সাংবাদিকদের বেতন নিয়ে দুই মন্ত্রীর দুই মত কেন

বেতন-ভাতায় দীর্ঘদিন ধরেই নবম ওয়েজ বোর্ড গঠনের দাবি জানিয়েছে আসছেন সংবাদকর্মীরা। দফায় দফায় আন্দোলন, মানববন্ধন ও সমাবেশের পরে গত ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আশ্বাস দিয়েছিলেন ২০১৭ সালের মধ্যেই সাংবাদিকদের নবম ওয়েজ বোর্ড ঘোষণা করা হবে।

তিনি তখন জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তথ্য মন্ত্রণালয় নীতিগতভাবে নবম ওয়েজ বোর্ড দেওয়ার পক্ষে আছেন। তবে কিছু আইনি প্রক্রিয়া সংশোধনের কারণে তা কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।

তথ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর নবম ওয়েজবোর্ড দেওয়ার পক্ষে থাকলেও আজ মঙ্গলবার সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াব এর সঙ্গে এক বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, সাংবাদিকদের জন্য ওয়েজ বোর্ডের কোনো দরকার নেই। তারা সরকারি কর্মকর্তাদের চাইতেও বেশি বেতন পান।

তবে এ সময় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত তথ্যমন্ত্রী কোনো মন্তব্য করেন নি।

এদিকে আজ সচিবালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকরা অর্থমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের বিরোধীতা করেন। তাদের মধ্যে প্রশ্ন ওঠে তথ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিলেও হঠাৎ করে অর্থমন্ত্রী কেন নবম ওয়েজব বোর্ডসহ সাংবাদিকদের বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে ওয়েজ বোর্ডের বিপক্ষে গেলেন?

উপস্থিত কয়েকজন জেষ্ঠ্য সাংবাদিক এসময় অর্থমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের পেছনে কী কারণ থাকতে পারে তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মন্তব্য করেন।

একটি সুপরিচিত দৈনিকের এক জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক বলেন, আজকের বৈঠকে নোয়াবের প্রতিনিধিরা অর্থমন্ত্রী ওয়েজ বোর্ড নিয়ে ভুল বুঝিয়ে থাকতে পারেন।

ওই প্রতিবেদক বলেন, আজ যারা নোয়াবের প্রতিনিধি হিসেবে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, তারা সংবাদপত্রের মালিক না হলেও লাখ লাখ টাকা সেখান থেকে প্রতিমাসে আয় করছেন। আর একারণেই হয়তো তাদের মনে হয়ে থাকতে পারে সাংবাদিকদের বেতন বৃদ্ধির কোনো প্রয়োজন নেই।

বৈঠকে উপস্থিত এক সূত্র জানায়, সভায় নোয়াবের নেতারা বৈঠকে অর্থমন্ত্রীকে জানান, সংবাদপত্রের পিওনরাও এখন ভালো বেতন পাচ্ছে। নতুন করে আর বেতন কাঠামো পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন নেই।

এ সময় পরিচয় গোপন রাখার শর্তে আরেক সাংবাদিক বলেন, সাংবাদিকদের বেতনতো সরকারি কোষাগার থেকে দেওয়া হয় না। সাংবাদিকদের বেতন পাওয়ার বিষয়ে তাই অর্থমন্ত্রীর আপত্তি থাকার কথা নয়।

তিনি বলেন, সম্পাদকেরা মালিকপক্ষের হয়ে আজ অর্থমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়েছেন। না হলে হঠাৎ করে তিনি এমন মন্তব্য করতেন না।

ওয়েজ বোর্ডের ইস্যুতে কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি (বিএফইউজে) মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, নবম ওয়েজ বোর্ড করা নিয়ে বহু সমাবেশ করা হয়েছে। বহুবার এ নিয়ে কথা বলা হয়েছে। তবে তা বাস্তবায়ন হয়নি।

বিএফইউজে’র মহাসচিব ওমর ফারুক বলেন, রাষ্ট্রের ৪র্থ স্তম্ভ ভেঙ্গে গেলে গণতন্ত্রও ভেঙ্গে যাবে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেওয়ার পরও ওয়েজ বোর্ড গঠনে বিলম্ব করে সাংবাদিকদেরকে রাজপথে আন্দোলনে নামতে বাধ্য করা হচ্ছে। এটা মোটেও শুভ হবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তবে সাংবাদিকদের নবম ওয়েজ বোর্ডের দাবিব যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। অনেকে বলছেন, বেশিরভাগ সাংবাদিক এখনও অষ্টমতো দূরের কথা এখনও সপ্তম ওয়েজ বোর্ড অনুসারে বেতন পান না। তাদের জন্য নবম ওয়েজবোর্ডের চিন্তা করাটা বিলাসীতা। তাদের জন্য আগে অষ্টম ওয়েজ বোর্ড অনুসারে বেতন নিশ্চিত করতে হবে।

আজকের বাজার: এলকে/এলকে ০৯ আগস্ট ২০১৬