শিগগিরই ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার প্রাদুর্ভাব কমে আসার আশাবাদ সিটি কর্পোরেশনের

ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সাময়িক বৃদ্ধি পেলেও এই রোগের বাহক এডিস মশার প্রাদুর্ভাব কমাতে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন তৎপর রয়েছে। তাদের আশাবাদ শিগগিরই রাজধানীতে এডিসের প্রাদুর্ভাব কমে আসবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের রোববারের রিপোর্ট অনুযায়ী, শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ কামরুল কিবরিয়া জানান, গত ১ জানুয়ারি থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগ নিয়ে ৬৪২ জন ভর্তি হয়েছিলেন। এদের মধ্যে ৫৯০ জন সুস্থ হয়ে বাসায় চলে গেছেন। বর্তমানে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ৪৮ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছে ৪৭ জন।

ডা. মোহাম্মদ কামরুল কিবরিয়া জানান, চলতি বছর রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) ডেঙ্গু সন্দেহে ৪টি মৃত্যুর তথ্য পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে আইইডিসিআর ২টি মৃত্যুর পর্যালোচনা শেষ করে ১টি মৃত্যু ডেঙ্গুজনিত বলে নিশ্চিত করেছে।

করোনার মহাদুর্যোগে ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া ও কিউলেক্স মশা থেকে নগরবাসীকে রক্ষায় দেশের অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা ও মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, বলেন, ‘বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অসময়ে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত এবং উচ্চ তাপমাত্রার জন্য হঠাৎ করে নগরে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। যদিও উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় রোগীর সংখ্যা অল্প তথাপি আমরা এই সমস্যাটাকে খুব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকার ডেঙ্গু রোগীদের ঠিকানা সংগ্রহ করে সেই বাড়ির ৪শ’ গজ ব্যাসার্ধে রেপিড এ্যাকশন টিমের মাধ্যমে স্পেশাল পরিচ্ছন্ন এবং মশক নিধন অভিযান পরিচালনা করেছি। যে সকল হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী আছে সে সকল হাসপাতালের চারপাশে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা এবং মশক নিধন অভিযান পরিচালনা করেছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকার ডেঙ্গু রোগীদের তথ্য সংগ্রহ অব্যাহত রয়েছে।’

আজ থেকে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৫৪টি ওয়ার্ডে দশদিন ব্যাপী মশক নিধনে বিশেষ চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ সময় পরিচ্ছন্নতা এবং মশক নিধনের পাশাপাশি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হবে। বিগত দিনে পরিচালিত চিরুনি অভিযানে যে সকল বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গিয়েছিলো তার তালিকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অ্যাপসে সংরক্ষিত আছে। এবার সেই তালিকা ধরে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং কারো বাড়ির আশেপাশে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মশক নিয়ন্ত্রণে উত্তর সিটি কর্পোরেশন চতুর্থ প্রজন্মের লার্ভিসাইড নোভালিউরন ব্যবহার শুরু করেছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনই সর্বপ্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র সংস্থা যে, এই সাশ্রয়ী, পরিবেশ বান্ধব এবং কার্যকর লার্ভিসাইড নোভালিউরন বাংলাদেশে ব্যবহার করছে। এই লার্ভিসাইডটি একবার ব্যবহার করলে দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত কার্যকর থাকে।

উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকার মোট ৪০টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে। কেন্দ্রগুলির ঠিকানা প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছে। যে কেউ ইচ্ছা করলে এই সকল কেন্দ্রে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে পারবেন।

মেয়র বলেন, ‘ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাসের বাহক এডিস মশা বাড়ি এবং বাড়ির আশেপাশের জমা পানিতে বংশ বিস্তার করে। তাই আপনার বাড়ির অভ্যন্তর এবং আশপাশ পরিষ্কার রাখুন, তিন দিনে একদিন জমা পানি ফেলে দিন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমরা সবাই একযোগে কাজ করলে আমাদের নগরকে ডেঙ্গু মুক্ত রাখতে পারবো।’
চলতি বছরে চিরুনি অভিযানের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৫ হাজার ৫৫০টি বাড়ি-স্থাপনা পরিদর্শন করে ২ হাজার ৬৮৬টিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। এডিসের লার্ভা পাওয়ায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৫৮ লাখ ১৬ হাজার ৮১০ টাকা জরিমানা করে উত্তর সিটি কর্পোরেশন।

এদিকে ১৬ মে দায়িত্ব গ্রহণের পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস মশক নিধন ও পরিছন্নতার গতানুগতিক কার্যক্রমকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেন।
তিনি বলেন, নগরবাসীকে গতবছরের মতো যেন মশার অত্যচার সহ্য করতে না হয়, সে লক্ষ্যে মশক নিধনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সম্মানিত নগরবাসীদের গতবছরের ন্যায় যেন মশার অত্যচার সহ্য করতে না হয় সে লক্ষ্যে আমি মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করেই মশক নিধন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি।’

মশক নিধনে ডিএসসিসির বছরব্যাপী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। নগরীর ৭৫টি ওয়ার্ডে বছরব্যাপী একযোগে এই কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালিত হবে বলে মেয়র জানান।

মেয়র তাপসের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতি ওয়ার্ডে ৮ জন মশককর্মী সকাল ৯টা থেকে শুরু করে দুপুর ১টা পর্যন্ত লার্ভিসাইডিং করছে। অন্যদিকে ওয়ার্ড প্রতি ১০ জন মশক ক্রু দুপুর আড়াইটা থেকে শুরু করে বিকেল সাড়ে ৬ টা পর্যন্ত ফগিং কার্যক্রম চালায়। ওয়ার্ড কাউন্সিলররা সরাসরি এসব কাজের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন।

এ কার্যক্রম যথাযথভাবে চললে মশার প্রজনন ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে মেয়র বলেন, ‘নগরবাসী ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হোক তা আমরা চাইনা। এ কারণেই করোনার এ মহামারীর মধ্যেও মশক নিধন কার্যক্রম বেগবান করা হয়েছে এবং ২৪ ঘন্টা একাজ চলবে।’