মেসি নৈপুণ্যে জয় বার্সার

আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসি নৈপুণ্যে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল মাদ্রিদকে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়ে লিগ টেবিলের শীর্ষে উঠেছে কাতালান কাব বার্সেলোনা। এদিন বার্সার হয়ে জোড়া গোল করেন মেসি। আর বাকি এক গোল করেন ইভান রাকিতিচ। তবে রিয়ালের পর্তুগিজ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এদিন গোলশূন্যই ছিলেন। রিয়ালের হয়ে দুটি গোল করেন কাসেমিরো এবং রামোস।

সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রবিবার রাতে রোমাঞ্চকর এই এল কাসিকো ৩-২ গোলে জিতেছে বার্সেলোনা। লা লিগার শেষ দিকে এসে দুই দলের পয়েন্টই এখন ৭৫। তবে মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে শীর্ষে উঠলো এক ম্যাচ বেশি খেলা কাতালান কাবটি।

লিগ টেবিলের শীর্ষে থেকে কাতালান কাব বার্সেলোনার বিপে মাঠে নেমেছিল স্প্যানিশ জায়ান্ট কাব রিয়াল মাদ্রিদ। ম্যাচটি জিতলে শিরোপার অনেক কাছেই পৌঁছে যেত জিনেদিন জিদানের দল। তবে তেমনটা হয়ে ওঠেনি। মেসির জোড়া গোলে রোমাঞ্চকর এই ম্যাচে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে বার্সা।

শ্বাসরুদ্ধকর এই ম্যাচের শুরুতে ২৮তম মিনিটে কাসেমিরোর গোলে পিছিয়ে পরে বার্সা। তবে পাঁচ মিনিট পরেই মেসি গোল করে দলকে সমতায় ফেরান। দ্বিতীয়ার্ধে ৭৩তম মিনিটে রাকিতিচ গোল করলে এগিয়ে যায় বার্সা। এরপর ৮৫তম মিনিটে রদ্রিগেজের গোলে সমতায় ফেরে স্বাগতিকরা। ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তে যোগ করা সময়ে মেসি গোল করে দলকে পূর্ণ তিন পয়েন্ট এনে দেন।
প্রথমার্ধে কাসেমিরোর গোলে পিছিয়ে পড়ার পর সমতা ফেরাতে দেরি করেননি ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দুর্দান্ত খেলা মেসি। দ্বিতীয়ার্ধে ইভান রাকিতিচের দর্শনীয় গোলে অতিথিরা এগিয়ে যাওয়ার পর সমতা ফিরিয়েছিলেন হামেস রদ্রিগেস। যোগ করা সময়ে দুর্দান্ত শটে মূল্যবান ৩ পয়েন্ট এনে দেন মেসি। একই সঙ্গে স্পর্শ করেন বার্সেলোনার জার্সিতে ৫০০তম গোলের অনন্য মাইলফলক।
বর্ষসেরা ফুটবলারের লড়াইয়ে প্রায় এক দশক ধরে মেসির প্রতিদ্বন্দ্বী রোনালদো ছিলেন নিষ্প্রভ। তার সতীর্থ কেইলর নাভাস দারুণ কিছু সেভ না করলে বড় ব্যবধানে হারতে হতো স্বাগতিকদের। অপর প্রান্তে গোলপোস্টের নীচে দুর্দান্ত ছিলেন মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেনও।

ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে মেতে উঠে দুই দলই। প্রথমে রিয়াল বল দখলে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বলের দখল ফিরে পায় বার্সা।

১৮তম মিনিটে পাল্টা আক্রমণে ডি-বক্সের ভেতর থেকে করিম বেনজেমার শট ঠেকান টের স্টেগেন। দুই মিনিট পর রোনালদোর শট বাঁয়ে ঝাঁপিয়ে এক হাতে ঠেকান জার্মান এই গোলরক।
২৮তম মিনিটে ম্যাচের প্রথম কর্নার থেকেই গোল পায় স্বাগতিকরা। বল পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে পারেনি বার্সেলোনা। ডি-বক্সের বাইরে থেকে মার্সেলোর উঁচু করে বাড়ানো বলে সার্জিও রামোসের ভলি পোস্টে লেগে ফিরলে অপর পোস্টের পাশ দিয়ে তা ফাঁকা জালে পাঠান কাসেমিরো।

