মাসব্যাপী অমর একুশের গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে বাংলা একাডেমিতে মাসব্যাপী অমর একুশের গ্রন্থমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। একই সময় তিনি ৪ দিনব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন ২০১৭’ উদ্বোধন করেন। তিনি ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬’ বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।

কবিতায় আবু হাসান শাহরিয়ার, কথাসাহিত্যে শাহাদুজ্জামান, প্রবন্ধে মোর্শেদ শফিউল হাসান, মক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাহিত্যে ড. এম এ হাসান, আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা বিষয়ক রচনার জন্য নূর জাহান বোস, শিশু সাহিত্যে রাশেদ রউফ এবং অনুবাদে ড. নিয়াজ জামান ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬’ লাভ করেন। তারা সবাই প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন। এবারের গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশ করছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু রচিত ‘কারাগারের রোজনামচা’ নামের ঐতিহাসিক গ্রন্থ। বাংলা এবং ইংরেজি উভয় ভাষাতেই এটি প্রকাশিত হয়েছে। অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র পরে এটিই বঙ্গবন্ধু রচিত দ্বিতীয় কোন গ্রন্থ। বইটিতে বাঙালির অধিকার আদায়ে কারাঅন্তরীণ থাকার সময় বিভিন্ন বিষয় বঙ্গবন্ধু দৈনিক কর্মকান্ড হিসেবে ডায়রীতে লিপিবদ্ধ করেন।
এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রচিত ‘নির্বাচিত প্রবন্ধ’ও বই মেলায় প্রকাশিত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত মীর মশাররফ হোসেনের অমর সৃষ্টি ‘বিষাদ সিন্ধু’র অনুবাদ ‘ওসেন অব সরো’ এবং ‘হানড্রেড পোয়েমস ফ্রম বাংলাদেশ’ বই দুটি তুলে দেয়া হয়। সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
বিদেশী অতিথি হিসেবে চীনের প্রখ্যাত গবেষক ও রবীন্দ্র অনুবাদক ডং ইউ চেন, অস্ট্রিয়ার মেনফ্রেড কোবো, পুয়ের্তোরিকোর মিঁজ লুস মারিয়া লোপেজ ও ভারতের চিন্ময় গুহ উপস্থিত ছিলেন। বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।

অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকসহ বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশন ও দূতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দ, দেশ বরেণ্য ব্যক্তিত্বগণ, কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতি সংগঠনের শীর্ষ ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন। এবার একাডেমি চত্বরে ৮০টি প্রতিষ্ঠানকে ১১৪টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৩২৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৪৯টি ইউনিটসহ মোট ৪০৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৬৩টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর বাইরে বাংলা একাডেমিসহ ১৪টি প্রকাশনা সংস্থাকে মোট ৬ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১৫টি প্যাভিলিয়ন দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে একাডেমির প্যাভিলিয়ন রয়েছে ২টি।

এছাড়া ১শ’ লিটল ম্যাগাজিনকে বর্ধমান হাউসের দক্ষিণ পাশে লিটল ম্যাগাজিন কর্ণারে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মেলায় এবারই প্রথম গুগলমাপের সাহায্যে মেলার যে কোন স্টল খুঁজে বের করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশু কর্ণারকে এবারও বেশ আকর্ষণীয় করে সাজানো হয়েছে। শিশুদের এ চত্বরটিতে প্রবেশের জন্য আলাদা গেইট রাখা হয়েংছে। ৬০ ইউনিট নিয়ে গড়া পুরো চত্বরটি নানা রঙ বেরঙের লাইটিংয়ে সাজানো হয়েছে। রয়েছে শিশুদের জন্য খেলার সামগ্রী। মাসব্যাপী গ্রন্থমেলায় এবারও শুক্র ও শনিবার থাকছে ‘শিশু প্রহর’। এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গ্রন্থমেলা চত্বরের পরিবেশ নান্দনিক ও মনোমুগ্ধকর করতে ফোয়ারা, চত্বরজুড়ে বিভিন্ন স্থানে ফুলের চাড়া রোপণ, স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল ও আড্ডার জন্য উন্মুক্ত স্থান রাখা হয়েছে।

মেলার আযোজক বাংলা একাডেমী থেকে জানান হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে এবারই প্রথমবারের মতো স্টলের উপরে টিনের ছাউনি দেয়া হয়েছে। এছাড়া শিশু কনর্ণারে মাতৃদুগ্ধ সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। গ্রন্থমেলায় টিএসসি, দোয়েল চত্বর দিয়ে দুটো মূল প্রবেশ পথ, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তিনটি পথ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বাহিরের আটটি পথ রয়েছে। এবারই প্রথম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের সুবিধার্থে একটি নতুন সুপ্রশস্ত গেট নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রন্থমেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থারসমূহের নিরাপত্তাকর্মীবৃন্দ।

নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলা এলাকাজুড়ে আড়াইশ’ ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৫ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৪টায় প্রন্থমেলার মূল মঞ্চে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতি-সমকালীন প্রসঙ্গ এবং বিশিষ্ট বাঙালি মনীষার জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। আয়োজকরা আরো জানান, গ্রন্থমেলা ১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং ২১শে ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে। মেলা উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী বইমেলার স্টলগুলো ঘুরে দেখেন এবং লেখক-প্রকাশকদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন।

সুত্র:  বাসস