মহামারিকালে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করেছেন জর্ডান সিনেটের প্রেসিডেন্ট

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বৈশ্বিক করোনা মহামারিকালেও বাংলাদেশের ৫ শতাংশ জিডিপি উন্নয়নের প্রশংসা করেছেন জর্ডান সিনেটের প্রেসিডেন্ট এবং দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফাইসাল আকিফ আল-ফায়েজ।
আম্মানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ স্থাপন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রোববার আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আম্মানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের আয়োজনে ‘মুজিববর্ষ ওয়েবিনার সিরিজ’-এর অংশ হিসেবে এই আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর আগে ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বপ্নের সোনার বাংলা’ শীর্ষক ওয়েবিনারের আয়োজন করে।
জর্ডানের এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ করোনার মত এমন মহামারিতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করে বলেন, যেখানে বিশ্বের অনেক দেশ করোনার কারণে অর্থনৈতিক অবস্থা শিথিল হয়ে যাওয়ায় ঋণাত্মক জিডিপিতে অবস্থান করছে সেখানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে জিডিপির উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছে।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খান বক্তব্য রাখেন। তিনি এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসাধারণ নেতৃত্বে বিষয়ে আলোকপাত করেন।
এ ছাড়াও বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এই কর্মীদের পাঠানো রেমিটেন্সের কল্যাণে মহামারিকালেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার সর্বদা এই বাংলাদেশিদের সহায়তায় প্রস্তুত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষ উদযাপন বিষয়ক জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, জর্ডান সিনেটের সাবেক সদস্য ড. শওসান মাজালি, প্রখ্যাত লেখক ও গবেষক সৈয়দ বদরুল আহসান এবং জর্ডানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান।
অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদের নির্মিত ১৯৭১ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বিষয়ক ভিডিও ‘হোপ অ্যান্ড এসপাইরেশন: দ্য ডে ফাদার অব দ্য ন্যাশন রিটার্নড হোম’ প্রদর্শন করা হয়।
ড. শওসান মাজালি বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ও ব্র্যাকের মত এনজিওর কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে জানান, কীভাবে বাংলাদেশের প্রান্তিক পর্যায়ে অবস্থিত নারীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কীভাবে বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রান্তিক পর্যায়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে সে বিষয়েও আলোকপাত করেন তিনি। বাংলাদেশে তার ভ্রমণের কথা স্মরণ করে তিনি জানান, কীভাবে খুব দ্রুত অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী দেশ ও তরুণদের কাছে মুজিববর্ষের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ও আদর্শ কীভাবে এখনো আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও তরুণদের জন্য কাজে লাগছে সে বিষয়ে আলোচনা করেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনা এবং সে সময়ে একজন তরুণ হিসেবে নিজ জীবনে তার প্রভাব নিয়েও কথা বলেন তিনি। মুজিববর্ষের পর বাংলাদেশে স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনের বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি। অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য জর্ডানের বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রশংসা করেন তিনি।
লেখক ও গবেষক সৈয়দ বদরুল আহসান বলেন, তরুণ বয়সে বঙ্গবন্ধু তাঁর নিজ নেতৃত্বগুণে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণ করে দেখিয়েছিলেন এবং তার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন তিনি। নিজ তরুণ জীবনের ১০ বছর জেলে অতিবাহিত করতে হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে ‘মুক্তির দূত’ হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেন। বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপনের মাধ্যমে এখানে ভ্রমণে আসা সকলে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বঙ্গবন্ধু ত্যাগের কথা এবং তার স্বপ্ন ও বাংলাদেশের উন্নয়নের ইতিহাস সম্পর্কে জানবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।