শুধু নিয়োগ বাণিজ্য আর জাল টাকাই নয় মালেক আবার অবৈধ গ্যাস সংযোগও দিতেন

স্বাস্থ্য অধিদফতরে আধিপত্য বিস্তার, নিয়োগ বাণিজ্য, অস্ত্র ও জাল টাকার পাশাপাশি তুরাগে অবৈধ গ্যাস সংযোগের ব্যবসাও করতেন ড্রাইভার আব্দুল মালেক। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মালেক ড্রাইভার কী করে শত কোটি টাকার মালিক হলেন- এটাই এখন ‘টক অব দ্য টাউন’।

যেভাবে কোটিপতি ড্রাইভার মালেক:-

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সামান্য একজন ড্রাইভার থেকে কোটিপতি হওয়ার বিষয়টি এলাকার মানুষের কাছে সিনেমার গল্পকেও হার মানিয়েছে। অধিদফতরে আধিপত্য বিস্তার, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, অস্ত্র ও জাল টাকার ব্যবসার পাশাপাশি এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগের ব্যবসা করতেন মালেক। এসব করেই গাড়ি, বাড়ি ও কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন মালেক। তার এতো সম্পদের কথা শুনে এলাকার লোকজনও বিস্মিত।

মাত্র অষ্টম শ্রেণি পাস আব্দুল মালেক। ১৯৮২ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ড্রাইভার হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে চাকরি স্থায়ী হওয়ার পর স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক এক ডিজির গাড়ির ড্রাইভার হন। এরপর থেকেই তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

শুরু করেন অধিদফতরে আধিপত্য বিস্তার। একে একে অধিদফতরে নিয়োগ দিয়েছেন মেয়ে, মেয়ের জামাইসহ প্রায় ৫০ জন আত্মীয়-স্বজনকে। অধিদফতরের একটি পাজেরো গাড়িসহ বেশকয়েকটি গাড়ি তিনি তার পারিবারিক প্রয়োজনে ব্যবহার করতেন। গড়ে তুলেছেন শত কোটি টাকার সম্পদ।

সরেজমিনে সম্পদের যেসব তথ্য পাওয়া গেছে:-

রাজধানীর তুরাগ এলাকায় দুইটি ৭তলা বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে তার। যেখানে ফ্ল্যাট রয়েছে ২৪টি। এর একটি বাড়ির তৃতীয় তলাতে পরিবার নিয়ে থাকতেন তিনি। বাড়িটিতে পাজেরো গাড়ি নিয়ে ঢুকতে বড় রাস্তার প্রয়োজন বলে পুরো রাস্তাটায় তিনি কিনে নিয়েছেন। এছাড়াও রাজধানীর হাতিরপুল এলাকার সেন্ট্রাল রোডে ১০তলা একটি ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। যেখানে ফ্ল্যাট রয়েছে ২০টি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, তুরাগ এলাকায় তার আরো দুটি প্লটের সন্ধান মিলেছে। ১৫ কাঠা প্লটের ওপর রয়েছে তার ছেলের নামে বিশাল একটি গরুর খামার। তার পাশে ৩ কাঠার প্লটের ওপর একতলা একটি বাড়ি নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন তিনি।

মালেকের মেয়ে জানান, তাদের কোনো সম্পদ নেই। তার বাবা একজন সৎ পরহেজগার। সাদাসিধে জীবনযাপন করেন। তার বাবাকে ফাঁসানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি। বাসার ভাড়াটিয়ারা জানান, এই বাড়ির মালিক মালেক সাহেব। প্রতিমাসে ভাড়া তোলেন তিনি। প্রায় প্রতিদিনই বাসায় এসে খোঁজখবর নিতেন।

এলাকাবাসী জানান, তুরাগ এলাকার মানুষ ড্রাইভার মালেককে হাজি বাদল নামে চেনেন। তিনি স্বাস্থ্য অধিদফতরে আধিপত্য বিস্তার, নিয়োগ বাণিজ্য, অস্ত্র ও জাল টাকার ব্যবসার পাশাপাশি এই এলাকার অবৈধ গ্যাস সংযোগের ব্যবসাও করেন বলে জানান তারা।

এই এলাকার প্রায় ১শ’ বাড়িতে মোটা অংকের টাকা নিয়ে গ্যাস সংযোগ দিয়েছে মালেক। এসব নিয়ে এলাকার মানুষ মুখ খুলতেও ভয় পান। অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার সম্পদ এবং বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি টাকা গচ্ছিত রেখেছেন তিনি। বিদেশে অর্থপাচার ও জ্ঞ্যাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ড্রাইভার মালেককে তিনবার চিঠি দিয়ে তলবও করেছিলো দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মালেকের ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী জানান, তার বাসার গ্যাস লাইন সংযোগ দিতে দুই বারে ৫০ হাজার করে এক লাখ টাকা দেন মালেককে। পরে তার বাড়িতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ পান তিনি। এদিকে পুলিশ বলছেন, রিমান্ডে জিঙ্গাসাবাদে তার পেছনে আরো কেউ জড়িত আছে কিনা তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

অধিদফতরে যেভাবে শক্তিশালি মালেক সিন্ডিকেট:-

অধিদফতর সূত্র জানায়, অধিদফতরে নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলি বাণিজ্য চালাতো মালেকের শক্তিশালি সিন্ডিকেট। তার এই সিন্ডিকেটে স্বাস্থ্য অধিদফতরের দুইজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, একজন প্রধান সহকারী, দুইজন অফিস সহকারী মিলে ছয়জন। ২০০৯ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত (দুই বছরে) সারাদেশে বিভিন্ন উপজেলায় স্বাস্থ্য সহকারী পদে শতাধিক লোককে নিয়োগ দিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেন মালেক। এছাড়া স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃত্ব পর্যায়ের লোকজনের সঙ্গেও তার সখ্যতা রয়েছে।

অন্যদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতারের পর মালেকের অবৈধ অর্থ-সম্পত্তির তথ্য বেরিয়ে আসে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মালেক জানান, তার যেসব সম্পদ রয়েছে, সেগুলো রক্ষার্থে এবং নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে উদ্ধার হওয়া অবৈধ অস্ত্রটি নিজ হেফাজতে রাখতেন। আর জাল টাকার সম্পর্কে তিনি জানান, তার বিভিন্ন কারবারে লেনদেনের সময় জালনোটগুলো কাজে লাগাতেন। তথ্য-ডেইলি বাংলাদেশ

আজকের বাজার/আখনূর রহমান