রানা প্লাজার ৪৩ শতাংশ শ্রমিক বেকার

আজকেরবাজার প্রতিবেদক : রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকদের মধ্যে এখনো ৪২ দশমিক ৪ শতাংশ বেকার রয়েছে। বেকারত্বের মূল কারণ হিসেবে ৪৮ শতাংশের শারীরিক ও ৩৩ দশমিক ৪ শতাংশ মানসিক দূর্বলকে চিহ্নিত হয়েছে।

শনিবার ব্রাক ইন সেন্টারে অবিস্মরণীয় অমার্জনীয় : রানা প্লাজা শিরোনামে এক জরিপে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

১৪০৩ আহত শ্রমিক ও ৬০৭ জন মৃত শ্রমিকের পরিবারের ওপর এ জরিপ পরিচালনা করে বেসরকারি সংস্থা একশনএইড।

মানবাধিকার কর্মী হামিদা হোসেন বলেন, যেসব বিদেশি সংস্থ্যা সহায়তার কর্মসূচী হাতে নিয়েছিলেন, সেসব প্রোগ্রামের বিষয়ে খোঁজ রাখতে হবে। সেগুলোর কি অবস্থায় রয়েছে জানতে হবে। আহত শ্রমিকদের আর্থিক সাহায্য করা হলেও, ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়নি।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ফেলো ড. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আহত শ্রমিকদের টাকা ভেঙ্গে ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে সেই টাকা আর কাজে আসেনি। তাদের গড়ে সাড়ে তিন হাজার টাকা মাসে শুধু চিকিৎসায় খরচ হচ্ছে। সবাইকে একটি জায়গায় এসে কাজ করতে হবে।

আর্ন্তজাতিক শ্রম সংস্থ্যার প্রতিনিধি বলেন, যেসব শ্রমিকরা আহত হয়েছেন, তাদের উপযুক্ত কাজের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরির ওপরও গুরুত্ব দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, একশনএইড বাংলাদেশ ২০১৩ সাল থেকে আহত শ্রমিক ও মৃত শ্রমিক পরিবারের সাথে কাজ করছে। একশনএইড বাংলাদেশ ২০১৩ সালের ওই ঘটনায় উদ্ধার কাজে তাৎক্ষনিক সহযোগীতা করেছিল এবং উদ্ধারকৃত শ্রমিকদেও একটি সামগ্রিক ডাটাবেজ তৈরি করে। এরপর একশনএইড বাংলাদেশ উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদেও পুণর্বাসন ও কর্মক্ষম জীবনে ফিরিয়ে আনার কাজ কওে যাচ্ছে। অন্যদিকে ২০১৩ সাল থেকে একশনএইড বাংলাদেশ আহত শ্রমিক ও মৃত শ্রমিক পরিবারের অগ্রগতির তথ্য সংগ্রহ ও পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে।

এই ডাটাবেজ ও জরিপের উদ্দেশ্য রানা প্লাজায় আহত শ্রমিক ও মৃত শ্রমিক পরিবারের পুনর্বাসন ও কর্মক্ষম জীবনে ফিরিয়ে আনার মূল্যায়ন হচ্ছে, আহত শ্রমিক ও মৃত শ্রমিক পরিবারের আর্থ-সামাজিক পুনর্বাসনের অগ্রগতি প্যানেল জরিপের মাধ্যমে মূল্যায়ন, কর্মপরিবেশ ও শ্রম অধিকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে আইন ও নীতিমালাগত পরিবর্তনের চালচিত্র মূল্যায়ন এবং ক্ষতিপূরণ এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিদ্যমান জটিলতার প্রাতিষ্ঠানিক সমাধান অনুসন্ধান।

