শেরপুরের চরাঞ্চলের বেবি কর্ণ চাষ করা হচ্ছে

জেলার চরাঞ্চলের কৃষকরা পরীক্ষামূলকভাবে বেবি কর্ণ চাষ করছেন। অন্য ফসলের তুলনায় কম খরচে লাভ বেশি বলেই এ সবজি চাষে আগ্রহী তারা। গবেষকরা বলছেন, বাজার তৈরি করা গেলে, কৃষকদের উৎসাহের সঙ্গে বাড়বে বেবি কর্ণ উৎপাদন।
শেরপুরের চরাঞ্চলে বেবি কর্ণ ফসলের সম্ভাব্যতা নিয়ে গবেষণা করছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যায়ের পিএইচডির শিক্ষার্থী শেরপুরের জমশেদ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক পার্থ সারথী কর।
তিনি জানান, বাংলাদেশের চরাঞ্চলের জমির বেশিরভাগ মাটিই বেলে এবং পানি ধারণক্ষমতা কম। জমিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ ও উর্বরতাও কম। রাসায়নিক সার সংযোজনের মাধ্যমে শস্যের উৎপাদনশীলতা উন্নত করা সম্ভব। কিন্তু রাসায়নিক সার ব্যয়বহুল। চরাঞ্চলের প্রধান ফসল হলো বোরো ও আমন ধান। তবে এ ধান আকস্মিক বন্যা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ। পানির ঘাটতির কারণে বোরো ধানের উৎপাদনও লাভজনক নয়। তবুও কৃষকরা খাদ্য ও গোখাদ্যের জন্য বোরো ধান চাষ করছেন । অপর পক্ষে বেবি কর্ণ একটি স্বল্পমেয়াদি ও অর্থকরী ফসল হিসেবে চাষ করা যায়। ধানের তুলনায় বেবি কর্ণে পানির চাহিদা তুলনামূলকভাবে কম। পোকার উপদ্রব ও রোগের সংক্রমণও কম থাকে। ফলে উৎপাদন ব্যয় কম। ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে বেবি কর্ণ সংগ্রহ করা যায়। এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি। প্রয়োজনীয় ফাইবার ও প্রোটিন ছাড়াও বেবি কর্ণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ। এটি সাধারণত সবজি ও সালাদে ব্যবহƒত হয়। অভিজাত চাইনিজ রেস্টুরেন্টগুলোয় বেবি কর্ণ স্যুপ একটি জনপ্রিয় খাবার। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোয় বেবি কর্ণ অত্যন্ত জনপ্রিয় খাদ্য। এসব দেশে বেবি কর্ণ চীন ও ভারত রপ্তানি করে। বাংলাদেশ থেকেও বেবি কর্ণ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে। বেবি কর্নের গাছ সবুজ থাকা অবস্থায় সংগ্রহ করায় এর কা- ও পাতা গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এগুলো সাইলেজের মাধ্যমে তিন থেকে পাঁচ মাস সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এতে চরাঞ্চলের গোখাদ্যের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলে এ চাষের সঙ্গে যুক্তরা জানিয়েছেন। এছাড়া বেবি কর্ণ গাছ দ্রুত বর্ধনশীল, রসালো, দূষিত পদার্থমুক্ত এবং যে কোনো পর্যায়ে প্রাণীদের খাওয়ানো যায়। ফলে গরুর দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
কৃষক আব্দুল লতিফ জানান, বেবি কর্ণ প্রশস্ত দূরত্বে বপন করায় দুই লাইনের মাঝে ডালজাতীয় ফসল চাষ করার সুযোগ রয়েছে। এতে আমরা একই জমি থেকে বেবি কর্ণ গোখাদ্য ও ডালজাতীয় ফসলের আবাদ করতে পারছি।
আমার জমিতে তিন বছর ধরে বেবি কর্ণ চাষ করছি। আমি বেবি কর্ণ আবাদ করে অনেক লাভবান হয়েছি।
কৃষক মজিবর মিয়া জানান, এক একর জমিতে বেবি কর্ণ ফলাতে আমার খরচ পড়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। আর বেবি কর্ণ সবজি বিক্রি করে এক লাখ টাকারও বেশী আয় করা যায়। আবার গরুর খাদ্যও পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. আব্দুল কাদের বলেন, চরাঞ্চলের মাটি বেবি কর্ণ চাষের জন্য খুবই উপযোগী। ধান চাষ করলে যেখানে প্রতিদিন দুবার পানি দিতে হয়, সেক্ষেত্রে বেবি কর্ণ চাষে মৌসুমে মাত্র তিনবার পানি দিলেই হয়। তাই চরাঞ্চলের পতিত জমিতে বেবি কর্ণ চাষ খুবই লাভজনক হবে। যদিও এ বেবি কর্ণের এখনও পাইকারি ও খুচরা বাজার গড়ে ওঠেনি। তবে দেশের বিভিন্ন চাইনিজ ও ফাস্টফুড রেস্তোরাঁয় এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বেবি কর্নকে সহজলভ্য করতে সরকার, বেসরকারি সংস্থা ও স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাঁর মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে এর বাজার তৈরি করা খুবই সহজ। সেজন্য বেবি কর্ণ আগামীতে বাংলাদেশের সম্ভাবনার একটি সবজি বলেও মনে করেন তিনি।
শেরপুর জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডঃ মুহিত কুমার দে, আমাদের এলাকায় নতুন করে পরীক্ষামূলকভাবে বেবিকর্ণের চাষ করা হয়েছে। এখনও বাজার তৈরী হয়নি। আমরা বাজার সৃষ্টি করার জন্য সার্বিক সহায়তা করবো।