শেখ হাসিনার সরকার বিষমুক্ত স্বদেশ বিনির্মাণে বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছে: ওবায়দুল কাদের

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার বিষমুক্ত স্বদেশ বিনির্মাণের জন্যই বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র কাঠামো বিষাক্ত নয়, বরং বিষমুক্ত স্বদেশ বিনির্মাণের জন্যই বিরামহীনভাবে কাজ করে আসছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার।’
ওবায়দুল কাদের আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাস্যকর ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতেই তিনি বিবৃতিতে এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বন্দুকের নলের মুখে অবৈধ ও অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলকারী নিষ্ঠুর স্বৈরাচার জিয়াউর রহমানের হাতে জন্ম নেওয়া বিএনপি দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্র কাঠামোকে বিষাক্ত করে গেছে এবং তার প্রতিক্রিয়া ও ক্ষত এখনও সমাজ-রাষ্ট্র বয়ে বেড়াচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি রাজনীতির নামে রাষ্ট্র কাঠামোর সর্বত্রই মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী আদর্শ এবং স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিকে প্রতিষ্ঠিত ও লালন-পালন করেছে। সময়ের সাথে সাথে বিএনপি একটি বিষবৃক্ষে পরিণত হয়েছে। সেই বিষবৃক্ষকে সমূলে উৎপাটন করে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল উন্নত-সমৃদ্ধ নিরাপদ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ এই জনপদের সুদীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের পথপ্রদর্শক। সুদীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের পথপরিক্রমায় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণার পর দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন শুধু নয়, এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামেও নেতৃত্বদানকারী সংগঠন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য যে সরকার আইনগত বৈধতা ও স্বীকৃতি অর্জন করে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার বন্দরে পৌঁছে দিয়েছিল, সেই সরকার ছিল ১৯৭০ সালে নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের জনপ্রনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত সরকার তথা আওয়ামী লীগ সরকার।
ওবায়দুল কাদের বলেন, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণের সংগঠন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আওয়ামী লীগে মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যার হিসাব তুলতে গিয়ে নিজের স্বাধীনতা বিরোধী অবস্থানকেই সুস্পষ্ট করেছেন। ব্যক্তি স্বার্থে ও ক্ষমতার লোভে আদর্শচ্যুত কতিপয় দালাল, খুনি ও স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্ঠীকে নিয়ে গঠিত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের আওয়ামী লীগ সম্পর্কে এই ধরনের অবমাননাকর বক্তব্য তাদের স্বাধীনতা বিরোধী অবস্থানের বহিঃপ্রকাশ ছাড়া কিছু নয়।
তিনি বলেন, বাঙালি জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন যে স্বাধীনতা, তার ইতিহাসের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস আওয়ামী লীগের ইতিহাস; মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আওয়ামী লীগের ইতিহাস; এদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের ইতিহাস আওয়ামী লীগের ইতিহাস।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে যদি কেউ আওয়ামী লীগকে বিচ্ছিন্ন করতে চায় তাহলে তারাই এ দেশের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারের প্রতি শতভাগ নিষ্ঠা রেখে সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণই আওয়ামী লীগের প্রধান লক্ষ্য।
তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ বিভেদের কথা বলছেন! এতে আমাদের আফসোস হয়। জাতির পিতার অবিসংবাদিত নেতৃত্বে বাংলার হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ সকল ধর্মের মানুষ যুদ্ধ করে এ দেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছে। জাতির পিতাকে হত্যার পর খুনি-ঘাতকচক্র স্বাধীনতা বিরোধী পাকিস্তানি ভাবধারায় দেশকে পিছনের দিকে নিয়ে যায়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের পবিত্র চেতনাকে ভূ-লুণ্ঠিত করে স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রাজনৈতিক বৈধতা দিয়ে বিভেদের গোড়াপত্তন করেছিল সামরিক  স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতা বিরোধী, বঙ্গবন্ধুর খুনিচক্র, ভুঁইফোঁড়, দালাল রাজনীতিবিদ ও কালোবাজারীদের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম হিসেবে সৃষ্টি হয় বিএনপি। তখন এ দেশের মুক্তিযোদ্ধারা অবর্ণনীয় নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়।
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা তখন নিজেদের পরিচয় দিতেও ভয় পেত। তথাকথিত সেনা অভ্যুত্থানের মিথ্যা অভিযোগে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর শত শত মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার এবং শত শত মুক্তিযোদ্ধা সৈনিককে ফাঁসি দিয়ে ও ফায়ারিং স্কোয়াডে নৃসংশভাবে হত্যা করে জিয়াউর রহমান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, জিয়াউর রহমানের হাতে প্রতিষ্ঠিত বিএনপির মুখম-লে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নির্যাতনের কলঙ্কের কালিমা রয়েছে। সেই কলঙ্কের কালিমা এবং স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির সঙ্গে তাদের সহ-অবস্থানের ঘটনা আড়াল করতেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আওয়ামী লীগে মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন।