সকলকে বাধ্যতামূলক হেলথ ইন্স্যুরেন্সের আওতায় আনা জরুরি

করোনাকালীন সময়ে আমাদেরকে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তা বলতে হলে শুরুতেই বলা দরকার যে, ইন্স্যুরেন্স সেক্টরটা একটা গুরুত্বপূর্ণ খাত। দুর্ভাগ্যবশত আমরা অবহেলিত একটা খাত ছিলাম দীর্ঘদিন। এর প্রমাণস্বরূপ আমি বলি, ১৯৩৮ সালের বিমা আইনের পর, নতুন করে বিমা আইন পাই আমরা ২০১০ সালে। এখান থেকেই বোঝা যায়, আমরা কতটা অবহেলিত ছিলাম। এ কারণেই অনেক পুঞ্জিভূত সমস্যা আমাদের মধ্যে আছে এবং ছিল। আমরা এগুলো আস্তে আস্তে ওভারকাম করছিলাম। এরমধ্যেই আবার করোনার প্রভাব এসে ইন্স্যুরেন্স সেক্টরে পড়েছে। সরকারি লকডাউন বা সাধারণ ছুটির কারণে আমরা প্রায় সোয়া দুই মাস অফিসে আসতে পারিনি। অন্যান্য কোম্পানির মতো আমরাও প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাজ করছি। কিন্তু ঘরে বসে পুরো অফিসের বিকল্প কাজ করার মতো আইটি সাপোর্ট আমাদের ছিল না। এর জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার মতো সময় আমরা পাইনি।

করোনা যখন আমাদের সামনে আসে, তখন সত্যিকার অর্থেই আমরা দিশেহারা হয়ে যাই। এই ধরণের সমস্যা আমরা কখনই পূর্বে ফেস করিনি। আমাদের দেশে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আগে যে হরতাল হতো, তখন কিন্তু কিছু কিছু স্টাফরা অফিসে পায়ে হেঁটে হলেও আসতো। মেইন দরজা বন্ধ করে হলেও ভিতরে আমরা কাজ করতাম। আর এখন এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, একদমই আমরা অফিসে আসতে পারছি না। জীবন-জীবিকা তো আর থেমে থাকবে না। তাই আমরা বাসায় থেকে কাজ শুরু করেছি। অনেককে জরুরি ভিত্তিতে আমরা কিছু সাপোর্ট দিলাম। বাসায় ল্যাপটপ নিয়ে কানেকশন দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি। যেহেতু মাঠকর্মীর একটা বড় অংশ কমিশন ভিত্তিক কাজ করে,তারা প্রতিনিয়ত যাতে এই টাকাটা পায়, সেই ব্যবস্থা আমরা অনলাইনে করলাম।

আমাদের কোম্পানির একটা বড় অংশ আমরা গ্রুপ ইন্স্যুরেন্স করি। যার ফলে বিভিন্ন অর্গানাইজেশনের এমপ্লয়ীদের ক্ষেত্রে, তারা যে বিভিন্ন হসপিটালে ভর্তি থাকছে, আমাদের এখানে একটা ক্যাশলেস ব্যবস্থা আছে অর্থাৎ আমরা হসপিটালকে ডাইরেক্ট পেমেন্ট করি। আমাদের এখানে যারা ইন্স্যুরেন্স করে, তারা সরাসরি হসপিটালে চলে যায় এবং ভর্তি হয়ে ট্রিটমেন্ট করে। টাকাটা আমরা সরাসরি হসপিটালকে দেই অর্থাৎ গ্রাহককে হসপিটাল পেমেন্ট করতে হয় না।

আমাদের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা একটা নির্দেশ দিলেন যে, যাদের পলিসির মেয়াদ পূর্তি হবে, তাদের টাকা দিয়ে দিতে হবে। যার ফলে আমাদের জীবনযাত্রার স্টাইলের যে একটা বড় পরিবর্তন,আমরা ঘরে বসে কখনোই অফিসের কাজ করিনি, সেটা এখন আমরা করা শুরু করেছি। যার ফলে আমাদের প্রযুক্তির সহায়তা নিতে হলো।