এই জরিপ আহত শ্রমিক ও মৃত শ্রমিক পরিবারের মাঝে পরিচালিত হয়েছে। আহত শ্রমিক ও মৃত শ্রমিক পরিবারের নমুনা সংখ্যা ছিলো যথাক্রমে ১ হাজার ৪০৩ ও ৬০৭। আহত ১ হাজার ৪০৩ জনের মাঝে ৩৪ দশমিক ৮ শতাংশ পুরুষ এবং ৬৫ দশমিক ২ শতাংশ নারী, যাদের অধিকাংশেরই বয়স ৩০ বছরের নিচে। মৃত শ্রমিক পরিবারের উত্তরদাতাদের মধ্যে অধিকাংশই স্বামী, স্ত্রী, বাবা এবং ভাই।

২০১৩, ১৪, ১৫, ১৬ ও ১৭ সালের জরিপে দেখা যায় যে, আহত শ্রমিকদের শারীরিক স্বাস্থ্য ক্রমান্বয়ে উন্নতির দিকে যাচ্ছে, আবার কিছু ক্ষেত্রে অপরিবর্তিত আছে। বর্তমান জরিপে ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা বলে তাদের শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল, ১২ দশমিক ৪ শতাংশ এর সম্পূর্ণভাবে স্থিতিশীল এবং ১৩ দশমিক ১ শতাংশ এর অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। এই ১৩ দশমিক শতাংশ বলেছেন যে তারা বর্তমানে মাথা ব্যথা, হাত পায়ে ব্যথা এবং পিঠে ব্যথা মতো সমস্যাগুলো প্রতিনিয়ত মোকাবেলা করছেন।

মানসিক স্বাস্থ্যেও ক্ষেত্রে ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ মানসিক অবস্থা এখনও স্বাভাবিক না, যা গত বছওে ছিল ৫৭ দশমিক ২ শতাংশ। বর্তমানে ৫৭ দশমিক ২ শতাংশ বলেছেন যে তাদেও অবস্থা মোটামুটি ভাল এবং ১২ শতাংশ বলেছেন যে তারা সম্পুর্ণভাবে ভালো।

গত ৫ বছর কর্মসংস্থানে যুক্ত হওয়ার হার বেড়েছে। জরিপে দেখা যায় যে ৫৭ দশমিক ৬ শতাংশ আহত শ্রমিক বিভিন্ন চাকুরি বা আত্মকর্মসংস্থানের নিযুক্ত আছেন। অন্যদিকে ৪২ দশমিক ৪ শতাংশ জানিয়েছেন যে তারা এখনও বেকার। যারা বেকার তাদেও বেকারত্বেও প্রধান কারণ শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতা।

আহত শ্রমিকদের মধ্যে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ নূন্যতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ এর নীচে আয় করে। আর ৪২ শতাংশ আহত শ্রমিকদের মাসিক আয় ৫ হাজার ৩০১ টাকা থেকে ১০ হাজার ৩০১ টাকা। অন্যদিকে ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ শ্রমিকদের আয় ১০ হাজার ৩০১ টাকা থেকে ১৫ হাজার ৩০০ টাকা। ২০১৫ সাল থেকে এই অবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে, গত বছর ৭৬ শতাংশ এর আয় ৫ হাজার ৩০০ টাকার নিচে ছিল। খাদ্য চাহিদা মেটানোর পর বাড়ি ভাড়া, সন্তানদেও পড়াশুনা ও চিকিৎসা বাবদ উত্তরদাতাদেও মাসিক গড় খরচ হয় ১০ হাজার ৫৬০ টাকা।

মৃত শ্রমিক পরিবারের অধিকাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন প্রাপ্ত আর্থিক সহায়তা ছাড়া আর কোন প্রকার সঞ্চয় নেই। গত ১০ মাসে প্রশিক্ষণ নিয়েছে ৯৭ জন, মানসিক চিকিৎসা সহায়তা পেয়েছেন ১২১ জন এবং স্বাস্থ্যসেবা পেয়েছেন ১১৫ জন। একশনএইড বাংলাদেশ এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি যারা এ ধরনের সহায়তা দিয়েছে।
আজকেরবাজার: এলকে/ এলকে/২২ এপ্রিল,২০১৭