মাদক ও মৌলবাদ রোধে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম সম্প্রসারণের আহ্বান হাছান মাহমুদের

মাদক ও মৌলবাদ রুখতে সারাদেশে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের চর্চা সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে আমি দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি যে, আমরা যদি একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লব গড়ে তুলতে পারি এবং সারাদেশে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের চর্চা সম্প্রসারণ করতে পারি, তবে তা জনগণকে মাদকের ভয়াল ছোবল ও মৌলবাদ থেকে দূরে রাখবে। ‘
আজ সন্ধ্যায় রাজধানীর হাতিরঝিল অ্যাম্ফিথিয়েটারে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) আয়োজিত ‘বিজয়ের ৫০ বছরে লাল-সবুজের মহা উৎসব’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের বেশি চর্চা মুলত মানুষের হৃদয়কে পরিষ্কার করে যা তাদের মৌলবাদ ও মাদকাসক্তি থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে।
‘যখন মৌলবাদ এবং মাদকাসক্তির প্রভাব আমাদের যুবকদেরকে ছেয়ে ফেলে, তখন সাংস্কৃতিক চর্চা তাদের বিপদ থেকে দূরে রাখার একটি উপায়, বলেন তিনি।
দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পর বাংলাদেশ এখন একটি গর্বিত জাতি। ‘আমরা যখন স্বাধীনতা অর্জন করি, তখন অনেক বিদেশী নেতা ও কূটনীতিক আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকতে পারত কিনা। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন স্টেট সেক্রেটারি বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। কিন্তু এখন বাংলাদেশ একটা উপচে পড়া ঝুড়ি, বলেন ড. হাছান।
ভূখন্ডের দিক থেকে বিশ্বের ৯২তম দেশ হওয়ায় বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে তৃতীয়, সবজি উৎপাদনে চতুর্থ, মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে চতুর্থ এবং আম উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বের কারণে।
কিছু অসাধু ব্যবসায়ী যারা ঈদের সময় বা কোনো কারণ ছাড়াই দ্রব্যমূল্য বাড়ায় তাদের দিকে নজর দিতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে হাছান বলেন, ‘জাতি ও সমাজের প্রতি আমাদের সবার দায়িত্ব রয়েছে। যার যার দায়িত্ব, তাকে সঠিকভাবে পালন করা উচিত।’
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এফবিসিসিআই’র সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, ব্যবসা করার পাশাপাশি যাদের কল্যাণে দেশ স্বাধীন হয়েছে, তাদের প্রতিও দায়িত্ববোধ রয়েছে ব্যবসায়ীদের। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী সকল বাংলদেশীর জন্য একটি বিশেষ মাহেন্দ্রক্ষণ। এই বিশেষ উপলক্ষ উদযাপনে এফবিসিসিআই ১৬ দিনব্যাপী মহোৎসবের আয়োজন করেছে। তিনি বলেন, এফবিসিসিআই সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে প্রতিনিয়ত ব্যবসায়ীদের কল্যানে কাজ করে যাচ্ছেন।
রাজধানীর হাতিরঝিলের অ্যামফিথিয়েটারে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে রবিবার ছিলো রবীন্দ্র উৎসব। এই উৎসবে বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদ্যুত ইতো নাওকি বলেন, রবীন্দ্রনাথের প্রিয় দেশগুলোর একটি ছিলো জাপান। আগামী বছর জাপান-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পালিত হবে। এ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশে জাপানি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করা হবে। তিনি বাংলাদেশ ও জাপানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম দিকের দেশগুলোর একটি জাপান।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, রবীন্দ্রনাথের গান, লেখা, কবিতা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের গণ আন্দোলনে শক্তি যুগিয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে রবীন্দ্রনাথের
“আমার সোনার বাংলা” গানকে আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন। তিনি বলেন বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজকে মাত্র ১২ বছরে সুসম্পন্ন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এই উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে সাংস্কৃতিক ঘটাতে হবে। মুজিব বর্ষে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সোনার বাংলাদেশ গড়তে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় যারা জমি বেদখল করে রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে ডিএনসিসি।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন রবীন্দ্র উৎসব উপলক্ষে তিনি কবিগুরুর নানা কবিতার প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন, এবং বাঙ্গালীর মনন, বাংলাদেশের সমাজ বাস্তবতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখার উপযোগীতা তুলে ধরেন।
অতিথিদের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে, নিজের গলায় দর্শকদের রবীন্দ্র সংগীত গেয়ে শোনার জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাউকি। এরপরে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
১৬ দিনব্যাপী “বিজয়ের ৫০ বছর: লাল সবুজের মহোৎসব” এর ৬ষ্ঠ দিন সোমবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে নৃত্য উৎসব। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।