আমাদের প্রতিষ্ঠানকে এই যে প্রযুক্তি নির্ভর হতে কে সহয়তা করলো? আমাদের পরিচালনা পর্ষদ, না সরকার? আমি বলবো করোনা ভাইরাস। বর্তমান উদ্ভুত পরিস্থিতি, পরিবর্তীত সময় আমাদের বেশি ডিজিটাল হতে সহায়তা করেছে। করোনার কারণেই আমরা এতো আইটি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি এবং এর প্রয়োজনীয়তা আমরা উপলব্ধি করছি।

একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, এখন প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান দুটো বড় চ্যালেঞ্জ ফেইস করছে। প্রথমটি হলো হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট। আর দ্বিতীয়টি হলো বিজনেস অপারেশন। আমরাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস করছি। আমরা ডিসইনফেকশন টানেল সেট করেছি গ্রাউন্ড ফ্লোরে। লিফটে ওঠার আগেই এর ভিতর দিয়ে আসতে হচ্ছে এবং পা জীবাণুমুক্ত করার জন্য লিকুইড জীবাণুনাশক ফোমের সাথে মিশিয়ে রাখা হয়েছে, সেখানে পা দিয়ে পা জীবাণুমুক্ত করে আসতে পারবে। লিফটে আমরা চার জনের বেশি এলাও করছি না। যে কারণে আমাদের অফিস এন্ট্রিটা আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করেছি। আগে আমরা দশটায় আসতাম ছটায় চলে যেতাম। এখন একটা গ্রুপ সাড়ে নয়টায় আসে,একটা গ্রুপ দশটায় আসে এবং একটা গ্রুপ সাড়ে দশটায় আসে। যে গ্রুপ সাড়ে নয়টায় আসবে, তারা সাড়ে পাঁচটায় যাবে। যারা দশটায় আসবে, তারা ছটায় যাবে এবং যারা সাড়ে দশটায় আসবে তারা সাড়ে ছটায় যাবে। এর ফলে যেটা হবে সেটা হলো, অফিসে ঢোকার সময় যে বড় একটা গ্যাদারিং হতো, সেটা আমরা এড়াতে পারলাম।

এছাড়াও আমাদের অফিসগুলোতে আমরা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মাস্ক সরবরাহ করেছি এবং প্রত্যেককে স্যানিটাইজার দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের অফিসে দুবেলা স্প্রে করি। ব্লিচিং পাউডার এবং পানি মিশিয়ে অফিস শুরুর আগে এবং ছুটির পরে স্প্রে করা হয়। সোশ্যাল ডিসটেন্স মেইনটেইন করার জন্য আমরা যেটা করেছি, যারা সিনিয়র লেভেলে তারা বাংলাদেশের ট্রেডিশন অনুযায়ী আলাদা আলাদা রুমে বা কেবিনে বসেন। যার ফলে তাদের শারীরিক দূরত্বের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। যারা খোলা জায়গায় কেবিনেটে বসে, তাদের জন্য বাইরোটেনশন করছি। অর্থাৎ রোববারে যে ফিফটি পার্সেন্ট আসে, তারা সোমবারে অফ থেকে আবার মঙ্গলবারে আসে। এভাবে বাইরোটেশন করাতে যেটা হচ্ছে, যারা ওপেন জায়গায় বসছে তাদের একটা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে।

