সহজ আয়কর আইন চান বিশিষ্টজনেরা

সহজ, করদাতা-বিনিয়োগবান্ধব ও হয়রানিমুক্ত আয়কর আইন (প্রত্যক্ষ কর আইন) প্রণয়নের সুপারিশ করেছেন আয়কর এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিশিষ্টজনেরা।

মঙ্গলবার,২৫এপ্রিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সম্মেলন কক্ষে এনবিআরের কর অঞ্চল-৮ আয়োজিত প্রত্যক্ষ কর আইনের (প্রস্তাবিত আয়কর আইন, ২০১৭) খসড়া প্রণয়নে পরামর্শ সভায় তারা এসব সুপারিশ করেছেন।

আইসিএবিÕর সদস্য হুমায়ূন কবির বলেন, নতুন প্রত্যক্ষ কর আইনে মৌলিক পরিবর্তন আসলে রাজস্ব আহরণে প্রভাব পড়তে পারে। সেজন্য বর্তমান আয়কর আইনের সাথে সাদৃশ্য রেখে নতুন আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। তবে ভবিষ্যতে বড় পরিবর্তন আনার সুযোগ রাখা দরকার।

তিনি বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগে বর্তমান ধীরগতি চলছে। এ খাতে গতি বাড়াতে হলে নতুন আইনে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুযোগ রাখা দরকার। পুরাতন আয়কর আইনে বেশি সমস্যা নেই। সমস্যা হল বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে। আয়কর আইনের রিফান্ড নেয়ার কথা পুরাতন আইনেও বলা আছে কিন্তু নেয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। আইন বাংলার পাশাপাশি ইংরেজীও রাখার অনুরোধ করেন তিনি।

চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস সদস্য নেছার উদ্দিন বলেন, কর্পোরেট কর পাশ্ববর্তী দেশে ২৩ থেকে ২৭ শতাংশ। কর্পোরেট ট্যাক্স সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসলে ফাঁকি কম হবে। নতুন আইনে ট্যাক্স আহরণের ক্ষেত্র আরও আরামদায়ক ও সহজ করতে হবে। সেইসঙ্গে আইন বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে হবে।

চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস এর সদস্য শাহাদাত হোসেন বলেন, দেশের উন্নয়ন করতে হলে আয়কর বাড়াতে হবে। আয়কর বাড়াতে হলে পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। জিপিডির ওপর আয়কর নির্ভর করে। নতুন আইন করার আগে জিডিপিতে যেসব খাত অবদান রাখে তাদের সাথে সাদৃশ্য রাখতে হবে।

আইসিএবি’র সদস্য স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেন, নতুন আইন ই-ফাইলিং ভিত্তিক করা দরকার। কারণ প্রতিবেশি ভারত ই-ফাইলিং ভিত্তিক আয়কর আইন করে এর সুফল পাচ্ছে।

স্কয়ার গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার আবদুল্লাহ আল জাবেদ বলেন, ভ্যাট আইন নিয়ে আমরা কাজ করছি। এ আইন নিয়ে সারাদেশে কর্পোরেট হাউজগুলো চিন্তিত। নতুন আয়কর আইন প্রণয়নের কথা বলা হচ্ছে- তা নিঃসন্দেহে পজেটিভ। কিন্তু নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের পরে তা নিয়ে কাজ করা গেলে ভালো হয়।

বাংলাদেশ ট্যাক্স লয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএলএ) সভাপতি মনিরুল হুদা বলেন, করদাতারা কর দিতে চায় না- এটা সত্য নয়। আইনের অপপ্রয়োগ করে করদাতাদের হয়রানি করার কারণে করদাতারা কর প্রদানে উৎসাহিত হন না। গ্রহণযোগ্য আয়কর আদায় করা হলে করদাতার সংখ্যা বাড়বে। নতুন আইনে করদাতাদের গোপনীয়তা রক্ষা করে অভিযোগের সুযোগ রাখা হবে।

তিনি বলেন, দেশে মাত্র ১৩ লাখ করদাতা; যা লজ্জাজনক। ১৩ লাখের মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ করদাতা আইনজীবীর মাধ্যমে কর প্রদান করেন। বাকি ৮০ শতাংশ অদৃশ্য মানব। আইনজীবী ছাড়া ৮০ শতাংশ কর নথিতে যথাযথ করারোপ হয় না। নতুন আইনে এ প্রতিবন্ধকতা দূর করলে করদাতা ও কর আহরণ অবিশ্বাস্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। জরিপে নতুন করদাতা কেন বের করা যায় না তা তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। অনারোপিত অর্থ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। নতুন আইনে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া দরকার।

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান এসময় বলেন, নতুন ভ্যাট আইন যুগোপযোগী করে বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছি, শুল্ক আইন প্রায় চূড়ান্ত। এখন আমরা প্রত্যক্ষ কর আইন নিয়ে কাজ করছি। তিনি বলেন, আইনের বাস্তবায়নে ডিজিটাল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করছি। ই-পেমেন্ট, ই-টিআইএন, ই-রিটার্ন সাবমিশান এখন বাস্তবতা। এতে আমরা সুফল পাচ্ছি। ই-টিআইএনধারীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। ইতোমধ্যে এ সংখ্যা ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ছাড়িয়েছে। মানুষ ডিজিটাল অ্যাপ্লিকেশন দ্বারা খুবই সন্তুষ্ট।

এনবিআর সদস্য (করনীতি) পারভেজ ইকবালের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কর অঞ্চল-৮ এর কমিশনার মোহাম্মদ আবু তাহের চৌধুরী।

কর অঞ্চল-৮ এর সহকারী কমিশনার হাফিজ আল আসাদ আয়কর আইন এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/২৫এপ্রিল,২০১৭