃণা-উদ্রেককারী চিকিৎসা পদ্ধতি। কারণ এর অর্থ হচ্ছে একজন মানুষের মলে যে মাইক্রোব থাকে তা আরেকজনের পরিপাকতন্ত্রে প্রতিস্থাপন করা।

কিন্তু এটা পড়ে ছি ছি করে উঠবেন না যেন। কারণ, শুনতে জঘন্য মনে হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটা হতে পারে জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা। এই পদ্ধতি নিয়ে এখন গবেষণা চলছে যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকটি ইনস্টিটিউটে।

বিবিসির জেমস গালাহার লিখছেন, এতে বোঝা যায় যে মানুষের দেহের বিভিন্ন অংশে যেসব অণুজীব বা মাইক্রোব বাসা বেঁধে আছে – তা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের পেটের ভেতরকার নাড়িভুঁড়ি অর্থাৎ অন্ত্রের মধ্যে বাস করে অসংখ্যরকম অণুজীব।

কিন্তু বর্তমান যুগের চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক বিস্ময় যে এ্যান্টিবায়োটিক – তা আমাদের শরীরের ভালো এবং খারাপ দু ধরণের ব্যাকটেরিয়াকেই নির্বিচারে মেরে ফেলে। অন্ত্রের ভেতর অন্য ব্যাকটেরিয়া নির্মূল হয়ে যাবার পর যে বিরান পরিবেশ তৈরি হয় -তাতে ‘ক্লস্ট্রিডিয়াম ডিফিসিল’ নামে বিশেষ এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া বংশবৃদ্ধি ঘটাতে থাকে।

এই ব্যাকটেরিয়া মানুষের দেহে এমন ডায়রিয়া তৈরি করে যার সাথে রক্তপাত, জ্বর এবং পেট ব্যথা দেখা দিতে পারে – অনেক ক্ষেত্রে এটা এত গুরুতর চেহারা নিতে পারে যে রোগী মারা যায়। এই পরিস্থিতিতে আরো এ্যান্টিবায়োটিক দেয়ার চাইতে ভালো বিকল্প হিসেবে বেরিয়ে এসেছে এই ‘মল প্রতিস্থাপন’ চিকিৎসা।

অর্থাৎ একজন সুস্থ ব্যক্তির মল থেকে ভালো ব্যকটেরিয়াগুলো সংগ্রহ করে তা রোগীর মলদ্বার দিয়ে শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন রাজ্যে প্যাসিফিক নর্থওয়েস্ট ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে এই পরীক্ষামূলক চিকিৎসা দলের একজন হচ্ছে ড. জ্যানেট জ্যানসন।

তাদের রোগী ছিলেন ৫১ বছর বয়স্ক একজন নারী – যিনি ৮ মাস ধরে ডায়রিয়ায় ভুগছিলেন, যাতে তার ২৭ কেজি ওজন কমে গিয়েছিল। তার দেহে তার স্বামীর মলের নমুনা প্রতিস্থাপন করা হয়।

এ বিষয়ে ড. জ্যানসন বলেন, এর যে ফলাফল পাই আমরা তা ছিল বিস্ময়কর। মাত্র দু’দিনের মধ্যেই রোগীর ডায়রিয়া কার্যত সেরে গিয়ে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে। এই পদ্ধতি প্রায় ৯০ শতাংশ কার্যকর।

তবে এর ফলে একজনের দেহের রোগ আরেকজনের দেহে চলে যেতে পারে কিনা তা নিয়েও গবেষণা চলছে। কারণ ২০১৫ সালে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করার পর একজন নারী অতিমাত্রায় মোটা হয়ে গিয়েছিলেন, এবং তা তখন সংবাদমাধ্যমে খবর হয়েছিল।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, পেটের রোগ, ডায়াবেটিস, পার্কিনসন্স, বিষণ্ণতা, অটিজমের মতো বহু রোগ এমনকি ক্যান্সারের ওষুধের কার্যকারিতার সাথেও মানুষের দেহের ভেতরকার অণুজীবজগৎ বা মাইক্রোবায়োমের সম্পর্ক আছে – এমন ইঙ্গিত পেয়েছেন তারা।

তাই এটা কতটা নিরাপদ এবং সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি না – তা নিয়ে ভবিষ্যতে আরো পরীক্ষা নিরীক্ষা হবে বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

এস/