রমজানের প্রস্তুতি

মুসলমানদের জীবনে সারা বছরের মধ্যে রমজান মাসে আল্লাহর অসীম দয়া, ক্ষমা ও পাপমুক্তির এক সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয় বলেই এ পুণ্যময় মাসের গুরুত্ব ও মর্যাদা এত বেশি। তাই বলা হয়, রমজান মাস হচ্ছে ইবাদত, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, জিকর, শোকর তথা আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক বিশেষ মৌসুম। পরিচ্ছন্নতা পবিত্রতা রক্ষার্থে প্রস্তুতি গ্রহণ জরুরী।

এই মাসে খাবারের মেন্যুর সঙ্গে সবকিছুই পুরোপুরিভাবে বদলে যায়। সেহরি ও ইফতারকে ঘিরে বাসাবাড়িতে চলে দৈনন্দিন উৎসব। এ দুই সময়ে খাবারের তালিকায় রয়েছে বেশ পরিবর্তন। যেহেতু রমজান মাস অন্যসব মাসের চেয়ে ব্যতিক্রম, তাই এ মাসের আগে কিছু প্রস্তুতি প্রয়োজন। এ বিষয় মাথায় রেখেই রোজার বাজার প্রস্তুতি শুরু হয়।

পরিচ্ছন্ন ঘরবাড়ি
রোজা শুরুর আগেই ঘরবাড়ির চারপাশ পরিষ্কারের কাজটি করে ফেলুন। যাতে রোজার সময় বাড়তি ঝামেলা পোহাতে না হয়। ঘরের ঝুল ময়লা, ফ্যান আসবাবপত্র, বুক শেলফ, জুতার শেলফ সবকিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে গুছিয়ে রাখুন। বাড়ির ছাদ, বাগান, বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করুন। বাড়ির দরজা, জানালা, বিদ্যুতের কাজ ও অন্যকিছু মেরামতের কাজগুলো আগে থেকেই করে ফেলুন। পানির পাইপ, বিদ্যুৎ ও গ্যাস লাইনের ত্রুটিগুলো সারিয়ে ফেলুন। দরজা-জানালার পর্দা, বিছানার চাদর, সোফার কভার, কুশন কভার, কার্পেট ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন কিংবা লন্ড্রিতে দিন।

রান্নাঘরের পরিচর্যা
রোজার সময় সবচেয়ে বেশি ঝামেলা যায় রান্নার কাজে। তাই রান্নার জন্য আপনার রান্নাঘরটি অবশ্যই গুছিয়ে নিন। রান্নাঘরের কাবার্ড, শেলফ সব পরিষ্কার করে নিন। মেঝেতে ভিম পাউডার ফেলে গরম পানি দিয়ে ব্রাশ করে পরিষ্কার করে নিন। চুলা প্রতিদিন রান্না শেষে সাবান পানি দিয়ে পরিষ্কার করে রাখুন। তাহলে তেল চিটচিটে হবে না। রোজার রান্নার জন্য বাড়তি হাঁড়ি-পাতিল দরকার হয়। তাই এ সময় স্টোর থেকে হাঁড়ি-পাতিল বের করে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে রাখুন। ফ্রিজের ভেতর ও বাইরে পরিষ্কার করে নিন। ব্লেন্ডার মেশিন, ওভেন, মিক্সার মেশিন ইত্যাদি এ সময় খুবই প্রয়োজনীয়। তাই এগুলো আগে থেকেই সারিয়ে নিন।

বাজার সদাই
রমজান মানেই সেহরি ও ইফতার। এই সেহরি ও ইফতার তৈরির জন্য রয়েছে কিছু উপকরণ এবং এসব নির্দিষ্ট কিছু উপকরণের জন্য চাই প্রস্তুতি। রোজার মাসে জিনিসপত্রের দাম থাকে অন্যসব মাসের তুলনায় বেশি। তাই রোজার শুরুতেই বাজারের কেনাকাটার একটা পরিকল্পনা করে নিলে ভালো হয়। প্রথমেই আপনার পরিবারের প্রতি মাসের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের তালিকা তৈরি করুন। তার সঙ্গে রোজার বাড়তি সদাইপাতির একটা তালিকা তৈরি করে নিন।

যে জিনিস সংরক্ষণ করা যায় যেমন পেঁয়াজ, রসুন, আদা, আলু, তেল, মসলা, চিনি, লবণ, ডাল, চাল এবং প্যাকেটজাত কিছু খাবার কিনে রাখুন আগ থেকেই। কাঁচা বাজারটা সম্পূর্ণ গৃহকর্তার ওপর নির্ভর না করে কিছু কিছু আপনিও করে ফেলুন।

এ ছাড়া সিরকা, নুডলস, সেমাই, তেল, ঘি, ডিম ইত্যাদি যেসব জিনিস পাড়ার কনফেকশনারি বা মুদি দোকানে পাওয়া যায় তা আপনি আগেই কিনে নিন। মসলাপাতি যা প্রয়োজন তা আগেই কিনে ফেলুন। প্রতি সপ্তাহের একদিন ফল কাঁচাবাজার থেকে কিনে রাখুন। মসলা একটু বেশি করে বেটে ফ্রিজে রাখুন। মাংসের কিমা তৈরি করে ফ্রিজে রাখুন।

ইফতার ও সেহরির প্রস্তুতি
রোজার সময় খাওয়া-দাওয়ায় বদলে যায় মানুষের নিত্যদিনের অভ্যাস। এ সময় দুই বেলার প্রধান খাদ্য নিয়েই মানুষ বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সেগুলো হলো ইফতার ও সেহরি। খাবারের একটা মেন্যু আগেই তৈরি করে রাখুন। এতে কী রান্না করবেন সেটা নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করতে হবে না। পরিবারের সদস্যদের চাহিদা ও পুষ্টির দিকে লক্ষ্য রেখে ইফতার ও সেহরির মেন্যু তৈরি করুন। ইফতার ও সেহরি পার্টির আয়োজন করতে হলে সে বিষয়েও আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রাখুন।

ঈদের কেনাকাটার পরিকল্পনা
ঈদে জামা কাপড়, বিছানা, আসবাবের সঙ্গে আনুষঙ্গিক অনেক জিনিস কিনতে হয়। যেমন ঘর সাজানোর জন্য নানা ধরনের পটারি, ফুল, ম্যাট, শতরঞ্জি প্রভৃতি। এ ছাড়া রান্নাঘরের তৈজসপত্র, খাবার পরিবেশনের জন্য ডিশ, চামচ, কাপ, পিরিচ, প্লেট প্রভৃতি। তবে যা কিছু কেনার প্রয়োজন তা যতদূর সম্ভব রোজা শুরুর দিকেই কিনে নিন।

মনে রাখবেন, ইবাদত যেমন জরুরী তেমনি পবিত্রতা রক্ষার্থে বাড়ির পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা আরও জরুরী। রোজা রেখে তো এতো কাজ করতে পারবেন না আর করাটা ঠিকও না। শরীর ঠিক রেখে সব গুছিয়ে কাজ করুন।

আজকের বাজার: আরআর/ ৩০ মে ২০১৭