ম্যাচটিতে খেলোয়াড়রা বেশ কয়েকবার মেজাজ হারিয়েছেন। ২০তম মিনিটের দিকে ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার মার্সেলোর কনুইয়ের আঘাতে মুখ থেকে রক্ত বের হওয়ার পর ঠোটের নিচে টিস্যু পুরে প্রথমার্ধের বাকি সময়টা খেলা মেসির দুর্দান্ত পায়ের কাজে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই সমতায় ফিরে বার্সেলোনা।

সার্জিও বুসকেতসের বাড়ানো বল থেকে রাকিতিচের পাস বাঁ পায়ে ধরে ডি-বক্সে ঢুকে ডান পায়ে কারভাহালের কাছ থেকে বল সরিয়ে আবার বাঁ পায়ে নাভাসের হাতের নিচ দিয়ে জালে জড়িয়ে দেন মেসি।

এরই সঙ্গে লা লিগায় হওয়া কাসিকোতে সর্বোচ্চ ১৫টি গোল করে রিয়াল মাদ্রিদের কিংবদন্তি আলফ্রেদো দি স্টেফানোকে ছাড়িয়ে রেকর্ড একার করে নিলেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক।
এরপর দুই দলই আরও বেশ কয়েকটি আক্রমণ করলেও গোলে দেখা পায়নি। সমতায় থেকেই বিরতিতে যায় দু’দল।

প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই চেপে বসে রিয়াল। কারভাহালের ক্রস কর্নারের বিনিময়ে বিপদমুক্ত করেন পিকে। একটু পরেই স্বদেশি টনি ক্রুসের শট ডানে ঝাঁপিয়ে ঠেকাতে হয় টের স্টেগেনকে। তবে আবার কর্তৃত্ব নিতে দেরি হয়নি লুইস এনরিকের দলের।

তবে এদিন দুরন্ত পারফরম্যান্স ছিল বার্সা গোলরক স্টের স্টেগানের। প্রতিপরে একের পর এক আক্রমণ তিনি ঠেকিয়ে যাচ্ছিলেন।

ম্যাচের ৭৩তম মিনিটে রাকিতিচকে আর ঠেকাতে পারেনি রিয়াল। ডি-বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ে শট মারার ডামি করে টনি ক্রুসকে ধোঁকা দিয়ে বাঁ পায়ের বাঁকানো শটে রামোস আর নাচো ফার্নান্দেসের মাঝ দিয়ে বা পোস্ট দিয়ে বল জালে পাঠান ক্রোয়েশিয়ার এই মিডফিল্ডার।

চার মিনিট পরই অহেতুক মেসিকে ফাউল করে অধিনায়ক রামোস লালকার্ড দেখলে ১০ জনের দলে পরিণত হয় রিয়াল।

৮৫তম মিনিটে মার্সেলোর ক্রস থেকে চার মিনিট আগে বদলি হিসেবে নামা রদ্রিগেজের গোলে সমতায় ফেরে রিয়াল। তখন হয়তো সবাই ভাবছিল ম্যাচটি ২-২ ব্যবধানে ড্র হবে। কিন্তু মেসি জাদুর তখনও আরও বাকি। দুই মিনিট যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে জর্দি আলবার ক্রসে ডি-বক্সের একটু ভেতর থেকে বাঁকানো শটে নাভাসকে ফাঁকি দিয়ে ঠিকই এনে দেন অবিশ্বাস্য এক জয়।

এবারের লা লিগার মেসির ৩১তম গোলটি বার্সেলোনার জার্সিতে সব মিলিয়ে ৫০০তম। অবিস্মরণীয় এই গোলের পর গর্বের জার্সি খুলে রেফারির হলুদ কার্ডে ভ্রুপে না দেখিয়ে স্তব্ধ গ্যালারির দিকে তুলে ধরেন পাঁচবারের বর্ষসেরা এই ফুটবলার।

আজকেরবাজার: আরআর/ ২৪ এপ্রিল ২০১৭