ম্যাপল লিপ হোটেলের সাড়ে ৪ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি

রাজধানীর উত্তরা মডেল টাউন এলাকায় ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে চালু হয় বেস্ট ওয়েস্টার্ন প্লাস ম্যাপল লিপ অভিজাত হোটেল ও রেস্টুরেন্ট। ভোক্তাদের কাছ থেকে সব ধরনের ভ্যাট আদায় করা হলেও ওই ভ্যাটের ৫০ শতাংশই ফাঁকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ২ বছর ৪ মাসে সাড়ে ৪ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে তারা।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মাত্র দুই মিনিটের দূরত্ব অবস্থিত ওই হোটেলে অভিযানের পর এমন তথ্য জানিয়েছে মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

মূসক গোয়েন্দার উপ-পরিচালক এস.এম. সুলতান মাহমুদ টিটো জানান, বেস্ট ওয়েস্টার্ন প্লাস ম্যাপল লিপের কাগজপত্র জব্দ করে এখন পর্যন্ত প্রায় প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির রহস্য উৎঘাটন করা হয়েছে। প্রত্যেক ভোক্তা থেকে পস মেশিনে আর চালানে ভোক্তা থেকে নিয়মমাফিক ভ্যাট নিয়েছে তারা। তবে ভ্যাটের পুরোটা রাজস্ব খাতে জমা দেয়নি।

তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রেস্টুরেন্ট ও হোটেল খাতে প্রাপ্ত ভ্যাটের ৫০ শতাংশ জমা দিয়েছে বেস্ট ওয়েস্টার্ন প্লাস ম্যাপল লিপ। তবে স্পা থেকে আদায় করা ভ্যাটের পুরোটাই নিজেরা ভোগ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। গত ৯ মে উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

মূসক গোয়েন্দার এই উপ-পরিচালক জানান, অভিভাত হোটেলটি ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠিত। ৫১ রুমের আবাসিক সার্ভিস। রুচিশীল ও উন্নতমানের দুইটি আধুনিক রেস্টুরেন্ট, একটু স্ন্যাকস কর্ণার ও একটি স্পা। প্রতিষ্ঠানটি ভোক্তা থেকে ভ্যাট নেন; কিন্তু চালান দেয় না। কিছু ক্ষেত্রে চালান দিলেও ভ্যাট উল্লেখ করে না। পস মেশিনে নিয়মমাফিক ভ্যাট নেয়। এসব ভ্যাট নিয়মমাফিক সরকারকে দেয় না।

তিনি আরও জানান, দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ উঠছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ২৮ এপ্রিল ওই হোটেলে অভিযান পরিচালনা করে মূসক গোয়েন্দা। ওই সময় ভ্যাট পরিশোধের কাগজ দেখাতে বললে হোটেলের সহকারী ম্যানেজার অলিউর রহমান ভ্যাট পরিশোধের কাগজপত্র দেখান। এতে মাসিক ভিত্তিতে প্রকৃত বিক্রয় আর ভ্যাট পরিশোধের ক্ষেত্রে পার্থক্য পাওয়া গেছে।

এস.এম. সুলতান মাহমুদ টিটো বলেন, ডেস্কের কম্পিউটারে থাকা তথ্যে গরমিল পাওয়া কাগজপত্র খুঁজতে থাকে মূসক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর গোপন আরেকটি কম্পিউটারে প্রতিদিনের বিক্রির প্রকৃত তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া বিভিন্ন কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে বাণিজ্যিক দলিল ও ইনভয়েস জব্দ করা হয়। এতে দেখা যায়, ঘোষণার তুলনায় অধিক হারে রুম ভাড়া আদায় করছে হোটেল কর্তৃপক্ষ।

হোটেলের কম্পিউটার ও ভ্যাট পরিশোধের কাগজপত্র জব্দ করা হয়। জব্দ তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি সেবা বিক্রয়ের ক্ষেত্রে মূসক চালান দেয় না। প্রকৃত সেবা বিক্রয় মূল্য গোপন করে আংশিক সেবা বিক্রির তথ্য পস সফটওয়্যারে রাখে তারা।

এতে আরও দেখা গেছে, আবাসিক, ফুড এবং বেভারেজ খাতে প্রাপ্ত ভ্যাটের ৫০ শতাংশ পরিশোধ করেছে ম্যাপল লিপ। আর স্পা খাতে ভোক্তা থেকে প্রাপ্ত ভ্যাটের পুরোটাই ফাঁকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ২৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭৯ হাজার ১২২ টাকা ৪০ পয়সার সেবা বিক্রয়মূল্য গোপন করেছে তারা।

মূসক ফাঁকির বিষয়টি অস্বীকার করে প্রতিষ্ঠানটির সহকারী ম্যানেজার অলিউর রহমান বলেন, আমরা বিক্রির সঠিক কাগজপত্র দিয়েছি। এতে মূসক ফাঁকি হতেই পারে না।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/১৩ মে,২০১৭