এখন আসি বিজনেস অপারেশনের কথায়। এখানে দুটো দিক আছে। আপনারা হয়তো জানেন যে, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স গ্রুপ ইন্স্যুরেন্স-এ বাংলাদেশে অন্যতম। গ্রুপের একটা সুবিধা হচ্ছে, গ্রুপে কিন্তু পলিসিটা রিনিউ হচ্ছে গ্যাপ থাকছে না। কারণ, সেই অর্গেনাইজেশনগুলো তাদের কর্মচারীদের এই সময় সাপোর্ট দিতে চাচ্ছে এবং আমরা দেখেছি যে, কিছু কিছু অর্গেনাইজেশন তাদের কাভারেজ কিন্তু বাড়িয়ে দিচ্ছে। আগে যদি ১০০ টাকা থাকতো, তাহলে এখন ২০০ টাকার কাভারেজ দিচ্ছে। একদিক দিয়ে আমাদের লাভ হচ্ছে, আমরা প্রিমিয়াম বেশি পাচ্ছি এবং তাদের সাথে আমরা অনলাইনেই প্রিমিয়াম বিল করা, ইনভয়েস করা, এগুলো সব আমরা অনলাইনেই সম্পাদন করছি। আরও একটা বড় অংশ আছে, একক বীমা। এটাতে এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের সব কোম্পানির জন্য আমাদের এজেন্টরা ফেস টু ফেস গিয়ে পলিসি বুঝায় এবং পলিসি সেল করে। এখানে আমরা একটা বড় ধরনের বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। এপ্রিল মাসে যদি আমরা বলি তাহলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এখানে প্রিমিয়াম প্রায় দশ ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। পরবর্তী সময়ে আমরা তাদেরকে বললাম, যাতে ডিজিটাল টেকনোলজি ব্যবহার করে এসএমএস-এর মাধ্যমে যোগাযোগ করে, তাদেরকে আমরা এসএমএস করা শুরু করলাম। তাদেরকে আমরা বললাম যে তারা যে ফিজিক্যালি গিয়ে ফরম ফিলাপ করতে হতো, সেখানে আমরা তাদেরকে অনলাইনের মাধ্যমে ফিলাপের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। যার ফলে মে মাসে গিয়ে দেখা গেলো, আমরা নরমাল সময় যে ব্যবসা করতে পারতাম তার অর্ধেক চলে আসছে। আর জুন মাসে তারা এইসব বিধান মেনেই কাজ করছে। যার ফলে নরমাল বিজনেসের প্রায় আশি শতাংশ জুন মাসে চলে এসেছে। এখন আমরা বেশিরভাগ যোগাযোগ জুম-কানেকশনের মাধমে করছি।

আমরা আর একটা পদক্ষেপ নিয়েছি, যাতে অনলাইনে কিভাবে পলিসি সেল করা যায়। করোনার কারণে আমি মনে করি, ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে হলেও দূর থেকে গ্রাহকের সাথে আমাদের যোগাযোগ রক্ষা করাদরকার। এখন সবার ভিতর একটা ভয় কাজ করছে, আর তা হলো মৃত্যু ভয়। এখন আমরা যেখানে মৃত্যু নিয়ে কাজ করি, সেখানে অন্য সময়ে জীবন বীমার যেই সময় লাগতো মেয়াদ পূর্ণ হতে, এখন কিন্তু তার চেয়ে কম সময়ে করা সম্ভব। এটা কিন্তু আমাদের জন্য একটা প্লাস পয়েন্ট। এই পরিস্থিতি নিয়েই আমাদের চলার অভ্যাস করতে হবে। আশা করি আগামী দু’মাসের মধ্যেই আমরা আমাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে পারবো।

