সহস্রাধিক রোহিঙ্গার ভাসানচর যাত্রা

রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের চতুর্থ দফার দ্বিতীয় দিনে আজ মঙ্গলবার আরো সহস্রাধিক রোহিঙ্গা ভাসানচর যাচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১১টায় নৌবাহিনীর তিনটি জাহাজ এসব রোহিঙ্গাকে নিয়ে চট্টগ্রাম ছেড়ে যায়।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় সূত্র জানায়, নৌবাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অধিনায়ক রিয়ার এডমিরাল এম মোজাম্মেল হক চট্টগ্রাম নৌবাহিনীর জেটিঘাট থেকে রোহিঙ্গাবাহী জাহাজের এ বহরকে বিদায় জানান। কুয়াশার কারণে আজ একটু দেরি করেই জাহাজ ছেড়েছে। তারা একটার পর ভাসানচর পৌঁছাবে বলে আশা করা যায়। মিয়ানমার ছেড়ে আসার পর এসব রোহিঙ্গা উখিয়ার বালুখালীর বিভিন্ন ক্যাম্পে ছিল।
গতকাল সোমবার অপরাহ্নে বাসযোগে এসব রোহিঙ্গা কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম আসে। চট্টগ্রাম পৌঁছানোর পর তাদের বি এ এফ শাহীন কলেজে রাখা হয়। সেখানে তারা রাত্রি যাপন করে।
জানা যায়, এদের স্থানান্তরের মধ্য দিয়ে চতুর্থ দফায় ৩ হাজার ২১ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গতকাল চতুর্থ দফার প্রথম দিনে ২ হাজার ১০ জন ভাসানচর যায়। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর শুরু হওয়া রোহিঙ্গাদের ভাসানচর স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় এনিয়ে চার দফায় ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হলো। পর্যায়ক্রমে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচর নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ লক্ষ্যে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সেখানে পরিচ্ছন্ন আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে।
ভাসানচর যাওয়ার জন্য চট্টগ্রামে অপেক্ষমাণ রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রথমদিকে অনেকের মধ্যে এ স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় অনীহা ছিল। এখন তারা স্বেচ্ছায় ভাসানচর যেতে চাইছে। আজ দেখা গেছে, দশ বছর বয়সী শিশু শহীদ তার পালিত কুকুরকে নিয়ে জাহাজে উঠেছে। অন্যদিকে, নুর মোহাম্মদ নামে মধ্যবয়সী একজন তার পরিবারের ৯ সদস্যের সাথে ৩টি ছাগলও জাহাজে তুলেছে। এদের সবার চেহারায় স্বস্তির ছাপ লক্ষ্য করা গেছে।
কারণ হিসেবে নুর মোহাম্মদ জানান, উখিয়ার ক্যাম্পে খুব কম জায়গায় তাদের গাদাগাদি করে থাকতে হতো। কিন্তু স্বজনদের মাধ্যমে তারা জেনেছে, ভাসানচরে সুপরিসর গুচ্ছ প্রকল্পে তাদের থাকার ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ সরকার। উখিয়া থেকে অনেক বেশি উন্নত জীবন ব্যবস্থায় তারা সেখানে থাকতে পারবে বলে মনে করে।
এদিকে, উখিয়ার শরণার্থী ক্যাম্পে কর্মরত সরকারি একটি সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে প্রায় ২৩ হাজার রোহিঙ্গা ইতিমধ্যে রেজিস্ট্রেশন করেছে। আরো অনেকের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর হামলা শুরু হলে তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। পরে সরকারের সদিচ্ছায় উখিয়া ও টেকনাফের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়। এসময় প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এর আগে আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয় শিবিরে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ নিবন্ধিত রোহিঙ্গা আছে।