রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে ১৫ হাজার মানুষ

পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে বর্ষায় পাহাড় ধসের আশংকার মধ্যেও পাহাড়ের পাদদেশে ঘর তৈরি করে বসবাস করছে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। ২০১৭ সালের ১৩ জুন ঘটে যাওয়া পাহাড় ধ্বসের কথা এখনো ভুলতে পারেনি রাঙ্গামাটিবাসী। তাই ঘন্টাখানেক টানা বৃষ্টি হলেই তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে।
ছোট্ট পাহাড়ি এই শহরের সমতলীয় জায়গাগুলোতে সরকারী-বেসরকারী প্রশাসন, সামরিক, আধা সামরিক বিভিন্ন অফিসের পাশাপাশি স্থানীয় প্রভাবশালীদের নিজস্ব ভবনে ভরপুর। আর শহুরের আশে-পাশে পাহাড়ের উঁচু-নীচু ঢালে বসতি গড়ে তুলেছে দরিদ্র শ্রেণীর মানুষজন।
প্রতিবছর প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় এই মানুষগুলোর ধারাবাহিক ক্ষতি হয়। তাদেরকে নিরাপদে সরিয়ে আনতে এবং তাদের জানমালের ক্ষতি কমাতে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও এ জেলায় থেমে নেই পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস।
গত কয়েক বছরে পাহাড়ি এই জেলায় পাহাড় ধ্বসে ব্যাপক প্রাণহানির পরও আবারো একই জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে বসতঘর। শহরের ভেদভেদী, কলেজ গেইট, যুব উন্নয়ন এলাকা, মনতলা আদাম, সাপছড়ি, পোস্টঅফিস এলাকা, জয়কালি মন্দির, মুসলিম পাড়া, নতুন পাড়া, শিমুলতলী, মোনঘর, সনাতন পাড়া এলাকায় ২০১৭ সালে সবচেয়ে বেশি পাহাড় ধ্বসের ঘটনা ঘটে। এসব এলাকায় দুই বছরে পাহাড় ধ্বসে নিহত হয়েছে ১৩১ জন। কিন্তু এরপরও ভিটেমাটি ছাড়তে নারাজ ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীরা।
বর্তমানে জেলার ৩১টি পয়েন্টকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন। ফলে এবারো বর্ষা মৌসুমে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু এরপরও থেমে থাকেনি বসতি স্থাপন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড়ের পাদদেশে থাকা বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তবে বসবাসের বিকল্প জায়গা না থাকায় নিরাপদ স্থানে সরে যেতে পারছেন না অনেকেই। পাহাড় ধ্বস এড়াতে তারা পাহাড়ের পানি নিষ্কাশনের বিকল্প ব্যবস্থা তৈরির দাবি করেছে।
জেলা প্রশাসক জানান, বর্ষা মৌসুমে বিগত বছরগুলো ব্যাপক প্রাণহানির বিষয়টি বিবেচনা করে দুর্ঘটনা এড়াতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। গত এপ্রিল মাস থেকেই জেলার সংশ্লিষ্ট সকলকে সাথে একাধিকবার বৈঠক, ওয়ার্কশপ, এলাকায় এলাকায় গিয়ে মাইকিং, সভা, সমাবেশ, সচেতনতামূলক পোষ্টার, ব্যানার, লিফলেট বিতরণ, ঝুঁকিপূর্ন এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করে সেখানে সাইনবোর্ড লাগানোসহ বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদেরকে সচেতন করার কাজ রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন এখনো চালিয়ে যাচ্ছে।
সম্ভাব্য প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে দাবী করে পাহাড়ের পাদদেশে যেসব স্থান নিরাপদ নয়, তা চিহ্নিত করে সেখানে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে আশ্রয় কেন্দ্র নির্ধারণ এবং পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করার কথাও জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
প্রাপ্ত তথ্যানুসারে রাঙ্গামাটি পৌর সদরের নয়টি ওয়ার্ডের ৩৪টি স্থানে ৬০৯ পরিবারের প্রায় আড়াই হাজার লোক ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রিজার্ভ বাজারের চম্পানিমার টিলা, চেঙ্গির মুখ, এসপি অফিস সংলগ্ন ঢাল, পুরাতন বাস স্টেশনের মাতৃমঙ্গল এলাকা, কিনারাম পাড়া, স্বর্ণটিলা, রাজমনি পাড়া, পোস্টঅফিস কলোনি, মুসলিম পাড়া, কিনা মোহন ঘোনা, নতুন পাড়া পাহাড়ের ঢাল, শিমুলতলী, রূপনগর এলাকা পাহাড়ের ঢাল, কাঁঠালতলী মসজিদ কলোনি, চম্পকনগর পাহাড়ের ঢাল, আমানতবাগ স্কুলের ঢাল, কলেজ গেইটস্থ কাদেরিয়া মার্কেটের নীচ এলাকা জালালাবাদ কলোনি পাহাড়ের ঢাল। এর বাইরে রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে ৭৫০ পরিবারের তিন হাজার ৪২৪ জন লোক পাহাড়ের ঢালে ঝুঁকিতে আছে।
উল্লেখ্য, রাঙ্গামাটিতে ২০১৭ সালের ১৩ জুন পাহাড় ধসেপাঁচ সেনা সদস্যসহ ১২০ জন নিহত হয়। পরের বছর ২০১৮ সালের ১১ জুন নানিয়ারচর উপজেলায় পাহাড় ধসেমৃত্যু হয় ১১ জনের।