সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ না করলে আইনি ব্যবস্থা : শিক্ষামন্ত্রী

যে সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুসারে সঠিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে ব্যর্থ, নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধসহ তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) ৬ষ্ঠ সমাবর্তনে বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের প্রতিনিধি হিসেবে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন- যারা মুনাফার লক্ষ্য নিয়ে চলতে চান, যারা এখনও নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে সফল হয়নি এবং যারা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার পরিবেশ ও নির্ধারিত শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি একাধিক ক্যাম্পাসে পাঠদান পরিচালনা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, আমরা সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকারী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না। তারা সকলেই আমাদের সন্তান এবং জাতির ভবিষ্যত। তাদের সকলের জন্যই আমরা মানসম্মত শিক্ষা এবং সকল সুযোগ নিশ্চিত করতে চাই। যারা এখনও ন্যূনতম শর্ত পূরণ করতে পারেনি তারা এভাবে বেশিদিন চলতে পারবে না।

মন্ত্রী এসময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সম্ভাবনাময় উচ্চশিক্ষাখাত হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক বেশি, শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেশি। দেশে বর্তমানে ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ৪০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ১ হাজার ৬৩২ বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। আমাদের কাজ ও সাফল্যের উপর নির্ভর করছে এই সম্ভাবনাকে আরও অগ্রসর করা।

তিনি অভিভাবক, শিক্ষার্থীসহ উপস্থিত সকলের উদ্দেশে বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন দেশ যখন উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে এগিয়ে যাচ্ছে ঠিক তখনি একদল স্বাধীনতাবিরোধী এ উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে ব্যহত করার জন্য ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে এদেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাস ও জঙ্গি কার্যক্রমের সাথে জড়িয়ে তাদের ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তাদের কুমন্ত্রণায় প্ররোচিত হয়ে বেশকিছু তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে বিপথগামী হয়েছে। আমি আশা করবো এই তরুণ, মেধাবী, কোমলমতি, প্রাণবন্ত ও সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীরা যাতে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যাদানকারী জঙ্গীদের কবলে পড়ে জীবন ধ্বংস না করে সেদিকে সবাই সজাগ দৃষ্টি রাখবেন।

তিনি আরো বলেন, আমাদের শিক্ষার মূল লক্ষ্য নতুন প্রজন্মকে আধুনিক বাংলাদেশের নির্মাতা হিসেবে প্রস্তুত করা, যা প্রচলিত গতানুগতিক শিক্ষায় সম্ভব নয়। বর্তমান যুগের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ আধুনিক বিশ্বমানের শিক্ষা ও জ্ঞান প্রযুক্তিতে দক্ষ, নৈতিক মূল্যবোধ ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ এক পরিপূর্ণ মানুষ তৈরি করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য।

ডিগ্রিপ্রাপ্তদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারাই এদেশের ভবিষ্যৎ নেতা; রাজনীতি, অর্থনীতি, বাণিজ্য, শিক্ষা, বিজ্ঞান, গবেষণা- সকল ক্ষেত্রে আপনাদের মতো উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীরাই নেতৃত্ব দেবেন। আজ আপনাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শেষ হলো। কিন্তু শুরু হলো আরেকটি অধ্যায়- কর্মজীবন। আপনারা হবেন সমাজ, দেশ ও জাতির আদর্শ, জাতি গঠনের শ্রেষ্ঠ কারিগর।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল মান্নান বলেন, উন্নয়নের পূর্বশর্তই হচ্ছে শিক্ষা, আর শিক্ষা হচ্ছে একটি নিরন্তর প্রক্রিয়া। প্রতিনিয়ত গবেষণার মাধ্যমে নতুন থেকে নতুনতর উদ্ভাবন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হচ্ছে। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা নিয়মিতভাবে গবেষণা কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে এবং নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করছে যা বৃহত্তর উন্নয়নের দিগন্ত উন্মোচন করবে।

সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের দত্তপাড়া এলাকায় অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টির নিজস্ব ক্যাম্পাসে আয়োজিত সমাবর্তনে আরও বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, সমাবর্তন বক্তা ভারতের ভিআইটি ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ও চ্যান্সেলর এবং এডুকেশন প্রমোশন সোসাইটি ফর ইন্ডিয়ার সভাপতি ড. জি বিশ্বনাথান, ডিআইইউ ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. ইউসুফ ইসলাম এবং ইউনিভার্সিটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এর চেয়ারম্যান মো. সবুর খান।

এবারের সমাবর্তনে ৩৪৭৩ জন নবীন গ্র্যাজুয়েট শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে সনদ গ্রহণ করেন। এবারের সমাবর্তনে চারজন গ্র্যাজুয়েটকে চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক ও কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জনকারী ১৩ জন গ্র্যাজুয়েটকে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত ডিআইইউ ১৭টি বিভাগে ১৬০০০ শিক্ষার্থীকে গ্র্যাজুয়েশন প্রদান করেছে।

সুত্র: দ্য রিপোর্ট