এবার একটু জাতীয় বাজেট নিয়ে আলোকপাত করা যাক। এ যাবত কালের সবচেয়ে বড় বাজেট মাত্র কয়েকদিন হলো পাশ হয়েছে। দেশের এই সময়ে এতো ভালো এবং বড়ো বাজেট অবশ্যই সরকারের জন্য বড় সফলতা। সেক্টর নিয়ে বাজেটে আমাদের কিছু প্রত্যাশা ও দাবি-দাওয়া ছিল। খুবই আশাহত হয়ে বলতে হচ্ছে, আমাদের প্রত্যাশা ও দাবি-দাওয়ার প্রতিফলন কিন্তু বাজেটে দেখতে পাওয়া যায়নি। দেখুন, ইন্স্যুরেন্স একটি বড় খাত। কয়েক লক্ষ লোক এই পেশার সাথে জড়িত। তাদের মধ্যে একটা বড় অংশই কমিশন ভিত্তিক। তারা ব্যবসা করতে পারলেই টাকা পায়। খুব কম অংশই কিন্তু বেতনভুক্ত। আমরা চেয়েছিলাম সরকার বিভিন্ন খাতে যেহেতু সহায়তা করছে, প্রণোদনা দিয়ে। আমাদের যারা মাঠ কর্মী আছেন, কমিশন ভিত্তিক কাজ করেন, কোনো ফিক্সড  ইনকাম নাই, তাদের জন্য এই দুর্যোগকালীন সময়ে আমাদের কিছু প্রত্যাশা ছিল সরকারের কাছে। আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দাবিও জানানো হয়েছিল লিখিতভাবে। কিন্তু বাজেটে বীমা কর্মীদের জন্য দুঃখজনক ভাবে কোন অ্যালোকেশন নেই। তবে আমরা এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

এর সাথে, আমরা গত তিন বছর আগে থেকে সরকার একটা নিয়ম করেছে দাবি জানিয়ে আসছিলাম এই সেক্টরের সার্বিক ডেভলপমেন্টের জন্য। তিন বছর আগে সরকার একটা নিয়ম করেছে যারা পলিসি গ্রহণ করেন, মেয়াদপূর্তি পেয়ে তারা যে টাকাটা পান অর্থাৎ তারা যে প্রিমিয়ামটা জমা দেন, তার সাথে আমরা প্রতিবছরই কোম্পানির পারফর্মেন্সের উপর ভিত্তি করে একটা বোনাস তাদের দিয়ে থাকি। বোনাস এবং বীমা অংকের টাকাটা তারা ফেরত পান। আমরা যখন দশ পনেরো বছর আগে যে পলিসিটা তাদের কাছে বিক্রি করেছি, তখন কিন্তু আমরা বলেছি যে, বীমা অংক এবং দশ পনেরো বছরের যে বোনাস আপনারা পাবেন, সেটার ওপর আপনাদের কোনো ট্যাক্স দিতে হবে না। কিন্তু তিন বছর আগে সরকার নিয়ম করলো, যে বোনাস তারা পাবে, তার উপর ৫% ভ্যাট কেটে রাখা হবে। এতে করে গ্রাহকরা একটা ধোঁকা খেলো। পলিসি বিক্রির সময় আমরা একথাটা তাদের বলিনি। কারণ তখন এ আইনে ভ্যাট ছিল না। আর এখন তাদের কাছ থেকে ৫% ভ্যাট কেটে রাখা হচ্ছে। আমরা তাদেরকে যে প্রজেকশনটা দিয়েছিলাম যে, পলিসির মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে এই পরিমাণ টাকা পেতে পারেন, সেখান থেকে তার টাকাটা কমে গেল। এর ফলে যা হচ্ছে তা হলো, এমনিতেই আমাদের দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিমা করতে চায় না, বুঝিয়ে বীমা করানো হয়, মেয়াদপূর্তিতে যখন এই টাকাটা কম পাবে, তখন কিন্তু আমাদের ইন্স্যুরেন্স সম্পর্কে তাদের ভিতর একটা নেতিবাচক দিক তৈরি হয়ে যাবে। আমরা দাবি করে আসছিলাম যে, ইন্স্যুরেন্সে দেশের আরো প্রচুর লোককে পেনিট্রেশন করা দরকার, আরও বেশি লোককে ইন্স্যুরেন্সে আনা দরকার। সেখানে এই ট্যাক্সটা যোগ করা হলে আমাদের এই পেনিট্রেশন বাড়ানোটা কিন্তু অনেক বাধাগ্রস্ত করবে। আমাদের দাবি ছিল, এটা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক, সেটা হয়নি। করোনার কারণে আমি মনে করি যে, বাংলাদেশে হেলথ ইন্স্যুরেন্সটা অনেক জরুরি হয়ে পড়েছে। বাধ্যতামূলক করা না গেলেও যাতে হেলথ ইন্স্যুরেন্স-এ আমরা মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারি, তার জন্য সেখানে কিছু সুবিধা রাখা দরকার। অথচ শুধুমাত্র হেলথ ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়ামের উপর ১৫% ভ্যাট রাখা হয়েছে।

লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়ামের উপর কোনো ভ্যাট নাই। আর ভ্যাট থাকায় হেলথ ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়ামের উপর একটা বড় রকমের প্রভাব পড়ছে। আমরা চাচ্ছিলাম যে, এই ভ্যাট অপসারণ করা হোক। সরকার এবার কিন্তু নন লিস্টেড কোম্পানিকে আড়াই পার্সেন্ট ট্যাক্স কমিয়ে দিয়েছে। যদি লিস্টেড কোম্পানির ট্যাক্স কমিয়ে দেওয়া হতো তাহলে বেশি লাভবান হতো যারা এখানে বিনিয়োগকারী। আমাদের কোম্পানির ৬০ শতাংশ কিন্তু পাবলিক শেয়ার হোল্ডার। তাই এখানে যদি ট্যাক্স কমানো হতো, তাহলে সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা লাভবান হতো। পাশাপাশি জীবন বিমা কোম্পানিতে যেটা হয়, উদ্বৃত্ত ১৯% পলিসি গ্রাহককে বোনাস আকারে দিয়ে থাকি। এখানেও যদি আমরা প্রফিট উদ্বৃত্ত বেশি করতে পারি পলিসির বোনাস আমরা বেশি দিতে পারব। বিনিয়োগকারীদের আরো বেশি আকৃষ্ট করা যেতো। এখানে কিন্তু আমরা সে সুযোগটা পাইনি।

আরো একটা ব্যাপার আছে, যেটা আমরা ডাবল ট্যাক্সেশন বলি। আমরা প্রধানত যে প্রিমিয়ামটা সংগ্রহ করি, সেখানে কিন্তু আমরা যে ঝুঁকিগুলো গ্রহণ করি, প্রত্যেকটা কোম্পানির একটা ক্যাপাসিটি থাকে তার ঝুঁকি গ্রহণ করার। এর থেকে যখন বেশি ঝুঁকি গ্রহণ করি, তার জন্য আমরা রিইন্স্যুরেন্স করি। এই রিইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম কিন্তু আমি যখন একটা পলিসি বিক্রি করে ১০০টাকা প্রিমিয়াম নিলাম, এখান থেকে কিন্তু আমি রিইন্স্যুরেন্স করি। সরকার যেটা করছে এই রিইন্সুরেন্সের প্রিমিয়ামের উপরে আবার ১০% ভ্যাট কেটে রাখছে। এটা কিন্তু সাধারণত ডাবল ট্যাক্সেশনের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। আমি কিন্তু প্রথম ১০০ টাকা এনে ৫০ টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করছি, ৫০ টাকার উপরে আবার ১০ পার্সেন্ট ভ্যাট দিতে হচ্ছে। এটা নিয়েও আমরা দাবি করে আসছিলাম যে, এটা অপসারণ করা হোক, ডাবল ট্যাক্সেশন এখানে হতে পারে না। এগুলো আমরা পাইনি। যার ফলে অনেক বড় বাজেট হলেও বীমা খাত সুবিধাবঞ্চিত হলো।

ভ্যাটের বিষয়টি সরকার যদি আমাদের চাওয়ার সাথে মিলিয়ে পূনরায় চিন্তা করতো তাহলে, পুজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হতো, যেহেতু অনেকগুলো ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভূক্ত আছে।

মো. জালালুল আজিম চিশতী
ব্যব্স্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড