সাংবাদিকদের ফের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনী হত্যার বিচারের দাবিতে আবারও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করবে সাংবাদিক সংগঠনগুলো। এজন্য আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) দুই অংশ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) দুই অংশ ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের নেতারা এক যৌথ সভায় বসবেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবে সকাল ১১টায় এ সভা হবে।

সেই সভা থেকেই সাগর-রুনী হত্যার বিচারের দাবিতে পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। রাজধানীর সেগুন বাগিচায় শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ডিআরইউ প্রাঙ্গণে সাগর-রুনী হত্যার বিচারের দাবীতে প্রতিবাদ সমাবেশে এ তথ্য জানান সংগঠনের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা। ডিআরইউ আয়োজিত এ সমাবেশে বিএফইউজে, ডিইউজের আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অংশের নেতারা সাগর-রুনীসহ সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দেন।

ডিআরইউর সভাপতি বাদশা বলেন, ‘সাগর-রুনী হত্যার পর দাবি আদায়ে যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম কি কারণে তা স্থিমিত হয়ে যায় আমরা সেদিকে যা্ব না। আজ আবার একই ঐক্যের ডাক এসেছে। আমরা সবাই মিলে একটি যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করতে চাই। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মনে করে সবাইকে সাথে নিয়ে শুধু সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের দাবিতে নয় বরং দেশের যে কোনো স্থানে সাংবাদিক নির্যাতন হলে আমার একই ব্যানারে যুগপৎভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করব।’

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘সেই লক্ষ্যে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবে আমরা বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের দুই অংশ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের দুই অংশ ও জাতীয় প্রেস ক্লাবকে সাথে নিয়ে ২০১২ সালের মতোই সকাল ১১টায় একটি যৌথ সভায় বসব। সেই যৌথ সভা থেকে আমরা যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করব। বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমার রাজপথ ছাড়ব না’ বলেন বাদশা।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতের কোনো এক সময় রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের একটি ভাড়া বাসায় দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। সেদিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ঘোষণা দিয়েছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের আইনের আওতায় আনা হবে।

সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের পাঁচ বছর পূর্ণ হয়েছে শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি)। কিন্তু পাঁচ বছরে এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের তদন্তে কোনো অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়নি। এখনও তদন্ত প্রতিবেদনই জমা দিতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

বিএফইউজে’র একাংশের সভাপতি ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, ‘এই (সাগর-রুনি) হত্যার রহস্য উন্মোচনের জন্য আমরা বারবার দাবি জানাচ্ছি, প্রকৃত খুনীদের গ্রেফতার করা হোক। কোন জজ মিয়া নাটকের সূচনা যেন এখানে না করা হয়। আমরা দেখছি আমাদের কথায় সরকার কিংবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যারা তদন্ত করছে তারা কোনো কর্ণপাত করছেন না।’

তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদনই জমা দেওয়া হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বারবার কেন সময় দেওয়া হচ্ছে? আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্দ, আগামী তারিখের মধ্যে যদি তদন্ত প্রতিবেদন জমা না দেওয়া হয়, তাহলে সাংবাদিক সমাজ গণতদন্ত কমিশন গঠন করে এই হত্যার রহস্য উদঘাটন করবে।’

‘আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন হয়েছিল, কিন্তু যেই মুহূর্তে সকল গণমাধ্যমে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিলাম তারপর থেকেই দেখলাম আন্দোলনে বিভক্তি। আর নাম উল্লেখ করতে চাই না, আমরা খুনীদের গ্রেফতার করাতে পারিনি, তদন্ত রিপোর্টও আনতে পারিনি। হয়তো কেউ কেউ এ আন্দোলনের বেনিফিট পেয়ে গেছেন’ বলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শওকত।

তিনি বলেন, ‘আবার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক এসেছে। আমি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে বিশ্বাস করি। সাগর-রুনি খুনীরদের গ্রেফতারের মধ্যে কোনো রাজনীতি নেই। এ অরাজনৈতিক আন্দোলনকে আমার যদি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে রূপান্তরিত করতে পারি তাহলে আমি বিশ্বাস করি আমরা সফল হব।’

বিএফইউজের একাংশের মহাসচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘চট্টগ্রামে পুলিশের স্ত্রী মিতুকে হত্যার পর সন্দেহভাজনদের ক্রস ফায়ারে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। অথচ শাহাজাদপুরে চেয়ারম্যান টার্গেট করে সাংবাদিক শিমুলকে গুলি করেছে। তাকে কেন ক্রসফায়ারে শাস্তি দেওয়া হল না। আমরা কি বিচার পাব না। আমারা কি এদেশের নাগরিক না, এই গণতন্ত্রের জন্য আমরা কি লড়াই করিনি? এখন যারা ক্ষমতায় আমরা কি তাদের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করিনি। কেন আমাদের সঙ্গে বৈষম্য?’

বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি রুহুল আমীন গাজী বলেন, ‘এমন কি কারণ, এমন বিষয় আছে যে সাগর-রুনীর খুনী গ্রেফতার হবে না। সাংবাদিক হত্যা হবে খুনী গ্র্রেফতার হবে না, এটা তো হতে পারে না। আসুন ঐক্যবদ্ধভাবে সাগর-রুনী হত্যাকারীদের গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে সারাদেশে সাংবাদিক হত্যা নির্যাতন বন্ধের মাধ্যমে মুক্ত সাংবাদিকতাকে প্রতিষ্ঠা করি।’

ডিইউজের একাংশের সভাপতি শাবান মাহমুদ বলেন, ‘সাগর-রুনী হত্যার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন খুনী ধরতে ৪৮ ঘণ্টার সময় দিয়ে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছিলেন, বিশ্বাস ঘাতকতা করেছিলেন। ৪৮ মাস অতিক্রম হয়েছে আমরা খুনীদের গ্রেফতার করতে দেখিনি।’ সাংবাদিক নেতাদের উদ্দেশ্যে ডিইউজের সভাপতি বলেন, ‘আসুন ২০১২ সালের মতো ঐক্যবদ্ধভাবে সব মত, পথ ভুলে গিয়ে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলি।’

বিএফইউজের একাংশের সাবেক মহাসচিব আব্দুল জলিল ভূঁইয়া বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরকারের প্রভাবশালী মহল জড়িত রয়েছে। তা না হলে খুনীরা পার পেয়ে যেতে পারে না।’ সাগর-রুনীর হত্যার বিচার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘প্রতি মাসের ১১ তারিখে পত্রিকায় দুই ইঞ্চি জায়গা হত্যার বিচারের দাবিতে কালো করতে রাখতে পারি। টেলিভিশনেও খবরের সময় ব্ল্যাক করে রাখতে পারি।’

একই সঙ্গে মার্চ মাসের ১১ তারিখে বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ কর্মসূচি দিয়ে তা পালনে সবার সহযোগিতা কামনা করেন সোহেল হায়দার। সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ডের তদন্তের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি জানেন না বলে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল যে মন্তব্য করেছেন, সমাবেশে তার সমালোচনা করেন বক্তারা। প্রতিবাদ সমাবেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগেরও দাবি তোলা হয়।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মুরসালিন নোমানীর সঞ্চালনায় সমাবেশে জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বিএফইউজের কোষাধ্যক্ষ মধুসূধন মন্ডল, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ডিআরইউ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, ইলিয়াস হোসেন ও রাজু আহমেদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সুত্র: দ্য রিপোর্ট