সাংসদ মান্নানের মৃত্যুতে সংসদে শোক প্রস্তাব গ্রহণ

একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নানের মৃত্যুতে আজ সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদে এ শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশ গ্রহণ করেন।
গতকাল ১৮ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানীতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাহি রাজেউন)। তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর ১ মাস।

তিনি ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোয়নে বগুড়া -১ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি দশম জাতীয় সংসদ ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আব্দুল মান্নান ছাত্র জীবন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ ছাত্র লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ এর (বাকসু) সহ-সভাপতির (ভিপি) দায়িত্ব পালন করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।

পরে শোক প্রস্তাবের ওপর অনুষ্ঠিত আলোচনায় অংশ নেন, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ,ম রেজাউল করিম, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সরকারি দলের আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, তোফায়েল আহমেদ, বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, উপাধক্ষ্য আব্দুস শহীদ, মহিউদ্দিন খান আলমগীর এবি তাজুল ইসলাম, শাজাহান খান, নজরুল ইসলাম বাবু, মসলেম উদ্দিন, আনোয়ারুল আবেদিন খান, মৃণাল কান্তি দাস, বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা ও জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর আহমেদ।

আলোচনায় অংশ নিয়ে আমির হোসেন আমু বলেন, আব্দুল মান্নানের যেমনি সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল, তেমনি তার ক্ষুরধার লেখনী ছিল। তার লেখনী এবং বিভিন্ন কর্মকান্ড আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।

শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, জিয়াউর রহমানের মতো সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আব্দুল মান্নান রাজনীতি করেছেন। অনেক প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি।

আব্দুল মান্নানের স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ছাত্র জীবন থেকেই তার সাথে আমার পরিচয়। তিনি একজন প্রতিভাবান রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। চরম দুঃসময়ে তিনি ছাত্রলীগের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে তিনি রাজপথে সক্রিয় ছিলেন।

মতিয়া চৌধুরী বলেন, বয়সে অনেক ছোট হলেও কাজের মাধ্যমে আব্দুল মান্নান আমাদের পাশে স্থান করে নিয়েছিলেন। সে কৃষকের ঘর থেকে উঠে আসা সন্তান। শেখ হাসিনার পরামর্শে এবং সহযোগিতায় তিনি ছাত্রলীগকে কঠিন সময়ে নেতৃত্ব দিয়ে সংগঠিত করে রেখেছিলেন। কোন বিপর্যয় ও কষাঘাতে কখনো মাথানত করেননি বলেই তিনি রাজনীতিতে সঠিক স্থান করে নিয়েছিলেন। কৃষক ও দেশের জন্য যখনই আমরা কাজ করবো, তখনই মান্নানকে স্মরণে রাখবো।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তিনি ছিলেন সব সময় অবিচল।

মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ৭৫ পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার পাশে থেকে যে ক’জন আন্দোলন সংগ্রাম করে গেছেন এর মধ্যে আব্দুল মান্নান ছিলেন অন্যতম।

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান ছাত্র নেতা এবং জন নেতা হিসাবে সফল ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসাবে আজীবন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জনগণের সেবায় আজীবন নিবেদিত ছিলেন।
বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, তিনি নিরহংকারি মেধাবি নেতা ছিলেন। আজীবন তার প্রতি জনগণের দেয়া দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করে গেছেন।

আলোচনা শেষে সংসদ সদস্য মরহুম আব্দুল মান্নানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং তার আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন সরকারি দলের সদস্য হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী।

এর পর সংসদের রেওয়াজ অনুযায়ি সংসদের বৈঠক আজকের মতো মুলতবি করা হয়।

আজকের বাজার/লুৎফর রহমান